Advertisement
E-Paper

খানা তল্লাশি

মাথায় সবুজ টুপি পরা, লাজে রাঙা টমেটোদের সঙ্গে অ্যাজটেক আর ইনকাদের আলাপ হয়েছিল প্রায় দেড় হাজার বছর আগে। নিল ইয়ং-এর বিখ্যাত গান ‘কোর্তেজ দ্য কিলার’ মনে পড়ে? এই কোর্তেজ ছিল স্পেনের লোক। সে এক দল সৈন্য নিয়ে এসে অ্যাজটেক সাম্রাজ্য আক্রমণ করে, তার পতন ঘটিয়েছিল।

পিনাকী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:২৬

মাথায় সবুজ টুপি পরা, লাজে রাঙা টমেটোদের সঙ্গে অ্যাজটেক আর ইনকাদের আলাপ হয়েছিল প্রায় দেড় হাজার বছর আগে। নিল ইয়ং-এর বিখ্যাত গান ‘কোর্তেজ দ্য কিলার’ মনে পড়ে? এই কোর্তেজ ছিল স্পেনের লোক। সে এক দল সৈন্য নিয়ে এসে অ্যাজটেক সাম্রাজ্য আক্রমণ করে, তার পতন ঘটিয়েছিল। ল্যাটিন আমেরিকা থেকে স্পেনে টমেটো নিয়ে আসার কৃতিত্ব এই কোর্তেজেরই। মন্তেজুমা লুঠ করার সময় সেখানকার এক বাগানে সে টমেটো আবিষ্কার করেছিল। সেই টমেটোর বীজ নিয়ে সে স্পেনে ফেরত আসে আর তার গাছ লাগায়।

ইউরোপে প্রথম দিকে টমেটো খাওয়া এক্কেবারে বারণ ছিল। বাগানে গাছ লাগানো হত বাগানের শ্রীবৃদ্ধির জন্য। সেই জমানায় সুন্দর দেখতে গাছের প্রতি ইউরোপবাসীদের এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছিল। যেমন, বেলাদোনা আর ম্যানড্রেক। এই দুই গাছ নিয়ে উপকথাগুলো ছিল সাংঘাতিক। বিশ্বাস ছিল, এই সব গাছ বিষাক্ত, আর ডাইনিরা তা বশীকরণের জন্য ব্যবহার করে। ওই সৌন্দর্যের জন্যই মানুষ টমেটোকেও ভয় পেত। বলত, নেকড়ে-মানুষ টমেটো খেতে ভালবাসে। তার ওপরে টকটকে রং। ভাবত, টমেটোর সঙ্গে নিশ্চয়ই রক্তক্ষয়ের সম্পর্ক আছে। তবে মধ্যবিত্তের রান্নাঘরে আর খাবার টেবিলে টমেটো জায়গা পায় বিশ্ব ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে।

ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের কোণে কোণে তখন বুর্জোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে লড়াই চলছে। রিপাবলিকের প্রতি আনুগত্য দেখাতে মানুষ লাল টুপি পরছে। বুর্জোয়াদের মুন্ডু কাটার পণ করেছে এই রিপাবলিকানরা। প্রাণ বাজি রেখে বিপ্লবের পতাকা নিয়ে দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত দৌড়ে বেড়াচ্ছে তারা। কত সময়ই খাওয়া জোটে না তাদের। সেই সময় এক রিপাবলিক-সমর্থক শেফ তাদের পরামর্শ দেন, প্রচুর টমেটো খাও। তাতে বুর্জোয়াদের বদরক্ত ধ্বংস হবে, বিপ্লবের প্রতি শ্রদ্ধাও দেখানো যাবে। আসলে এই শেফ টমেটোর গুণাগুণ নিয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন। আর জানতেন, খাবারের স্বর্গরাজ্য ফ্রান্স এক বার টমেটোকে ঘরে তুললে তার জন্য বাকি ইউরোপের হেঁশেলের দরজা খুলে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।

ব্রিটিশদের সঙ্গেই টমেটো ভারতে ঢুকেছিল, উনিশ শতকের মাঝামাঝি। আসামাত্র টমেটোর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি দোস্তি হয়ে গেল বাঙালিদের। আমাদের তেলের-ঝালের রান্নায় টমেটো পড়া মাত্র আরও খোলতাই হল তার রং আর স্বাদ।

ও দিকে, আটলান্টিক মহাসাগরের অন্য পাড়ে তো আমেরিকা। সেখানে টমেটোর রমরমার পিছনে এক নাটকীয় ঘটনা। আগে আমেরিকাতেও টমেটো শুধুই বাগান সাজাত, ঠিক ইউরোপের মতোই। উনিশ শতকের প্রথম দিকে কর্নেল রবার্ট গিবন জনসন নিউ জার্সির সালেমের এক সভায় এক ঝুড়ি টমেটো এনে বললেন, এক্ষুনি এই ঝুড়ি ভর্তি টমেটো সাবাড় করে বেঁচে দেখিয়ে দেবেন, টমেটো মোটেই প্রাণঘাতী ফল নয়। সবাই হইহই করে বারণ করল, এই ফল খেলে রক্ত অ্যাসিডে পরিণত হবে। ডাক্তার পর্যন্ত চিৎকার শুরু করলেন, ‘খেলেই মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বের হবে আর অ্যাপেন্ডিক্সের রোগে ভুগবেন, ব্রেন ফিভার হবে। যদি দৈবাৎ বেঁচে যান এই ফল খেয়েও, চামড়া গুটিয়ে পেটের সঙ্গে সেঁটে যাবে, আর কর্কট রোগ তো কেউ আটকাতে পারবে না!’

কারও কথায় পাত্তা না দিয়ে কর্নেল এক ঝুড়ি টমেটো কপকপ করে খেয়ে নিলেন। তার পর তো দিব্যি বেঁচে থাকলেন, আর তারিয়ে তারিয়ে দেখলেন টমেটোর আমেরিকা জয়।

pinakee.bhattacharya@gmail.com

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy