Advertisement
E-Paper

রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিসিসিআই সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন, তাঁর ইস্তফাপত্রটি ভারতীয় জাদুঘরে দুষ্প্রাপ্য নথি বিভাগে জায়গা পাচ্ছে। বহু বার অপসারণের পরও বার বার নিজের গদি ফিরে পেয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের এই কামব্যাক কিং।

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০০:০০

কাজী পারভেজ, হরিণঘাটা, নদিয়া

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।
অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

এক পাহাড়ের নাম আরিরাং। এক পরিচালকের নাম কিম কি-দুক। সেই পরিচালক এক দিন তাঁর পনেরোখানা ছবির দুরন্ত সাফল্য, এশিয়া-ইউরোপ-আমেরিকা কাঁপানো নামডাক আর কান-ভেনিস-বার্লিন-বুসান থেকে পাওয়া সোনার গাছ-পাতা-ভালুক-সিংহ সব সোল-এর বাড়ির তাকে তুলে আচমকা ওই পাহাড়ে চলে যান! যাকে বলে স্বেচ্ছা-নির্বাসন। নিজেকে নিজে কেন এই শাস্তি? কারণ তাঁর আগের ছবি ‘ড্রিম’-এর শুটিংয়ে একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে ঘটতে ঘটেনি! একটি আত্মহত্যার দৃশ্যে অভিনয়ের সময় অভিনেত্রীর গলায় বেকায়দায় ফাঁস লেগে যায়। মনিটরে সেটা দেখতে পেয়ে পরিচালকই ছুটে এসে তাকে বাঁচান। ছবিটা শেষ হয়, কিন্তু পরিচালক কিছুতেই ট্রমা-টা থেকে বেরোতে পারেন না। ভুলতে পারেন না, তাঁরই লেখা একটা বানানো গল্পের বানানো দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে একটি মেয়ে সত্যি সত্যি মারা যেতে বসেছিল। তাঁর মনে হচ্ছিল, তিনি কে এমন হরিদাস পাল পরিচালক, সিনেমাই বা কী এমন এক মহান শিল্প, যার জন্য তিনি একটা জীবনের বলি চাইতে পারেন?

কিম তাই ঠিক করে ফেলেন, আর কোনও দিন সিনেমাই বানাবেন না। ওই দুর্ঘটনার পিঠোপিঠি তাঁর জীবনে আরও দু’একটা ঘটনা ঘটে যায়! তাঁর প্রোডাকশন টিমের ক’জন বিশ্বস্ত সঙ্গী আরও সুখী-রঙিন কেরিয়ারের টানে তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। এমনিতে ইন্ডাস্ট্রিতে এ তো রোজকার জলভাত। কিন্তু মনের ও রকম অবস্থায় এই ব্যাপারগুলোও তাঁকে ধাক্কা দিয়েছিল। তিনি মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছিলেন না। তাই মানুষের শহর-সভ্যতা ছেড়ে, একটা তাঁবু আর কয়েকটা জিনিস ঘাড়ে করে পাহাড়ের টঙে চড়েন। শুরু হয় তাঁর নির্বাসিত জীবন। সেটা ২০০৮। প্রায় তিন বছর ধরে একুশ শতকের নয়া রবিনসন ক্রুসো সেখানে রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন, তাঁবুর চেন-টানা দরজাটা খুলেছেন (পাহাড়ের মাথায় এত ঠান্ডা যে লগ-হাউসের ভেতরেও তাঁকে তাঁবু খাটিয়ে শুতে হত), তার পর ঘরের দরজা। বাইরের একটু আলো-বাতাস। মুখ-ধোওয়া। তার পর রান্না, খাওয়া আর সারা দিন মদ্যপান। তার পর আবার কখন রাত্তির, কখন ঘুম!

তবে ‘সিনেমা তোমায় দিলেম আজকে ছুটি’ বলে নির্বাসনে এলেও ছবি বানাতে না পেরে তিনি হাঁপিয়ে উঠছিলেন। তাই শেষ অবধি ডিজিটাল ক্যামেরায়, নিজেকেই প্রোটাগনিস্ট সাজিয়ে এই ১০০ মিনিটের ছবিটা বানিয়েই ফেললেন! ছবিটাকে এক জন মানুষের সভ্যতা-বিচ্ছিন্ন একলা জীবনযাপনের তথ্যচিত্র বলা যায়। সেখানে প্রতি বার টেন্টের দরজা খোলা-বন্ধ করা থেকে শুরু করে কুমড়োর ছেঁচকি আর টমেটোর লাঞ্চ, নুড্ল্স আর বেক্ড ফিশের ডিনার অবধি ক্যামেরা তাঁর পিছু নেয়। কফি মেশিনটাকে জুড়ে জুড়ে সেট করা থেকে মেশিনে শোঁ শোঁ করে কফি বানানো, গবগব করে কফি কাপ ভর্তি হওয়ার ডিটেলও বাদ যায় না! রোজকার এই একঘেয়ে বেঁচে থাকার দিনলিপিতে পরিচালক ইচ্ছে করেই মাঝেমাঝেই সজল-আবেগময় নাটুকেপনা এনেছেন। ক্যামেরার মুখোমুখিই চুলের স্টাইলটা একটু বদলেই তিনি আর এক জন কিম কি-দুককে হাজির করেছেন। ইনি টেলিভিশনের কড়া অ্যাংকরের মতো প্রশ্নে প্রশ্নে ওই পালিয়ে বেড়ানো, আত্মপীড়ক পরিচালককে জেরবার করেন। নির্বাসিত কিম-ও কনফেশনের মতো তাঁর হৃদয়-মন মেলে ধরেন। দুজনের তর্ক হয়, ঝগড়া হয়। পলাতক কিম সিনেমার ভিলেনদের মতো চোখ পাকিয়ে খিস্তি করেন। আবার সিনেমা, অভিনয়, জীবন নিয়ে, পরমাণুযুদ্ধ আর পণ্যবাদের ছায়ায় ঢাকা পৃথিবীর ভবিষ্যত্‌ নিয়ে তাঁর ভাবনা-বিশ্বাস-শঙ্কার কথা বলেন।

ছবিটা দেখতে দেখতে আপনার মনে হতে পারে, পানশালায় একটা বেহেড মাতাল, ন্যাকা লোকের পাশে বসে আছেন, ছদ্ম-বিনয়ের আড়ালে যিনি আত্মপ্রচারের ড্রাম পিটছেন! আবার খুঁজে পেতে পারেন এক দার্শনিককে, পাহাড় থেকে নেমে, গোটা শহর খানাতল্লাশ করে, যিনি তাঁর পুরনো লোভ, অহংকার, ভোগ-বাসনাগুলোকে গুলি করে মারছেন! তার পর ডেরায় ফিরে পিস্তলটাকে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন নিজের দিকেই, ‘অ্যাকশন’ বললেই যার ট্রিগারটা নড়ে উঠবে, ছুটে আসবে এক টুকরো সিসের মুক্তি!

পুনশ্চ: আরিরাং পাহাড় কিম কি-দুককে মানুষ হিসেবে কতটা পালটে দিয়েছে, জানা নেই। কিন্তু এই ছবিটা তিন বছরের খরা কাটিয়ে তাঁকে আবার পরিচালনার দুনিয়ায় ফিরিয়ে এনেছিল।

sanajkol@gmail.com

rabibasariyo magazine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy