Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Traditional Bengali Veg Recipes

নববর্ষের ভোজের প্রথম পাত শুক্তো ছাড়া অসম্পূর্ণ! ও পার বাংলার শুক্তো চেখে দেখবেন নাকি?

অনেক রান্নাই এখন আর বাঙাল বাড়ির হেঁশেলে হয় না। তবে প্রথম পাতে শুক্তো খাওয়ার চল আজও রয়েছে। মুখের স্বাদ খুলতে লাজবাব এই পদ! রইল ও পার বাংলার এক হারিয়ে যাওয়া শুক্তোর প্রণালী।

image of Traditional Bengali Sukto Recipe

গরম ভাতে, প্রথম পাতে জমে যাবে পলতা পাতা আর লাউয়ের শুক্তো। ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র

সায়ন্তনী মহাপাত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৩৪
Share: Save:

চোখ মেলে দেখো, কান পেতে শোনো, শুনতে পাবে খালি মানুষেরই জয়জয়কার, দেখতে পাবে শুধু তারই স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কত শত আয়োজন! এ পৃথিবীটা যেন শুধু তার একার। তার ভোগবিলাসের একক চারণভূমি।

কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। এই তো মাত্র ক’দিন আগেও চৈত্র সংক্রান্তির কাকভোরে তড়িঘড়ি বিছানা ছাড়ত সিতারা বিবি। মাথায় কাপড় টেনে একখান চুপড়ি হাতে বেরিয়ে পড়ত মাঠের পথে। আজ যে চোদ্দোশাকের দিন। মাঠেঘাটে ঘুরে অনাবাদি চোদ্দোশাক তুলত সে। উবু হয়ে বসে মাটি তুলে গন্ধ নিত সিতারা, বুঝে নিতে চাইত মাটির প্রয়োজন। আহা! গত বর্ষায় টানা এক মাস জলে ডুবে থেকে বড্ড ক্ষতি হয়েছে মাটির, খোকার বাপকে খানিক বেশি কইরে গোবর সার ছড়াতে বলতে হবে’খন। কোঁচড় ভরে সিআপুনি, বৌটুনটুনি, বেতো শাক তুলতে তুলতে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিত মাটির উপর। এক মায়ের কষ্ট অন্য মায়ে ছাড়া কেই বা বোঝে! তাই তো লৌকিক আচারও সড় করে সময় করে দিয়েছে মায়ে মায়ে এই একটুখানিক বিশ্রম্ভালাপের।

এ গল্প তুমি শোনোনি না? তোমার বুঝি ভারি অবাক লাগে শাক, পাতা, মাটির গন্ধে ভরা এ সব গল্প শুনতে।

জানো, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কত প্রাচীন! যজুর্বেদের কালে বৈদ্যগুরু সোমের কাছে সমস্ত গুল্মলতা ভিড় করে এসে জানিয়েছিল কার কী রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা। আজকের যা আয়ুর্বেদ, তার ভিত্তিই এই বিশ্বাস যে, পঞ্চভূত, বৃক্ষলতাদি আর মানবদেহের সাম্য আর ঐক্যেই সুস্থতা।

এই পৃথিবী তা হলে কেবল মানুষের কেমন করে হয়!

তাই তো শরীরস্বাস্থ্য মেনে খাওয়া, না-খাওয়ার বিধান ফিরত মুখে মুখে। সদ্য বিয়োনো মেয়ের থালা আলো করে থাকত কালোজিরে ফোড়নের মেথির শাক আর কুলেখাড়ার ঝোল। খোকা দাঁতের ব্যথায় ককিয়ে উঠলে দাঁতের ফাঁকে মা গুঁজে দিতে উষনি শাকের ফুল, রাতের পর রাত না ঘুমোলে পাতে পড়ত পুকুরপাড়ের শুশুনি শাকের ভাজা। শুধু কি তাই! এক দিকে গম্ভীর মুখে পণ্ডিতমশাই নিদান দিতেন শাক চতুর্দশীর আর ফোগলা দাঁতে ঠাকমা ছড়া কাটতেন। ‘‘...চৈতে গিমা তিতা, বৈশাখে নালিতা মিঠা।’’ সময়ানুসারে, মানুষের পাতে মরসুমি আয়োজন পৌঁছে দেবার সে কত গল্প, কত ফিকির!

আজ বরং সে গল্প থাক। ওই দেখো চৈত্রের বেলায় মেজোবৌ কেমন টুকে টুকে পলতার পাতা তুলছে। আয়ুর্বেদের মতে পটল ত্রিদোষনাশক, তাই এই দিয়ে আজ ও শুক্তো রাঁধবে। ঠিক ঠাকমার মতো করে শিলে মটর ডাল বেটে পলতা পাতার বড়া ভাজবে। কালো জিরে আর রাঁধুনি ফোড়নে ঝিরি ঝিরি করে কাটা লাউ আর পাতলা সর্ষেবাটার জল ফুটে উঠলেই ছাড়বে সেই পলতা পাতার বড়া। নামানোর আগে খানিক ঘি। গরম ভাতে, প্রথম পাতে, গা মাখা মাখা সেই মিষ্টি-তেতোর যুগলবন্দি কোনও বন্দিশের চেয়ে কম কিসে!

এই স্বাদখানি তুমি ভুলে যেয়োনি মেয়ে। রান্না আর স্বাস্থ্যের এই কাব্যখানি তুমি পৌঁছে দিয়ো পরের প্রজন্মেও। মাটির পৃথিবীর সঙ্গে এই প্রাণের টানটুকু ভুলে গেলে কি চলে!

পলতা পাতা আর লাউয়ের শুক্তো

উপকরণ:

লাউ: (২৫০ গ্রাম) খোসা ছাড়িয়ে ঝিরি করে কাটা

পলতা পাতা: বেছে ,ধুয়ে, কুচোনো এক কাপ

মটর ডাল: ১/৪ কাপ

বেসন: ১ টেবিল চামচ

সর্ষে বাটা: ২ টেবিল চামচ

রাঁধুনি: ১/২ চা চামচ

কালো জিরে: সামান্য

আদা বাটা: ১/২ টেবিল চামচ

সর্ষের তেল: ১০০ গ্রাম

নুন, মিষ্টি: স্বাদমতো

ঘি: ১ চা চামচ

খাবার সোডা: ১ চিমটি

image of Traditional Bengali Sukto Recipe

নববর্ষের ভোজে রাখতেই পারেন ও পার বাংলার শুক্তো। ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র

পদ্ধতি:

মটর ডাল ভিজিয়ে রাখুন ২ ঘণ্টা তার পর সামান্য নুন দিয়ে বেটে নিন। খুব মিহি করে বাটবেন না যেন। এতে পলতা পাতা আর কালোজিরে দিন। বেশ করে মাখিয়ে নিন। কড়াইতে তেল গরম করে নেওয়ার পর মিশ্রণে নুন আর খাবার সোডা মিশিয়ে নিন। কম আঁচে, ছোট ছোট বড়া ভেজে তুলে রাখুন।

একটি পাত্রে এক চামচ তেল গরম করে তাতে রাঁধুনি আর কালোজিরে ফোড়ন দিন। তার পর কেটে রাখা লাউ, অদাবাটা দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। পরিমাণ মতো নুন দিয়ে ঢাকা দিয়ে খানিক রান্না করুন। জল শুকিয়ে এলে এতে সর্ষে বাটা ১ কাপ জলে গুলে দিয়ে দিন। স্বাদমতো নুন-মিষ্টি দিয়ে দিন। ঝোল ফুটে ঘন হলে বড়া দিয়ে খানিক ক্ষণ ঢেকে দিন। মিনিট পাঁচেক পর সামান্য ঘি ছড়িয়ে গ্যাসের আঁচ বন্ধ করে দিন। নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Veg Recipes New Year 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE