Advertisement
E-Paper

পাঁচ পিগমির গল্প

তোমরা ‘লিলিপুটের দেশে’র গল্প তো নিশ্চয়ই পড়েছ। সেটা গল্প হলেও সত্যিকারের পিগমি মানুষদের কথাও বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বইয়ে পড়ে থাকবে। মানুষের মধ্যে যেমন লম্বা ও বেঁটে আছে, ঠিক তেমনি প্রাণীদের মধ্যেও আছে। বেঁটে প্রাণীদের নামের আগেও ‘পিগমি’ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতিগত ভাবেই এরা হ্রস্ব। দেখতে খর্ব ঠিকই, তবে শক্তি বা বুদ্ধিতে কিন্তু এরা কারও চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। তোমরা ‘লিলিপুটের দেশে’র গল্প তো নিশ্চয়ই পড়েছ। সেটা গল্প হলেও সত্যিকারের পিগমি মানুষদের কথাও বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বইয়ে পড়ে থাকবে। মানুষের মধ্যে যেমন লম্বা ও বেঁটে আছে, ঠিক তেমনি প্রাণীদের মধ্যেও আছে। বেঁটে প্রাণীদের নামের আগেও ‘পিগমি’ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতিগত ভাবেই এরা হ্রস্ব। দেখতে খর্ব ঠিকই, তবে শক্তি বা বুদ্ধিতে কিন্তু এরা কারও চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।

কালীপদ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৪৫

পিগমি জলহস্তি

এদের বাসস্থান হল সাইপ্রাস ও পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন, গায়ানা এবং আইভরি কোস্ট-এ। প্রায় ১১ হাজার বছর ধরে এরা সাইপ্রাস দ্বীপের অধিবাসী। চিড়িয়াখানায় যে সব জলহস্তি দেখি, তাদের উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট এবং ওজন এক হাজার পাঁচশো কেজি। কিন্তু এই পিগমি জলহস্তিদের ওজন মাত্র ২০০ কেজি আর উচ্চতা সাড়ে তিন ফুটেরও কম। কোনও রকমে মাত্র হাজার তিনেক পিগমি জলহস্তি বেঁচে আছে। এরা বড়দের মতোই ফার্ন, ঘাস, লতাপাতা আর ফল খেয়ে বেঁচে থাকে। উনিশ শতক পর্যন্ত আফ্রিকার বাইরের লোকেরা এদের খবর জানত না। বিংশ শতকে প্রথম যখন এদের চিড়িয়াখানায় আনা হয় তখনই বহির্বিশ্বের লোক এদের সম্পর্কে জানতে পারে।

পিগমি মহিষ

সাধারণত, যে মহিষ বা মোষ আমরা দেখি সেগুলো প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। আর ওজন হয় প্রায় এক হাজার কেজিরও বেশি। কিন্তু পিগমি মহিষের ওজন হয় মাত্র ২০০ কেজি এবং উচ্চতা হয় আড়াই ফুটেরও কম। অর্থাৎ, বড় একটা কুকুরের সমান। এদের পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়ার সুলায়েসিতে। বনের গবাদিপশুর মধ্যে সবচেয়ে ছোট্ট হল এই মহিষ। তবে এদের স্বভাব-চরিত্রও কিন্তু বড় মহিষদের মতোই। এরা বনে-জঙ্গলে ঘুরেবেড়ায়। আর ঘাস-পাতা খায়। এক সময় প্রচুর পরিমাণে পিগমি মহিষ শিকার করা হত বলে, আজকাল এরা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে এখন মাত্র হাজার পাঁচেক পিগমি মহিষ বেঁচেবর্তে আছে। তাই এদের সংরক্ষণ করা ভীষণ ভাবে জরুরি।

পিগমি প্যাঁচা

বিশ্বের অনেক জায়গাতেই পিগমি প্যাঁচাদের দেখা যায়। এর মধ্যে উত্তর আমেরিকার অ্যারিজোনার সোেনারান মরুভূমিতে এক জাতের পিগমি প্যাঁচা বাস করে। পুরুষ প্যাঁচাদের ওজন হয় ৬০ গ্রাম আর মেয়ে প্যাঁচার ওজন হয় ৭৫ গ্রাম। এই প্যাঁচাগুলো এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত সাড়ে ১৪ ইঞ্চি থেকে ১৬ ইঞ্চি। এদের আয়ু সাধারণত সাত বছর। এরা ঘাসফড়িং, ঝিঁঝিঁপোকা আর কাঁকড়াবিছে ছাড়াও অন্য ছোট পাখি, ছোট সাপ এমনকী টিকটিকিও খায়। এই বিপন্ন প্রাণীগুলি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এই পৃথিবী থেকে। আমাদের এই পৃথিবীতে ৩৫ রকম পিগমি প্যাঁচার কথা জানা যায়। বর্তমানে টিকে আছে মাত্র ২৬টি প্রজাতির পিগমি প্যাঁচা।

পিগমি ঘোড়ামাছ

পিগমি ঘোড়ামাছেদের সন্ধান পাওয়া যায় জাপান, ইন্দোনেশিয়া আর উত্তর অস্ট্রেলিয়ায়। এরা আধ ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এমনিতে আমরা যে ঘোড়ামাছের কথা জানি সেগুলো ১৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এই পিগমি (পুরুষ) ঘোড়ামাছগুলোও সাধারণ (পুরুষ) ঘোড়ামাছদের মতোই ডিম আর ছোট ছোট বাচ্চাদের যত্নআত্তি করে। ডিম ফুটে ছানা বেরনো পর্যন্ত বাবারাই ওদের দেখাশোনা করে। তবে এই মাছগুলো এতই ছোট যে সমুদ্রের নীচে এগুলোকে খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিলের কাজ। শুধু তাই নয়, এদের গায়ের রংও এরা বদলাতে পারে। গায়ের রং বদলিয়ে সমুদ্রের নীচে কোরালের মধ্যে নিজেদের লুকিয়ে রাখে, যা শিকারিদের হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।

পিগমি হাতি

হাতির নাম করলেই আমাদের মনের মধ্যে একটা বিশালাকার চেহারা ভেসে ওঠে। তোমরা সকলেই তো হাতি দেখেছ। হাতি সাধারণত দু’রকমের হয়। একটি হল এশিয়ান আর একটি আফ্রিকান। কিন্তু এ ছাড়াও আর এক জাতের হাতি আছে। তা হল পিগমি হাতি। পিগমি হাতি দেখলে তোমরা হয়তো ঘাবড়ে যেতে পারো। বলবে হাতি আবার এত ছোট হয় নাকি? তোমরা সাধারণত যে সব হাতি দেখেছ, তাদের উচ্চতা প্রায় ২০-২৫ ফুট, বা এর চেয়েও কিছু ছোট। সেখানে পিগমি হাতিরা বড়জোর ছয় থেকে সাত ফুট উচ্চতার পর্যন্ত হয়। অবশ্য, দু’আড়াই ফুট উচ্চতার পিগমি হাতিও আছে। এ রকম জাতের হাতিগুলো দেখতে পাওয়া যায় বোর্নিও দ্বীপে। বোর্নিও হল ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ। এই পিগমি হাতিগুলো জঙ্গলে থাকতেই বেশি ভালবাসে। বিশেষ করে যেখানে ঘাস, ফলমূল আর কলাগাছ আছে। তবে এই পিগমি হাতিরা কিন্তু হারিয়ে যেতে বসেছে। বোর্নিওর খুদে জাতের এই হাতিরা আজও বিজ্ঞানের কাছে এক বিস্ময়। বিজ্ঞানীরা ২০০৩ সালে এই হাতিগুলোর ডি এন এ পরীক্ষা করে বলেছেন, এরা একেবারে আলাদা প্রজাতির। আমাদের এই বিশ্বে এখন এই পিগমি হাতির সংখ্যাও খুব বেশি নেই। প্রায় তিন হাজার মতো এখনও বেঁচে আছে এবং সবগুলোই আছে বোর্নিও দ্বীপে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy