Advertisement
E-Paper

সব ক’টা জানালা খুলে দাও না

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ স্বাধীন হল বাংলাদেশ। এ পারেও তখন আনন্দের বিস্ফোরণ। ‘জয় বাংলা’ উল্লাস, গান, উত্তাল বিজয় মিছিল। যেন পশ্চিমবঙ্গই পেয়েছে আর একটা আশ্চর্য স্বাধীনতার স্বাদ।খুব খুব মনে আছে, সেই দিনটির কথা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ইতিহাসের দিন তো বটেই, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। আমি একাই, হয়তো একা নই, অনেকে— সবাই ওই দিন বিপুল উত্তেজনা বোধ করায়, উল্লাসের শীর্ষে উঠে গিয়েছিলাম। এই শারীরিক কারণে ওই দিনটি আমৃত্যু ভুলব না। শীতকাল। ডিসেম্বরের মধ্যভাগ। তবে মনে পড়ছে, দুপুরবেলাটি ছিল মেঘলা।

মৃদুল দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:০৩
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আনন্দে কলকাতার রাস্তায় বিজয় মিছিল।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আনন্দে কলকাতার রাস্তায় বিজয় মিছিল।

খুব খুব মনে আছে, সেই দিনটির কথা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ইতিহাসের দিন তো বটেই, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। আমি একাই, হয়তো একা নই, অনেকে— সবাই ওই দিন বিপুল উত্তেজনা বোধ করায়, উল্লাসের শীর্ষে উঠে গিয়েছিলাম। এই শারীরিক কারণে ওই দিনটি আমৃত্যু ভুলব না।

শীতকাল। ডিসেম্বরের মধ্যভাগ। তবে মনে পড়ছে, দুপুরবেলাটি ছিল মেঘলা। বা কুয়াশাচ্ছন্ন। বিকেল গড়াচ্ছে সন্ধ্যার দিকে, ঠিক ওই সময়টায় বাড়িতে বাড়িতে রেডিয়োয় খবর বা ঘোষণা হতে লাগল: ঢাকার পতন ঘটেছে। ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনী, তখন বলা হত হানাদার খান সেনা— আত্মসমর্পণ করেছে। লোকজন রাস্তায় নেমে পড়ল। যে যে বেশে বাড়িতে ছিল, সেই পোশাকে। কেতাদুরস্ত চিকিৎসককে দেখা গেল লুঙ্গি পরে, গায়ে আলোয়ান জড়িয়ে উল্লাসরত। শয়ে শয়ে পুরুষ মহিলা শিশু বৃদ্ধ সড়কে সড়কে গণআনন্দে ধাবমান। ঢাকা জুয়েলার্সের মালিক, কর্মচারীরা দোকান ফেলে ভরসন্ধ্যায় নাচানাচি করছে। অলিগলি দিয়ে ‘জয় বাংলা’ গর্জন বড় রাস্তায় এসে মুহুর্মুহু বিস্ফোরিত হচ্ছে।

ওই উল্লসিত জনস্রোতে হঠাৎ আমার মনে হল, স্রেফ একটি খাটো ঢলঢলে পাজামা আর একটি স্যান্ডো গেঞ্জি পরনে আমি রাস্তায় নেমে এসেছি, পায়ে চপ্পলটি পর্যন্ত নেই। মুহূর্তেই পোশাকজনিত অস্বস্তি কেটে গেল, অধ্যাপক অনুপ সেনগুপ্তকে দেখলাম আমারই মতো পাজামায়, তদুপরি তিনি তাঁর আলোয়ানটি খুলে মাথার ওপর নিশানের মতো ওড়ানোর চেষ্টা করছেন, আশ্চর্য, সে চাদরটির রং সবুজ! কবি সোমনাথ মুখোপাধ্যায় দোলাচ্ছেন হাতে একটি জয় বাংলার নিশান। কোত্থেকে জোগাড় করেছেন কে জানে!

হঠাৎ আমার মনে হল, কোথায় শীত, কীসের সন্ধ্যা! দগ্ধ দুপুর যেন চৈত্রমাসের, দরদর করে ঘামছিলাম। উত্তেজনা আমার শরীরে ফুরফুর করতে লাগল, চোতপবনে যেমন লাগে। ওই দিন যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছিল বলেই আমার এ শারীরিক উপলব্ধি। ভিড়ের ভেতর আমি এ দিক সে দিক তাকিয়ে দেখছিলাম, আমার সঙ্গে আমার সমবয়সি বন্ধুরা ছিল, সবাই মাঝডিসেম্বরের শীতে ঘামছিল।

ওই মহাজনতার অনেকেই সেই সন্ধ্যায় ছুটছিলেন নদীর ঘাটের দিকে, গঙ্গা পেরিয়ে ব্যারাকপুর যাওয়ার জন্য। ব্যারাকপুরে সেনাছাউনি। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ব্যারাকপুরের সেনাছাউনির জওয়ানদের ভূমিকা বিরাট। লঞ্চে বহু মানুষজন ব্যারাকপুর যাচ্ছিলেন সেনাদের কুর্নিশ জানাতে, ‘জয় জওয়ান’ ধ্বনি তুলতে তুলতে।

নদীঘাট তক আমিও গিয়েছিলাম। তবে এই পোশাকে, খালি পায়ে ভিনশহরে যেতে দ্বিধা বোধ করলাম। এ পার থেকেই দেখতে লাগলাম ওপরে হালকা শব্দে আকাশে উঠে যাচ্ছে ধোঁয়াটে রেখা, তার পরই আকাশে ছড়াচ্ছে লাল, সবুজ আলো। হাউয়ের মতো কিছু একটা। এ পারে লোকজন বলতে লাগলেন, সেনারা উৎসবে মেতেছে।

ঘোষিত যুদ্ধ ১৩ দিনের। আসলে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭১-এর মার্চ থেকেই। ২৫ মার্চ পাক সেনারা ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে ধরে তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার এক ফাঁকে শেখ সাহেব একটা চিরকুটে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র লিখে বাইরে পাচার করে দিতে পেরেছিলেন। পর দিন ভোরে, ২৬ মার্চ, পাক সেনাবাহিনীর যে তরুণ বাঙালি সেনাপতি তাঁর বাহিনী নিয়ে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হন, সেই জেনারেল জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবের লেখা ওই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন: ‘অন বিহাফ অব আওয়ার বিলাভেড লিডার শেখ মুজিবুর রহমান, আই জেনারেল জিয়া ডিক্লেয়ার দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ...’ শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। ওই দিনটি, ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। আর, ভারতীয় সেনা, মুক্তিযুদ্ধের যৌথ বাহিনীর কাছে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনটি, ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের বিজয় দিবস। ১৯৭১-এর মার্চের ওই শেষ সপ্তাহ থেকেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় অলিগলি দিয়ে স্বাধীনতাকামীদের চোরাগোপ্তা মিছিল ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তুলে বড় রাস্তায় সেনাদের যানবাহনে বোমা ছুড়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকে, জেলাগুলিতে শুরু হয়ে যায় গেরিলা অ্যাম্বুশ। শতাব্দীর ইতিহাসে এই উপমহাদেশের ভয়ংকরতম আক্রমণ নামিয়ে আনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, বাংলাদেশের মুক্তিকামী কোটি কোটি মানুষের ওপর। বলা হয়ে থাকে, ৩০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এপ্রিল-মে মাস থেকেই পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরায় শরণার্থীরা ঢুকতে শুরু করেন, মুক্তিযুদ্ধের ন’মাসে ভারতে এক কোটির বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিলেন, এঁদের বেশির ভাগই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে।

তখন এই বাংলায় মধ্যবিত্তেরও ছিল বড় আকালের কাল। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। রেশনের চালের দাম ২ পয়সা বাড়লে বিক্ষোভ হয়। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী ৫ পয়সার পোস্টকার্ডে অতিরিক্ত উদ্বাস্তু ত্রাণের টিকিট বসিয়ে দিয়েছিলেন আরও ৫ পয়সার। ডবল দামে সানন্দে ভারতবাসী পোস্টকার্ড কিনেছে কয়েক বছর। সে যুগে ঘরে ঘরে টেলিফোন ছিল না, মোবাইলের প্রশ্নই নেই, ছিল না ইন্টারনেট। টিভি ছিল না, তবু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ উদ্বাস্তুদের আর্তনাদে, উড়ো খবরে, সংবাদপত্রপাঠে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বেল হয়েছে। গণহত্যা, নারীর লাঞ্ছনা, বিবিধ মানবতাবিরোধী অপরাধে শিউরে উঠেছে, ক্রুদ্ধ হয়েছে। কেন ইন্দিরা যুদ্ধে নামছেন না, দাবি উঠেছে প্রবল, ১৯৭২-এর এপ্রিল-মে থেকে। দেওয়াল লিখনে ক্রুদ্ধ সিপিএম লিখেছে: ইন্দিরা-ইয়াহিয়া এক হ্যায়।

১৯৭১। ভারতে ইতিহাসের ক্যালেন্ডারে ১৯৪৭-এর পর এই বছরটিই, কে না জানেন, সবচেয়ে জ্বলজ্বলে। আগুনে বা রক্তের হরফে লেখা যেন। নকশালবাড়ি আন্দোলনের তুঙ্গ বছর সেটি। জেলে জেলে সে বছর রাজনৈতিক বন্দিহত্যা এ রাজ্যে। কাশীপুর-বরানগর, বারাসত, কোন্নগর-নবগ্রামে নকশালপন্থী তরুণদের গণহত্যা। অলিতে গলিতে, বড় রাস্তায় খুনোখুনি। জেলায় জেলায়, কলকাতায়, সারা রাজ্যে।

আমি তখন ১৬ পেরিয়ে ১৭। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্যই ওই বছর আমাদের হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা তিন বার পিছিয়ে গেল। আমরা অনেকেই ভাবলাম, ডেবরা-গোপীবল্লভপুর থেকে গণফৌজ কলকাতার দিকে আসছে বলে রাষ্ট্র ভয়ে হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা পিছিয়ে দিচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি তখন নকশালপন্থী দমনে ইএফআর, সিআরপি নেমে গেছে। সিআরপি যেদিন মান্তাদাকে ধরতে আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছে, মা তখন মান্তাদাকে রান্নাঘরে ঢুকিয়ে দিল। একটা গামছা গলায় জড়িয়ে মান্তাদা আলু ভাজতে শুরু করল। দুদ্দাড়িয়ে সিআরপি ঢুকতেই মা বলল, ‘ইয়ে হামারা রাঁধুনি বামুন হ্যায়।’ হতাশ সিআরপি দপদপিয়ে আমাদের বাগান দিয়ে চলে যাওয়ার সময়ও মা চেঁচাল, ‘তুম হামারা বেগুনখেত নষ্ট কিঁউ করতা হ্যায়?’

মার্চের হায়ার সেকেন্ডারি পিছিয়ে পিছিয়ে হল পুজোর আগে। কী কাণ্ড, পরীক্ষার ওই সময়টাতেই নতুন রকম এক চোখের রোগ, চোখ ফুলে রক্তবর্ণ হয়ে যাওয়া, কনজাংটিভাইটিস হল অনেকের। লোকমুখে রোগটির নাম হয়ে গেল— জয় বাংলা। আশ্চর্যের বিষয়, ১৯৭৫-এ সেনা অভ্যুত্থানে সপরিবার মুজিব হত্যার সময়টিতেও পশ্চিমবঙ্গে ‘জয় বাংলা’ চোখে চোখে ফিরে এল।

৪০ বছর পর ট্রাইবুনাল বসিয়ে মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা পিতৃঘাতকদের বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। বিচার ও শাস্তি পর্ব চলছে ১৯৭১-এ পাক বাহিনীর দোসর রাজাকার আল বদর নেতাদেরও। পশ্চিমবঙ্গে বন্দিহত্যা, গণহত্যার ঘাতকদের বিচার হয়নি।

আমাদের হায়ার সেকেন্ডারির সময়টায়, ১৯৭১-এর অগস্ট-সেপ্টেম্বরে, বাংলাদেশে জোরদার হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ। শ্রীরামপুরে আমাদের বাড়ির অদূরে অমূল্য কানন নামে একটা মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবির চালু হয়ে গেছে। ব্যারাকপুর থেকে সেনা জওয়ানরা, তাঁদের অফিসাররা হরবখত বড় রাস্তায় সামরিক যানবাহন থেকে নেমে গটমটিয়ে আমাদের গলি দিয়ে শর্টকাটে যেতেন, অমূল্য কাননে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে। সেনাদের দেখলেই বাচ্চারা ‘জয় জওয়ান’ ধ্বনি দিয়ে চেঁচাত। ওঁরা হেসে হাত নাড়তেন। রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিগোলার মহড়ায় উল্লসিত হত শহরের মানুষ।

এক মুক্তিযোদ্ধা, তিনি নেতা গোছের, গায়ের রং বেশ কালো, মস্ত দাড়ি, আমাদের পাড়ায় ভাড়া থাকতেন। ফাঁক পেলেই মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে ক্যারম খেলে যেতেন। আবার কিছু দিনের জন্য উধাও হতেন। তাঁকে প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদা, পরে মুক্তিদা বলে ডেকেছি।

উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজে ভর্তি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। ৩ ডিসেম্বর ওই যুদ্ধঘোষণার ১৩ দিনের মাথায় বিজয়।

যুদ্ধের সময় সব পক্ষই প্রোপাগান্ডা চালায়। আমাদের রেডিয়ো, সংবাদপত্রে যুদ্ধের ভেতর জোর প্রচার চালানো হয়েছিল, পাক সেনাপতি টিক্কা খান নিহত হয়েছেন। গ্রেনেড ছুড়ে তাঁকে খতম করেছেন এক নারী মুক্তিযোদ্ধা রোশেনারা। পরে জানা যায়, টিক্কা বেঁচে আছেন। রোশেনারা বলে কেউ নেই। ডা. সূর্যকান্ত মিশ্রের মেয়ের নাম রোশেনারা। তাঁর জন্ম ১৯৭১-এ। সম্ভবত ডা. মিশ্র মেয়ের নাম দিয়েছেন ওই কল্পিত বীরাঙ্গনার নামে। তাতে কী, বাংলাদেশে হাজার হাজার রোশেনারা মুক্তিযুদ্ধে লড়ে বিজয়িনী হয়েছেন। প্রত্যহ প্রভাত-সূর্য তাঁদের কুর্নিশ করে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার বেশ ক’মাস পরের কথা। এক জনের বাড়ি যাব বলে রানাঘাট স্টেশনে নেমেছি। ভিড়ে ভিড়। বাংলাদেশ থেকে আসা একটি বিশেষ ট্রেন ঘিরে কয়েক হাজার মানুষ। তারা ওই ট্রেনে পাথর ছুড়ছে, জানলা ভাঙছে, থুতু ছেটাচ্ছে। ট্রেনের কামরাগুলিতে ছেঁড়া উর্দি, মলিন খাকি গেঞ্জিতে ভীত, কাতর, যুদ্ধবন্দি পাক সেনারা। ভারতের অভ্যন্তরে তাদের কোথাও নিয়ে য়াওয়া হচ্ছিল। ক্ষিপ্ত, ক্রুদ্ধ জনতাকে থামানোর চেষ্টা করছে ওই ট্রেনের পাহারারত ভারতীয় সেনারা। দেখে কষ্ট হল, বড় কষ্ট।

mridul_dasgupta@yahoo.co.in

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy