Advertisement
E-Paper

টাটার দাদু

হ্যালো। গাব্বু আমি টাটা থেকে দাদু বলছি। আমি কলকাতায় আসছি। ল্যান্ডলাইনে সকালবেলা টাটানগর থেকে টাটার দাদুর গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর। রিসিভারটা হাতে নিয়ে গাব্বু বলল, ‘এখানে ভীষণ গরম। চল্লিশ ডিগ্রি। এই গরমে তুমি আসবে।’ ও পাশ থেকে দাদু বললেন, ‘টাটাতে আরও বেশি। ঝাড়খণ্ডের গরম বলে কথা। আগে শোনা যেত বিহারের গরম। এখন ঝাড়খণ্ডের গরম।’

দেবব্রত নিয়োগী

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৩২

হ্যালো। গাব্বু আমি টাটা থেকে দাদু বলছি। আমি কলকাতায় আসছি। ল্যান্ডলাইনে সকালবেলা টাটানগর থেকে টাটার দাদুর গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর। রিসিভারটা হাতে নিয়ে গাব্বু বলল, ‘এখানে ভীষণ গরম। চল্লিশ ডিগ্রি। এই গরমে তুমি আসবে।’

ও পাশ থেকে দাদু বললেন, ‘টাটাতে আরও বেশি। ঝাড়খণ্ডের গরম বলে কথা। আগে শোনা যেত বিহারের গরম। এখন ঝাড়খণ্ডের গরম।’

— কলকাতায় বড্ড ঘাম হয়। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল গাব্বু।

— হোক। আমি এর মধ্যে আসছি। বাবা কোথায়? বললেন টাটার দাদু।

—বাবা বাজারে।

—মা?

—মা স্নান করছে।

—ঠিক আছে, আমি আসছি বলে দিয়ো ওঁদের।

লাইনটা কেটে গেল। গাব্বু দৌড়ে এসে মাকে ডাকতে লাগল। গাব্বুর মা স্নানঘর থেকে বেরিয়ে বললেন, ‘কী রে গাব্বু, কী হয়েছে?’

গাব্বু মুখটা গম্ভীর করে বলল, ‘টাটার দাদুর ফোন এসেছিল। উনি কলকাতায় আসছেন।’

‘এতে কী হয়েছে। তোমার বাবার কাকা। তোমার দাদু।’ বললেন গাব্বুর মা।

—আবার কী! গত বার অঙ্কে নব্বই পেয়েছিলাম। দাদু বললেন একশো পেলে না কেন! তুমি অঙ্কে এখনও কাঁচা। যে একশো পায় অঙ্কে, সে অঙ্কে পাকা। বলল গাব্বু।

—তোমার দাদু। তোমার ভাল চায়। দাদুদের তো নাতিরাই সব।

—ইংরেজিতে বিরাশি পেয়েছিলাম। দাদু বললেন ইংরেজিতেও কাঁচা।

—বুড়ো মানুষ আসতে চেয়েছেন। আসুক না।

—বাংলা নিয়ে দাদু বলেন আমি নাকি বাঙালি হয়েও বাংলা জানি না।

গাব্বুর মা গাব্বুর মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা, তোমার দাদুকে আজই ফোন করে বলে দেব ক’দিন বাদে আসতে।’

গাব্বুর বাবা বাজার থেকে গলদঘর্ম হয়ে সব শুনে বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। কাকাকে ফোন করে বলে দেব ক’দিন বাদে কলকাতায় আসতে।’

সকালটা সন্ধে হল। একটু গরম কমেছে। গাব্বু তখন টেলিভিশনে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখছে। গাব্বু ভাবল সে বড় ক্রিকেটার হবে। সপাটে চার-ছয় মারবে। আবার ভাবল শুধু খেললে চলবে না। লেখাপড়া করতে হবে। অঙ্কে একশো পেতে হবে।

গত বছর কলকাতায় গাব্বুর টাটার দাদু গাব্বুকে বলেছিলেন, ‘ভাতের বিকল্প আটার রুটি, লেখাপড়ার বিকল্প কী!’ গাব্বু কোনও উত্তর দিতে পারেনি।

দাদু বলেছিলেন, ‘লেখাপড়ার কোনও বিকল্প নেই।’ গাব্বু ভাবল, যাকগে, এ বার বেঁচে গেল সে। টাটার দাদু এখন আসছেন না। গাব্বু রাত্রিবেলা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখল টাটার দাদু এসেছেন কলকাতায়। বলছেন গাব্বু গুড বয়।

পরের দিন ছিল রবিবার। গাব্বু দোতালার বারান্দা থেকে দেখল বাড়ির সামনে একটা ট্যাক্সি এসে থামল। তখন প্রায় সকাল ন’টা। রাস্তার লোকজন সব বাজার করে ফিরছে। আবার কেউ কেউ বাজার যাচ্ছে। গাব্বু দেখল ট্যাক্সি থেকে হাতে একটা সুটকেস নিয়ে টাটার দাদু নামছেন। গাব্বু চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল, ‘বাবা, বাবা। মা। টাটার দাদু আসছেন।’

গাব্বুর বাবা বললেন, ‘আরে আমি তো গত কাল টেলিফোন করতে ভুলে গেছি।’ গাব্বুর মা বললেন, ‘এই রে, আমিও ভুলে গেছি।’

গাব্বু গম্ভীর হয়ে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এসে সদর দরজা খুলে দিয়ে টাটার দাদুর সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

টাটার দাদু গাব্বুকে কোলে নিয়ে বললেন, ‘পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি গরম কোথায়, বলতে পারো?’ গাব্বু কিছু বলতে পারল না।

টাটার দাদু হেসে হেসে বললেন, ‘তুমি দেখছি ভূগোলেও কাঁচা। চিন্তা নেই। এই সুটকেসে একটা ওয়ার্ল্ড এনস্লাইকোপিডিয়া আছে। এ বার থেকে ভূগোলেও তোমাকে পাকা হতে হবে। সঙ্গে ইতিহাসেও। আর আমি তো আছিই।’

গাব্বু কিছু বলল না। শুধু ভাবল টাটার দাদু খাবারদাবার আনে না। শুধু বই আনে।

টাটার দাদু হেসে বললেন, ‘বুঝতে পেরেছি তোমার মনের কথা। শুধু পড়লে হবে। খেতেও হবে। সন্দেশের বড় প্যাকেট আছে বাক্সেতে মানে সুটকেসটায়।’

গাব্বু ফিক ফিক করে হেসে উঠল। টাটার দাদু হাসতে হাসতে বললেন, ‘না খেলে পড়বে কী করে। তবে সবাই বেশি খায়, কম পড়ে। তুমি কিন্তু বেশি খাবে আবার বেশি পড়বে। আর আমি তো আছিই।’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy