Advertisement
E-Paper

গাঁজা-চরস-হাশিশ

ক্যানাবিস স্যাতিভা। এই পাহাড়ি গাছটির প্রতিভা অসীম। কারণ, এই শণের মতো গাছটারই শুকনো পাতা হচ্ছে ভাং বা সিদ্ধি, কাঁচা পাতা ও ফুলের রস শুকিয়ে গুলি করে হয় চরস, আর বাছাই করা কুঁড়ি ধরা অংশের আঠা থেকে হয় হাশিশ। গাঁজার দুনিয়া বিষয়ে প্রথম লেখেন চিনা সম্রাট শেন্‌ নুং। ২৭৩৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তিনি অবশ্য গাঁজার ভেষজ গুণ নিয়েই লিখেছিলেন।

পিনাকী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১০

ক্যানাবিস স্যাতিভা। এই পাহাড়ি গাছটির প্রতিভা অসীম। কারণ, এই শণের মতো গাছটারই শুকনো পাতা হচ্ছে ভাং বা সিদ্ধি, কাঁচা পাতা ও ফুলের রস শুকিয়ে গুলি করে হয় চরস, আর বাছাই করা কুঁড়ি ধরা অংশের আঠা থেকে হয় হাশিশ। গাঁজার দুনিয়া বিষয়ে প্রথম লেখেন চিনা সম্রাট শেন্‌ নুং। ২৭৩৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তিনি অবশ্য গাঁজার ভেষজ গুণ নিয়েই লিখেছিলেন। তাঁর মতে, বাতের ব্যথা ও ম্যালেরিয়া সারাতে, আর একাগ্রতা বাড়াতে, গাঁজার তুলনা নেই। লেখায় গাঁজার নেশার কথাও ছিল বটে, কিন্তু রাজামশাই জোর দিয়েছিলেন গুণাবলিতেই।

আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আশেপাশে লেখা অথর্ব বেদ, ভাং-কে স্বীকৃতি দিয়েছে পবিত্র ঘাস হিসেবে। আর শিবঠাকুরের প্রিয় নেশা বলে তা তাঁকে নিবেদনের কথাও লিখেছে। আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দেখা যাচ্ছে মধ্য এশীয় স্কাইথিয়ান গোষ্ঠীকে। তারা শণের পোশাক ও দড়ি ব্যবহার করত। এর পরেই এদের হাতে পৌঁছয় এই ক্যানাবিস প্রজাতির শণ। সেখান থেকে শুধু দড়ি বা পোশাকই বানানো যায় না, নেশাও চমৎকার হয়। গাঁজা যেহেতু আদতে পাহাড়ি, অনুমান করা হয়, হিমালয়ের রাস্তা দিয়েই সে চলতে শুরু করে পশ্চিমের দিকে।

পঞ্চম খ্রিস্টপূর্বাব্দে, গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাস তাঁর লেখায় স্কাইথিয়ানদের গাঁজা টানার কথা উল্লেখ করেছেন, আর তার দুশো বছরের মধ্যেই গ্রিকরাও গাঁজা, আর সেই শণের তৈরি পোশাক পরায় অভ্যস্ত হয়ে উঠল। আর গ্রিসে যদি একটা কিছু এসে পড়ে, তা আর রোমে পৌঁছতে কত ক্ষণ? প্রথম শতাব্দীতে প্লিনি-র লেখাতেই তাই শণের দড়ি আর গাঁজা দুইয়েরই উল্লেখ পাই।

তখন মানুষ বাণিজ্য করেই খায়। জাহাজ কিংবা নৌকোর ওপর নির্ভরশীল তারা। সে যুগ দড়ি ছাড়া অচল। সুতির কাপড় সবার সাধ্যে কুলোয় না। শণের দড়ি আর পোশাকের ব্যবহার সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল সে সময়। পৌঁছে গেল মহাসাগরের অপর পাড়ে নতুন বিশ্বেও। আর এই শণ কেনার সঙ্গে যদি নেশার জিনিসও মুফতে জুটে যায়, তা হলে তো কেল্লা ফতে! তাই এই বিশেষ শণ আর গাঁজা সারা পৃথিবীতেই খুব কদর পেল।

পরে, পাটের দড়ি তৈরি হতে শুরু হল, সুতোও খুব সহজে পাওয়া যেত। তাই রাশ টানা হল গাঁজা চাষে। তবু বিশ্বের বহু জায়গায় লুকিয়ে এর চাষ চলতেই থাকল। আর আজ তো আমেরিকার কিছু প্রদেশ সরকারি ভাবে গাঁজা চাষকে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে!

আমাদের দেশে গাঁজা টানার সঙ্গে ধর্ম-কর্ম মিলেমিশে একাকার। শঙ্কর নাথ রায় থেকে শিবপ্রসাদ ভারতী— সবার লেখাতেই সাধু-সন্ন্যাসীদের সেই ‘তুরীয় আনন্দ’-এর কথা আছে। অমরনাথ-কেদারনাথে কৌপীনধারী বাবারা দিনের পর দিন বুঁদ থাকেন গাঁজার ধোঁয়ায়।

বাউলরাও গাঁজাকে বড়ই আদর-ইজ্জত দেন। বৈষ্ণবদের শ্মশানের বড় কলকেতে মৌজ আসে না, তাঁরা ভালবাসেন ছোট কলকে। ওঁরা তাকে ডাকেন ‘বাঁশি’। গাঁজা কাটার ছুরি ‘রতনকাটারি’, যে কাঠের টুকরোর ওপর রেখে গাঁজা কুচানো হয়, তা ‘প্রেম তক্তি’, আর কলকের তলায় জড়ানো কাপড়ের টুকরো হল ‘সাফি’।

বাছাই করা সিদ্ধি গাছের কালচে-বাদামি রঙের ফুলের আঠা জমিয়ে তাল পাকিয়ে তৈরি হয় ‘হাশিশ’। ক্রুসেডের সময়ে নাকি কিছু লোক, অন্য ধর্মাবলম্বীদের গুপ্তহত্যা করতে যেত! আর যাওয়ার আগে, অনেকটা করে হাশিশ খেয়ে নিত! পশ্চিম এশিয়ার এই লোকদের, আরবি ভাষায়, ‘হাশিশিন’ বা হাশিশখোর বলা হত। আর সেখান থেকেই নাকি ইংরেজি শব্দ ‘অ্যাসাসিন’-এর সৃষ্টি!

pinakee.bhattacharya@gmail.com

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy