Advertisement
E-Paper

লাইভ দেখানো হল দক্ষিণেশ্বরের পুজো

কা লীপুজোর সময় রেডিয়োর আমলে কথার মাধ্যমে এবং বাজি ফাটানোর শব্দ শুনিয়ে সম্প্রচার হত। টিভি আসার পর, মানুষ পাড়ায় পাড়ায়, মন্দিরে মন্দিরে কালীপুজোর আয়োজন চোখে দেখলেন, হরেক জায়গায় দীপাবলির আলোকসজ্জার রূপও চাক্ষুষ করলেন।

পঙ্কজ সাহা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৫ ০০:০৩
গড়ে উঠছে দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির প্রাঙ্গণ। সেই সময়কার ছবি। ছবি সৌজন্য: কুশল চৌধুরী

গড়ে উঠছে দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির প্রাঙ্গণ। সেই সময়কার ছবি। ছবি সৌজন্য: কুশল চৌধুরী

কা লীপুজোর সময় রেডিয়োর আমলে কথার মাধ্যমে এবং বাজি ফাটানোর শব্দ শুনিয়ে সম্প্রচার হত। টিভি আসার পর, মানুষ পাড়ায় পাড়ায়, মন্দিরে মন্দিরে কালীপুজোর আয়োজন চোখে দেখলেন, হরেক জায়গায় দীপাবলির আলোকসজ্জার রূপও চাক্ষুষ করলেন। বাঙালির প্রতিটি উৎসব নিয়েই দূরদর্শনে বিশেষ অনুষ্ঠান করার রীতি একেবারে প্রথম থেকেই চালু হয়।

কলকাতা দূরদর্শনের শুরুর সময়ে দিল্লিতে সিদ্ধান্ত হয়, বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্র নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হবে। দিল্লি থেকে প্রচারের জন্যে দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরির দায়িত্ব পড়ে আমার ওপরে। গঙ্গার ওপর দিয়ে রানি রাসমণি চলেছেন, সেই দৃশ্য দিয়ে ছবিটি শুরু করা হল। হেস্টি সাহেবের কুঠিবাড়ি সমেত সাড়ে বাহান্ন বিঘা জমি কেনেন রানি রাসমণি, দক্ষিণেশ্বর মন্দির স্থাপনের জন্য। সেই সময়ের বিখ্যাত ম্যাকিনটশ বার্ন আর্কিটেক্ট কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় মন্দির তৈরির।

ওই জমিতে মন্দির স্থাপনের বৃত্তান্ত, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরকে কেন্দ্র করে বাংলার নবজাগরণের কথা, শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে নানা ধরনের মানুষের আনাগোনা, তাঁদের শ্রীরামকৃষ্ণদেবের কথামৃত শোনা, এক যুবকের নরেন্দ্র থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠা, মন্দিরের নহবতখানাগুলো থেকে সানাইয়ের মিষ্টি সুর গঙ্গার ওপরের আকাশে ছড়িয়ে পড়া, তেমনই এক নহবতখানার নীচের তলায় সারদা দেবীর পবিত্র-কঠোর জীবন যাপন— এই সব ইতিহাস নিয়ে গড়ে উঠেছিল তথ্যচিত্রটি। স্বামী শিবানন্দ গিরি মহারাজ খুব সাহায্য করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমায় প্রথম যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন প্রণতি ঠাকুর।

শিবানন্দ গিরি মহারাজ কিছুতেই ক্যামেরার সামনে আসতে চাননি, কিন্তু তাঁর আশ্চর্য ভক্তিময় কণ্ঠের মন্ত্রোচ্চারণ-গান ব্যবহার করেছিলাম। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘জুড়াইতে চাই, কোথায় জুড়াই’ গানটিও ব্যবহার করা হয়েছিল। ভাষ্যপাঠ করেছিলেন দেবাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় ও গোপা গঙ্গোপাধ্যায়। দুজনেই এখন প্রয়াত। আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত এবং চম্পা ভৌমিক। দূরদর্শন নির্মিত অনুষ্ঠান বিক্রির প্রথম যে তালিকা তৈরি হয়েছিল, তাতে জায়গা পেয়েছিল এই ‘দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির’ তথ্যচিত্র।

শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের ডিরেক্টরের দায়িত্বে এসে, কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন কিংবা চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীপুজো বা ইছামতী নদীতে দুই বাংলার দুর্গাপ্রতিমার একই সঙ্গে বিসর্জন ইত্যাদির লাইভ টেলিকাস্ট যখন শুরু করেছি, তখন সহকর্মী সজয় দাশগুপ্ত জানতে চাইলেন, দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির থেকে কালীপুজো সরাসরি প্রচার করতে উৎসাহী হব কি? বললাম, নিশ্চয়ই, কিন্তু মন্দির কতৃর্পক্ষ অনুমতি দেবেন? সজয় দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও দেবোত্তর এস্টেটের অছি এবং সম্পাদক কুশল চৌধুরীকে দূরদর্শনে নিয়ে এলেন। দেখলাম, তিনি নিজেই চান, মন্দির থেকে কালীপুজো লাইভ টেলিকাস্ট হোক। আমাদের প্রযুক্তি বিভাগের সহকর্মীদের নিয়ে দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে, সব ব্যবস্থা করা হল— কোথায় কোথায় ক্যামেরা বসানো হবে, কোথায় ওবি ভ্যান রাখা হবে। মন্দিরের গর্ভগৃহে ক্যামেরা বসানোর অনুমতি পেলাম। শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরের যে ঘরে থাকতেন, তার পাশের ঘরের ছাদে একটা ক্যামেরা রাখার ব্যবস্থা করলাম। মন্দির পরিচালন সমিতির সদস্যরা পুরোহিতকে নিয়ে গঙ্গায় ঘটস্নানে যাচ্ছেন, পুজোর শেষ পর্বে মন্দিরের গর্ভগৃহের বাইরে দক্ষিণ দুয়ারের নীচে হোম হচ্ছে, সারা রাত ধরে ভক্তরা আসছেন, এই সমস্ত দৃশ্য সেই ক্যামেরায় ধরা হল। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা মানুষ সারা রাত ব্যাপী দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কালীপুজো বিস্তারিত ভাবে দেখতে পেলেন। ভাষ্যের জন্য পাঠানো হয়েছিল প্রণতি ঠাকুর ও সতীনাথ মুখোপাধ্যায়কে। লাইভ টেলিকাস্টে কুশল চৌধুরী জানালেন মন্দিরের ইতিহাস, পুজোর রীতিপদ্ধতির নানা কথা।

প্রথম বারের অভিজ্ঞতা থেকে পরের বছর অনেক অদলবদল করলাম। সেই ছাদে মঞ্চ তৈরি করে শ্যামাসঙ্গীত, স্তোত্রপাঠ, ভাষ্যবিবরণী, সাক্ষাৎকার নেওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হল। বিশেষজ্ঞরা, রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরা আমন্ত্রিত হলেন। মন্দিরে জড়ো হওয়া মানুষের অনেকের বক্তব্যও প্রচার করা হল। তাঁরা যাতে পুজোর সব কিছু বিস্তারিত দেখতে পান, সে জন্য আমরা ওখানে একটা বড় স্ক্রিন লাগিয়ে দিলাম। কুশল চৌধুরী জানালেন, মন্দিরের চারপাশের পরিবেশ কী ভাবে পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে, সংস্কার করা হচ্ছে। এই ভাবে একটা ফরম্যাট গড়ে উঠল। দশ বছরের বেশি ধরে এই সরাসরি সম্প্রচার চলছে। পরে দেশের অন্যান্য কালীক্ষেত্রের পুজোও সম্প্রচার করা হয়েছে। আলোর উৎসবে দূরদর্শনও তৈরি করে চলেছে নতুন আলো।

pankajsaha.kolkata@gmail.com

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy