Advertisement
E-Paper

সংবাদ মূলত নাব্য

পৃথিবীতে প্রথম বার উত্তরাধুনিক নিউজ রিপোর্টিং হাতেকলমে দেখিয়ে বিহারের বিধানসভা নির্বাচন বিশ্বরেকর্ড করে ফেলল। একই নির্বাচন, একই প্রার্থী, একই ভোটাভুটি, একই গোনাগুনতি— কিন্তু ফলপ্রকাশের দিন অজস্র চ্যানেলে একই সঙ্গে রকমারি ফলাফল।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৫ ০০:০৩

পৃথিবীতে প্রথম বার উত্তরাধুনিক নিউজ রিপোর্টিং হাতেকলমে দেখিয়ে বিহারের বিধানসভা নির্বাচন বিশ্বরেকর্ড করে ফেলল। একই নির্বাচন, একই প্রার্থী, একই ভোটাভুটি, একই গোনাগুনতি— কিন্তু ফলপ্রকাশের দিন অজস্র চ্যানেলে একই সঙ্গে রকমারি ফলাফল। যেন ডার্বি চলছে যুবভারতীতে, কিন্তু সরাসরি সম্প্রচারে তিন রকম রেজাল্ট! অবিশ্বাস্য হলেও দু’পক্ষই একসঙ্গে তিন গোলে জিতছে, এ পাড়ায় সবুজ-মেরুন বোম ফাটাচ্ছে তো ও তল্লাটে দামের চোটে ইলিশ বাড়ন্ত। একই নির্বাচনে মোদী-লালু-নীতীশ সব্বাই পালা করে জেতার চান্স পাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা দু’ঘণ্টার ব্যবধানে একই লোকের বিপুল জয়ের কারণ এবং তুমুল হারের প্রেক্ষাপট, একই দক্ষতায় একই ফ্লুয়েন্সিতে বলে যাচ্ছেন, কোনওটাতেই যুক্তি এবং পাণ্ডিত্যের কোনও অভাব নেই। একই লোককে এক বার গলায় প্রায় মালা পরিয়ে ‘আপনি ক্কী করেছেন স্যর, একটু বাইট দিন প্লিজ!’ বলে গদগদ ইন্টারভিউ করার পর দু’ঘণ্টার ব্যবধানে একই টেম্পোয় কিন্তু কড়াক্কড় টোনে ‘এ বাবা! অঙ্কে তো পুউউরো তেরো, কেন পেয়েছেন এক্ষুনি কারণ বিশ্লেষণ করুন’ প্রশ্ন করা হচ্ছে নিতান্ত নির্বিকারে, যেন কর্পোরেট খোকাবাবুকে ইন্টারভিউয়ে এক নিশ্বাসে নিজের ‘উইক এবং স্ট্রং পয়েন্ট’ গড়গড়িয়ে বলতে বলা হয়েছে।

এর থেকে পরিষ্কার যেটা বোঝা যায়, রিয়েলিটি বস্তুটা ক্রমশ আউট অব ফ্যাশন হতে হতে প্রায় অজানা উড়ন্ত বস্তুর মতো অলীক হতে চলেছে। এখন সংবাদ মূলত ধূম্রজাল, প্যারালাল ডিসকোর্সের কারবার। এখন কলা মানে যে কোনও শিল্প হতে পারে, সিঙ্গুরি বা সিঙ্গাপুরি, জয় মানে আনন্দও হতে পারে গোঁসা(ই)ও, ওবামা মানে পরনারী থেকে করোনারি যা খুশি। সবই ইন্টারপ্রিটেশনের খেলা, রশোমন-এর মেড-ইজি।

সার কথাটা হল, লোককে আঠার মতো ছোট পরদায় সেঁটে রাখতে হবে, নড়তে দেওয়া যাবে না। টিআরপিই ঈশ্বর। তিনিই প্রতিবেদনের জনক, তিনি চাইলে জলস্তর উঠবে বা নামবে, গল্পের গরু ইনস্যাটে উঠে বাঘের সঙ্গে এক স্পেসশিপে জল খাবে, খবরাখবর ঠিকঠাক আসার আগেই হাত গুনে বিশ্লেষণ শুরু করতে হবে। ফলত পারদ ক্রমশ চড়বে, নির্বাচনী গোনাগুনতি হয়ে উঠবে ২০-২০ ম্যাচ। ছুটির নিরামিষ সকালে পাওয়া যাবে দম বন্ধ করা উত্তেজনা, শেষ বল পর্যন্ত টেনশন বজায় রাখার বিনোদন, আর দিনের শেষে ‘উফ কী দেখলাম, এ রকম খেলা শেষ ঘুরিয়েছিল লক্ষ্মণ আর দ্রাবিড়, সেই ইডেনে’, বলে তৃপ্তির উদ্‌গার।

যেন, তিন দিন আগে ভোট শেষ হয়ে যায়নি, জাস্ট গোনা নয়, চোখের সামনে চলছে লাইভ ক্রিকেট ম্যাচ, বিরাট কোহলি পর পর ছক্কা মারছেন। তার ধারাবিবরণী হয়ে উঠছে কবিতা, নিরেট জেতা-হারার খবর হয়ে উঠছে ক্রাইম থিলারের প্রতিদ্বন্দ্বী, টুইস্টের প্রয়োজনে জল এক বার উঁচু ও পরক্ষণেই নিচু হচ্ছে। সাধে কী আর বলে, সংবাদ মূলত নাব্য?

bsaikat@gmail.com

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy