Advertisement
E-Paper

সাদা মনে কাদা ছিল?

হিসেব মতো চলতি বছরেই সে দুঃসহ আঠেরোয় পা রাখছে। মানে, প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে। অথচ বছর নয়েক আগের নাবালকত্বেই সে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল গোটা ভারতকে। সে দিন সে ছেলে বিখ্যাত কেউ ছিল না, কিন্তু হেডলাইন হয়ে উঠেছিল খেলার ছলে।

সুস্নাত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:০০

হিসেব মতো চলতি বছরেই সে দুঃসহ আঠেরোয় পা রাখছে। মানে, প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে। অথচ বছর নয়েক আগের নাবালকত্বেই সে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল গোটা ভারতকে। সে দিন সে ছেলে বিখ্যাত কেউ ছিল না, কিন্তু হেডলাইন হয়ে উঠেছিল খেলার ছলে। আজও হয়তো সাবালক-হতে-চলা ছেলেটির নাম আর চট করে মনে পড়বে না, কিন্তু তার ভয়াবহ কীর্তির কথা শুনলে শিউরে উঠতে হবে।

অমরদীপ সাদা। জন্ম ১৯৯৮। বিহারের বেগুসরাই-এর নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। সে দিনের শিশুটি ক্রমে হয়ে উঠেছিল ভারত তো বটেই, তামাম বিশ্বের অন্যতম কনিষ্ঠ সিরিয়াল কিলার। ২০০৭ সালের ৩০ মে খুনের অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার পর পুলিশের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তরে অমরদীপ নাকি কথা বিশেষ বলেনি, কেবল হেসেছিল খুব, আর বিস্কুট খেতে চেয়েছিল বার বার!

গ্রামবাসীদের মুখ থেকে জানা গিয়েছিল তার কাহিনি। গ্রামে তাদের পাশেই থাকতেন চুনচুন দেবী ও তাঁর পরিবার। এক দিন এই পড়শি তাঁর মাস ছয়েকের মেয়ে খুশবুকে ঘুম পাড়িয়ে, রোজকার মতো এলাকারই প্রাইমারি স্কুলে রেখে, ঘরের কাজকর্ম সারছিলেন। ফিরে এসে মেয়েকে আর দেখতে পান না। শুরু হয় খোঁজ। ইতিমধ্যে নির্বিকার মুখে সেখানেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় অমরদীপকে। গাঁয়ের লোক জিজ্ঞেস করলে, সামান্যতম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই খুশিতে ডগমগ হয়ে সে জানায়, ছোট্ট খুশবুকে নিয়ে কী কাণ্ডটাই না করেছে খানিক আগে! প্রথমেই তার গলা টিপে ধরে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে। তার পর তাকে মাঠে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে, ইট আর পাথরের বাড়ি মেরে মেরে তার মুখ থেঁতো করে দিয়েছে। এত সবের পর ঘাস-পাতা দিয়ে রক্ত-মাখা দেহটি ভাল করে ঢেকে রেখে, তবে এসেছে। ঘটনার এ হেন খুঁটিনাটি বিবরণের পর সে গ্রামবাসীদের নিয়ে অকুস্থলে পৌঁছোয়। মৃত খুশবুর সন্ধান মেলে। এই প্রথম এবং শেষ বার পুলিশের খাতায় অমরদীপের অপরাধ নথিভুক্ত হয়। তাকে গ্রেফতার করা হয়।

কিন্তু এর আগেও দুটি খুন করেছিল সে। প্রথমটি আরও বছর খানেক আগের ঘটনা। আট বছরের ছেলেটির শিকার হয়েছিল তার মামাতো বোন। সে-শিশুর বয়স তখন ছ’মাস। তার পর ২০০৭ সালের শুরুতে অমরদীপ প্রাণ কেড়ে নেয় নিজের বোনেরই। যার বয়স ছিল আট মাস। এই দুটি মৃত্যুর কথা পরিবারের লোকজন চেপে গিয়েছিলেন। গাঁয়ের দু-এক জন জানতেন, কিন্তু পুলিশকে জানানো হয়নি। খুশবুকে হত্যার পরে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ায়, আগের ঘটনাগুলির কথা প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, সেই হত্যা দুটিও নাকি ছিল অবিকল একই রকম রক্ত-ঝরা পদ্ধতিতে। ক্রমাগত ইটের বাড়ি মেরে মুখ থেঁতো করে দিয়ে।

নাবালক হিসেবে স্বাভাবিক ভাবেই তিন বছরের বেশি কারাবাস হয়নি অমরদীপের। তার পর তাকে পাঠানো হয় একটি হোমে। সিরিয়াল কিলিং-এর ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, খুন করার ‘সন্তুষ্টি’ ছাড়া খুনের পিছনে অপরাধীর আর কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য কাজ করে না। অমরদীপের কেসটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে এ কারণে যে, সেখানে এই প্রবণতা ছিল চূড়ান্ত। আট-ন’বছরের এক বালকের ভেতর জেগে-ওঠা ধর্ষকাম বা সেডিস্ট মানসিকতার পরিচয় মিলেছিল। ভেবে দেখার, তিন শিকারই ছিল শিশু-কন্যা। তিন জনের বয়সই এক বছরের কম। মনোবিদদের বক্তব্যও ছিল, ভাল আর মন্দের ফারাক করার বোধই গড়ে ওঠেনি অমরদীপের। সে যে ভুল করছে, অনুচিত কাজ করছে, অপরাধ করছে— এই চেতনাই জাগছে না তার মন ও মস্তিষ্কে। তার মন সম্ভবত অপরাধী ছিল না, অসুস্থ ছিল। আর তার জেরেই এই পরিণতি। অন্যতম কনিষ্ঠ সিরিয়াল কিলারের তকমা। আম জনতার মনে সেই ভয়াল স্মৃতি আজ আর সে ভাবে না থাকলেও, ইংরেজি রহস্য-উপন্যাস থেকে অপরাধ-মনস্তত্ত্ব বিষয়ক ব্লগ— গত ন’বছরে বার বার উঠে এসেছে তার নাম।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy