Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রিয়েলিটি শো

গেম শো’টার নাম টর্চার হলেই ঠিকঠাক হত। প্রতিযোগীরা আট সপ্তাহ একটা দশ ফুটের আটখুপি ছোট্ট ঘরে আটকে থাকবে। ঘরটা ক্যামেরা আর মাইক্রোফোনে বোঝাই। ওরই মধ্যে এক কোণে খাবার জায়গা, আয়না, টয়লেটের দরজা। কেমন থাকবে, কী করবে, কতটুকু খাবে, কখন এবং কতটা ঘুমোবে সবটা ঠিক করে দেবে আয়োজকরা। আর ঘরে লাগানো ক্যামেরা দিয়ে সে সব দেখবে আমেরিকান জনতা।

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১০
Share: Save:

গেম শো’টার নাম টর্চার হলেই ঠিকঠাক হত। প্রতিযোগীরা আট সপ্তাহ একটা দশ ফুটের আটখুপি ছোট্ট ঘরে আটকে থাকবে। ঘরটা ক্যামেরা আর মাইক্রোফোনে বোঝাই। ওরই মধ্যে এক কোণে খাবার জায়গা, আয়না, টয়লেটের দরজা। কেমন থাকবে, কী করবে, কতটুকু খাবে, কখন এবং কতটা ঘুমোবে সবটা ঠিক করে দেবে আয়োজকরা। আর ঘরে লাগানো ক্যামেরা দিয়ে সে সব দেখবে আমেরিকান জনতা। বিগ ব্রাদারের সঙ্গে মিল পাচ্ছেন? আর কিছুটা জানলে ফিয়ার ফ্যাক্টরের সঙ্গেও সাদৃশ্য পাবেন। তবে, দু’ক্ষেত্রেই মিলটা কিঞ্চিৎমাত্র। কারণ এ খেলায় ঘর থাকবে আটটা। আট জন প্রতিযোগী তাতে থাকবে সম্পূর্ণ একলা। বাইরের দুনিয়া, অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় থাকবেই না। বাইরে দিন না রাত, ক’টা বাজে, কী বার কিচ্ছুটি জানতে দেওয়া হবে না। বরং ঘরে প্রতিযোগীর সঙ্গে থাকবে ভ্যাল নামের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। অসহ্য ঘ্যাংঘেঙে যন্ত্রমানুষের গলায় সে বলে দেবে কোন টাস্ক করতে হবে, কোন ট্রিটমেন্ট চলবে প্রতিযোগীর ওপর। এই টাস্ক আর ট্রিটমেন্টে যারা ফেল করবে, তারা আউট। ভ্যাল-ই বাইরের খবর দেবে ক্বচিৎ, অন্য প্রতিযোগীর সঙ্গে কদাচিৎ কথা বলা যাবে, তা-ও ভ্যাল-এর মাধ্যমে।

আয়োজকরা বলেছিলেন, খেলাটা আসলে একটা সোশাল এক্সপেরিমেন্ট। প্রতিযোগীদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা ‘টেস্ট’ করা হয়। কী রকম? এক ধাপে, প্রতিযোগীদের ঘুমের ওপর বিধিনিষেধ বসল। কিছু সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল। বলা হল, এই সময়টুকু ছাড়া ঘুমোনো যাবে না। ঘুমোবার আগে একটা পাসওয়ার্ডও দেওয়া হল। ঘুমের বাঁধা সময়ের একটু পরেই, পরিত্রাহি সাইরেন বাজানো হল। যে প্রতিযোগী ধড়মড় করে উঠে, যত তাড়াতাড়ি ঘুমের রেশ কাটিয়ে, মাথা খাটিয়ে পাসওয়ার্ড টিপতে পারবে, সে ওই ভয়ানক সাইরেন থামিয়ে আবার একটু ‘বিশ্রাম’ জিততে পারবে। শরীরের পরীক্ষাও সাংঘাতিক। কাঠের পেরেকের ওপর শুইয়ে দেখা হত, কে কত ক্ষণ থাকতে পারছে। উপবাস ক্ষমতার টেস্টও হত। অনেক ক্ষণ না খাইয়ে, অনেকটা খাবার সাজিয়ে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে গিলে ফেলতে বলা হত। ক্ষুধার্ত অবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হত কে কত সময়ে কত বেশি কিটকিটে মিষ্টি খেতে পারে বা দুধ হজম করতে পারে। এ সব অবস্থায় বমি করে ফেললেই, তৎক্ষণাৎ শো’র বাইরে। ‘ব্রেনওয়াশিং’ ছিল আর এক অদ্ভুতুড়ে এক্সপেরিমেন্ট। কয়েক দফা চেনা জিনিসপাতির ছবি দেখানো হত পরপর। সঙ্গে তাদের সম্পূর্ণ ভুলভাল নাম শেখানো হত। যেমন গোলাপের ছবি দেখিয়ে, বলা হত এটা হ্যান্ড গ্রেনেড। কিছু ক্ষণ পর প্রতিযোগীদের এই নতুন শেখানো নাম নিয়ে কুইজ করা হত। না পারলেই, ঘাড়ধাক্কা।

আরও ছিল। মাথা জলে চুবিয়েই কয়েক সেকেন্ড ধরে একটা বক্তৃতা শোনানো হত। মাথা ভোঁ ভোঁ অবস্থায় ওটা ডিট্টো মনে রাখো তো চাঁদ। পরের সিজ্নগুলোতে আরও বেয়াড়া পরীক্ষা ঢুকল। একাকিত্ব ঘোচাতে ছোট্ট এক বন্ধু দেওয়া হল প্রতিটি কুঠুরিতে। একটি ছটফটে, দাঁত-সুড়সুড়ে নেংটি ইঁদুর। এক বার প্রতিযোগীদের বসিয়ে দেওয়া হল টিভির সামনে। কয়েকটা বীভৎস, ভয়াল ছবি চলল স্ক্রিনে। তার পর ফিল্মটার অনেক অনেকগুলো স্ক্রিনশট ওলটপালট করে ছড়িয়ে দেওয়া হল। নাও, সিনেমায় যে অর্ডারে দেখেছিলে, ঠিক তেমনি করে সাজাও। এই সিজ্নের ফাইনালিস্টদের বলা হয়েছিল, কয়েকটা হাড়ের টুকরো কেটে, ফুটো করে করে ১০০টা ছক্কা বানাতে। তার পর চেনের তৈরি ঝুলন্ত বিছানায় শার্ট খুলে শোওয়া, শর্ত: মাটি ছোঁওয়া চলবে না। যে পারবে সে তিন ঘণ্টা ঘুমোতে পাবে, যে পারবে না সে এক ঘণ্টা টানা সাইরেনের উৎপাত সহ্য করবে।

কখনও কখনও অনেকটা খাটানোর পর অল্প ঘুমোতে দিয়েই তুলে দেওয়া হত। তার পর প্রশ্ন, কত ক্ষণ ঘুমিয়েছিলে। যে ঠিক উত্তরের কাছাকাছি যেতে পারবে, সে পরের রাউন্ড থেকে বেঁচে যাবে। যে সব থেকে খারাপ আন্দাজ লাগাবে, তার বরাত খারাপ। এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা ছোট্ট বাক্সে গুটিসুটি মেরে বসে থাকো অনন্ত কাল।

শো চলাকালীন বেশির ভাগ প্রতিযোগীই প্রাণ ফাটিয়ে চেঁচাত, বার বার শো ছাড়ার সংকেত লাল বোতাম টিপতে থাকত পাগলের মতো। তবে, এই সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে শেষ এপিসোড পর্যন্ত টিকে, শো জিততে পারলে পাওয়া যেত ৫০,০০০ ডলার।

চার সিজ্ন পর, বন্ধ হয়ে গেল সলিটারি। না না, মানুষের পরীক্ষা-পদ্ধতির স্টক ফুরিয়ে যায়নি মোটে। বরং উঠে গিয়েছিল ফক্স রিয়েলিটি চ্যানেলটাই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE