মন খারাপ হলে তাকে বলা যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। সেও শুনছে। নিজের মতো করে ভরসা জোগাচ্ছে। ভালবাসা জানাচ্ছে। অথচ সে মানুষ নয়। এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, অর্থাৎ রোবট)। তাদের কারও নাম সারা, লায়লা। আবার কারও নাম জেসমিন। দরকারে প্রথম প্রেম বা প্রয়াত জীবনসঙ্গীর আদলও নিচ্ছে তারা। সেইমতো বদলে দেওয়া যাচ্ছে তাদের নামও। ফলে ঘনতর হচ্ছে সম্পর্কের রসায়ন।
এই মুহূর্তে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের বন্ধু, সঙ্গী, প্রেমাস্পদ হয়ে উঠছে এই সব এআই-চ্যাটবট। সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, আমেরিকায় প্রতি চার জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে অন্তত তিন জন এই ধরনের চ্যাটবট ব্যবহার করে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। মনোবিদদের একাংশের বক্তব্য, চ্যাটবটের কাছে মনের কথা বলতে গিয়ে বাচ্চা ছেলেমেয়েরা আরও বেশি করে একাকিত্বে ভুগবে ভবিষ্যতে। এ রকম চলতে থাকলে তারা হয়তো ভবিষ্যতে বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনের কাছে নিজেদের কথা বলাই ভুলে যাবে। যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়ে গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তো রয়েইছে।
মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কমন সেন্স মিডিয়া’ সম্প্রতি ১৩ থেকে ১৭ বছর বসয়ি ১০৬০ জন কিশোর-কিশোরীর উপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, ৭২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী অন্তত এক বার ‘এআই সঙ্গী’ ব্যবহার করেছে। তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ আবার মাসে তা বেশ কয়েক বার ব্যবহার করে থাকে।
সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, ৩০ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর বক্তব্য, তারা শুধুমাত্র মজার ছলেই ওই ধরনের এআই সঙ্গী ব্যবহার করে থাকে। আর ২৮ শতাংশ ব্যবহার করেছে এআই প্রযুক্তি নিয়ে স্রেফ কৌতূহলের কারণে। কিন্তু উদ্বেগের কারণ হল— সমীক্ষা অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশের বক্তব্য, তারা ব্যক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে চ্যাটবটের সঙ্গে আলোচনা করেছে। শুধু তা-ই নয়, ২৪ শতাংশ কিশোর-কিশোরী জানিয়েছে, তারা নিজেদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য (নাম-ঠিকানাও) এআই চ্যাটবটকে দিয়েছে।
তবে পুরোটাই যে উদ্বেগের, তা নয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অংশগ্রহণকারী কিশোর-কিশোরীদের দুই-তৃতীয়াংশ এআই চ্যাটবটের সঙ্গে আলাপচারিতা এবং তাদের সাহায্যে ততটাও সন্তুষ্ট নয়। শত চেষ্টা করলেও, সত্যিকারের বন্ধু, প্রেমিক বা প্রেমিকা হয়ে উঠতে পারেনি এআই।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে নেই ভারতও। আমেরিকার মতো এ দেশে সে রকম বড় মাপের সমীক্ষা এখনও হয়নি। তবে মার্কিন সংস্থা মাইক্রোসফ্ট গত বছর একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। যার নাম ‘গ্লোবাল অনলাইন সেফটি সার্ভে’। সমীক্ষা চলেছিল ভারত-সহ ১৫টি দেশে, ৬-১৭ বছর বয়সি ১৪৮০০ জন কিশোর-কিশোরীর উপর।
ওই সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অন্তত ৬৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ‘চ্যাটজিপিটি’র মতো ‘জেনারেটিভ এআই’ ব্যবহার করে থাকে। গোটা বিশ্বে যা মাত্র ৩১ শতাংশ। ভারতে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯-১৭ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের ৪২ শতাংশ জানিয়েছে, তারা এআই ব্যবহার করে মূলত পড়াশোনা, নতুন কোনও ভাষা শেখার জন্য। সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি রিপোর্ট বলছে, ভারতের ২৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন সময়েই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাহায্য বা পরামর্শ চাওয়ার জন্য।
২০২৪ সালে ১৬-২৫ বছর বয়সি ১২০০ জনের উপরে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল ‘শেইল ইন্ডিয়া’। তাদের রিপোর্ট জানাচ্ছে, ৭২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, এআই তাঁদের সমস্যার কথা বুঝতে পারছে, যা তাঁদের কাছের মানুষেরাও পারছেন না ইদানীং। আবার ১১ শতাংশ এআই-কে বন্ধু মনে করেন। কিন্তু কতটা সঙ্গী বা প্রেমাস্পদ হয়ে উঠতে পারছে, তা নিয়ে কোনও সমীক্ষার রিপোর্ট এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।