Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Nobel Prize in Physics

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণা, পদার্থবিদ্যায় নোবেল হপফিল্ড-হিন্টনের জুটির

পদার্থবিদ্যায় ২০২৪ সালের নোবেল প্রাপক দুই বিজ্ঞানীর গবেষণার বিষয়— কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ‘মেশিন লার্নিং’ সম্ভবপর করে তোলার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পালাবদল আনবে তাঁদের আবিষ্কার।

পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী দুই বিজ্ঞানী। (বাঁ দিকে) জন হপফিল্ড এবং জিওফ্রে হিন্টন (ডান দিকে)।

পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী দুই বিজ্ঞানী। (বাঁ দিকে) জন হপফিল্ড এবং জিওফ্রে হিন্টন (ডান দিকে)। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৫৪
Share: Save:

মঙ্গলবার এ বারের পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী দুই বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করল রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। জানিয়ে দেওয়া হল, ২০২৪ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারের জন্য যৌথ ভাবে মনোনীত হয়েছেন আমেরিকার জন জে হপফিল্ড এবং কানাডার জিওফ্রে হিন্টন।

পদার্থবিদ্যায় ২০২৪ সালের নোবেল প্রাপক দুই বিজ্ঞানীর গবেষণার বিষয়— কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ‘মেশিন লার্নিং’ সম্ভবপর করে তোলার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পালাবদল আনবে তাঁদের আবিষ্কার। কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ‘মেশিন লার্নিং’-এরই একটি মডেল।

কী এই ‘মেশিন লার্নিং’? সহজ ভাষায় বললে, মেশিন লার্নিংয়ের সারকথাটি হল, একটি শিশু যেমন করে পারিপার্শ্বিক থেকে শেখে, সে ভাবেই শেখে যন্ত্রও। শৈশব থেকে বার বার একই জিনিস দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতেই একটি শিশু শেখে। তেমনই নানা তথ্য বা ডেটা বার বার দেখিয়ে যন্ত্রকেও ‘শেখানো’ হয়। একই ধাঁচের ডেটাগুলি বার বার দেখতে দেখতেই যন্ত্র সেগুলি আত্মস্থ করে। পরে অজানা ডেটার ক্ষেত্রেও যন্ত্র কাজে লাগাতে পারে সেই লব্ধ জ্ঞান। সেই যন্ত্রকে ‘শেখাতেই’ কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের ব্যবহার। যন্ত্রকে শেখানোর নানা পদ্ধতি বা অ্যালগোরিদমের একটি হল কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক। মানবমস্তিষ্কে নিউরোন জুড়ে জুড়ে যেমন ‘নেটওয়ার্ক’ অর্থাৎ স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয়, সেই ধাঁচেই একাধিক কৃত্রিম নিউরাল ‘নোড’ জুড়ে জুড়ে তৈরি হয় এই কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক। আর সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ হপফিল্ড আর হিন্টনের আবিষ্কার। কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক বানাতে তাঁরা কাজে লাগিয়েছেন পরিসংখ্যানগত পদার্থবিদ্যার মৌলিক ধারণাকেই।

হপফিল্ড বানিয়ে ফেলেছিলেন এমন একটি মডেল, যা তথ্য জমা করে রাখার পাশাপাশি রিকনস্ট্রাক্ট, অর্থাৎ পুনর্গঠনও করতে পারে। এআই অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আদিযুগে এআই ‘জেনারেটিভ মডেল’কে প্রাথমিক রূপ দিয়েছিলেন এই হপফিল্ডই। আর ‘হপফিল্ড নেটওয়ার্ক’কে কাজে লাগিয়েই হিন্টন আবিষ্কার করেছিলেন ‘বোল্টজ্‌ম্যান মেশিন’, যার সাহায্যে স্বাধীন ভাবে দু’টি ডেটার মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে যন্ত্রও। আজকের দিনে যত রকমের নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়, তার নেপথ্যে রয়েছে এই দুই বিজ্ঞানীরই আবিষ্কার।

হিন্টন আগে গুগ্‌লে কাজ করতেন। ২০২৩ সালে চাকরি ছেড়ে গবেষণায় মন দেন। আপাতত তিনি টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। আর হপফিল্ড আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। এআইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হিন্টন। তাঁর কথায়, ‘‘আজকের দিনে এআইয়ের এই প্রসারকে সে যুগের শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করলেও ভুল হবে না। শুধু তফাতটা হল, সে সময় শারীরিক কর্মক্ষমতায় মানুষকে ছাপিয়ে গিয়েছিল যন্ত্র। আর এখন ছাপিয়ে যাবে বুদ্ধিমত্তাতেও।’’ তবু কোথাও যেন উঁকি দিয়ে যায় আশঙ্কাও, হিন্টন বলে চলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, শীঘ্রই মানুষকে হারিয়ে দেবে কম্পিউটার। আর প্রযুক্তি কখনও কখনও অভিশাপও হয়ে উঠতে পারে!’’

২০২৩ সালে ইলেকট্রন গতিবিদ্যা নিয়ে গবেষণার জন্য পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছিলেন আমেরিকার পিয়ের অগস্টিনি, হাঙ্গেরির ফেরেঙ্ক ক্রাউৎজ় এবং ফ্রান্সের অ্যানে এলহুইলার। এ বছরের নোবেলজয়ীরা নোবেল পদক ছাড়াও পাবেন একটি সনদপত্র এবং মোট ১১ বিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা, ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য আট কোটি ৯০ লক্ষ টাকারও বেশি।

অন্য বিষয়গুলি:

Nobel Prize 2024 Physics AI Machine Learning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE