Advertisement
E-Paper

সাপ মরে লাঠি ভাঙে

কবিগুরুর ন্যায়ের দণ্ড এখন প্রত্যেকের ঘাড়ে। রাগী যুবক ও যুবতীরা তো বটেই, যে মাসিমারা এত দিন পাশের বাড়ির মেয়ের পোশাক নিয়ে প্রবল নাক সিঁটকেছেন, যে বড়দারা ‘পাড়ার মেয়ে বাইরে যায় কেন’ বলে চিল্লেছেন, নির্ভয়া কাণ্ডের ‘নাবালক’ অপরাধী জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সকলেই একমত, এ ঠিক হ্যাপি এন্ডিং হল না। ব্যাটার রেপ করতে আটকায় না, যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে দিতে হাত কাঁপে না, ছোকরা নাবালক না হাতি, অপকম্মের চৌবাচ্চা।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:৪২

কবিগুরুর ন্যায়ের দণ্ড এখন প্রত্যেকের ঘাড়ে। রাগী যুবক ও যুবতীরা তো বটেই, যে মাসিমারা এত দিন পাশের বাড়ির মেয়ের পোশাক নিয়ে প্রবল নাক সিঁটকেছেন, যে বড়দারা ‘পাড়ার মেয়ে বাইরে যায় কেন’ বলে চিল্লেছেন, নির্ভয়া কাণ্ডের ‘নাবালক’ অপরাধী জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সকলেই একমত, এ ঠিক হ্যাপি এন্ডিং হল না। ব্যাটার রেপ করতে আটকায় না, যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে দিতে হাত কাঁপে না, ছোকরা নাবালক না হাতি, অপকম্মের চৌবাচ্চা। পিটিয়ে হাড়গোড় পটপট করে ভেঙে দিয়ে, চোখে ঝাঁটার কাঠি ঢুকিয়ে, তার পর উলটো করে ঝুলিয়ে সাঁড়াশি দিয়ে সাবালকোচিত লিঙ্গটি উপড়ে নিলে কাজের কাজ হত। অবশ্য অন্ধ খোজা আর নুলো হয়ে ভিক্ষে করে ধুঁকতে ধুঁকতে মরলে উচিত শিক্ষা হত, না গায়ে পেট্রোল দিয়ে জিন্দা জ্বালালে, সে নিয়ে জনমত দ্বিধাবিভক্ত। কিন্তু যা নিয়ে কাশ্মীর হইতে কন্যাকুমারী কোনও মতভেদ নেই, তা হল, কন্যা কুমারীই হোক বা কাশ্মীরি, ইজ্জত নিয়ে ছেলেখেলা নয়। নারীর সম্মান লুটলেই খাল্লাস।

খুনের বদলে খাল্লাস অবশ্যই অত্যন্ত সোজাসাপটা ব্যাপার, ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা..., কিন্তু সম্মানহানির জবাবে খুন কেন? খুবই সিম্পল। ধর্ষণ ঠিক চুরি-ডাকাতি-রাহাজানির মতো ছিঁচকে অপরাধ না। চুরি হলে ঘটিবাটি আবার পাওয়া যায়, হাত-পা কাটা গেলে প্রস্থেটিক লেগ আছে, তা নিয়ে লোকে আজকাল অলিম্পিকে পর্যন্ত ফাটিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু ‘সম্মান’ যাওয়া আর মরে যাওয়া একই কেস। এবং বলা বাহুল্য, তার জবাবে খুনই ফার্স্ট প্রিন্সিপ্‌ল।

প্রাচীন রাজস্থানে শত্রুর হাতে সম্মানহানি হবার আগেই মেয়েরা জহরব্রতে যেত, আর তাদের নাবালক অপত্যরা বড় হয়ে শত্রুর মুন্ডু কাটার ছক করত— সমকালে এ তারই রিপিট শো। এখন অবশ্য তেমন সতীলক্ষ্মী পাওয়া যায় না, কিন্তু তাতে ক্ষতি নেই, ভার্চুয়ালি মরা ও মারার উন্নততর সুবন্দোবস্ত আছে। এক বার যৌন লাঞ্ছনা হলেই হল, ‘আহা রে সর্বস্ব গেল, এখন মুখ দেখাবে কী করে’ বলে পাড়া জুড়ে সমবেত রুদালি শুরু হয়ে যায়। মুখ দেখাতে চাইলেও আর দেখানোর উপায় নেই, এমনিই জিনা হারাম। সুইসাইড করলে আরও ভালো— ‘আমাদের মেয়েটাকে মেরে ফেললি রে’ বলে পরের দৃশ্যেই হারেরেরে রবে ন্যায়বিচারের ভগীরথদের ধর্ষকের যৌনাঙ্গ উপড়ে ফেলার শপথ এবং সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়া জুড়ে তেড়ে হাততালি।

বাস্তবের নাগাল্যান্ড থেকে বলিউডি ‘মর্দানি’ পর্যন্ত এই একই ফর্মুলা চলছে। এতে সাপও মরে লাঠিও ভাঙে, ধর্ষিতা লজ্জায় মরে পাড়ার মান রাখে, ধর্ষক পিটিয়ে হাতের সুখও হয়। ন্যায়বিচারের এই টু-ইন-ওয়ানে দুটো মৃত্যুই জরুরি। ‘সম্মান নিয়ে বাড়াবাড়ির কিছু নেই, ধর্ষিতা বুক ফুলিয়ে ঘুরুক, ধর্ষকও জেলে গেলেই যথেষ্ট’— এ সব এখানে বেকার বাত, কারণ কবিগুরু বলেছেন, অন্যায় যে করে আর যে সহে, দুটোই বজ্জাত।

bsaikat@gmail.com

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy