Advertisement
E-Paper

মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির দানবাকৃতি রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোল কি ভূরিভোজ শুরু করে দিল?

সেই রাক্ষসটার নাম ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’ । এটা আসলে একটি দানবাকৃতি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। যা আমাদের মতো প্রত্যেকটি গ্ল্যালাক্সিরই মাঝখানে থাকে একটি করে।

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মাঝখানে থাকা কৃষ্ণ গহ্বর 'স্যাজেটেরিয়াস এ *'। ছবি: শাটারস্টক

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মাঝখানে থাকা কৃষ্ণ গহ্বর 'স্যাজেটেরিয়াস এ *'। ছবি: শাটারস্টক

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ১৫:৪৯
Share
Save

আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে থাকা সেই দানবাকৃতি রাক্ষসটা কি আবার ফুর্তিতে ভূরিভোজ শুরু করে দিল? এত দিন তো জানতাম সে উপোসী থাকে সব সময়। আশপাশে তার তেমন খাবারদাবার জোটে না বলে।

সেই রাক্ষসটার নাম ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’। এটা আসলে একটি দানবাকৃতি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। যা আমাদের মতো প্রত্যেকটি গ্ল্যালাক্সিরই মাঝখানে থাকে একটি করে।

গত ১৯ এপ্রিল থেকে ২৩ মে-র মধ্যে চার দিন অদ্ভুত একটা আলোর ঝলসানি এই ব্ল্যাক হোল থেকে দেখা গিয়েছে। যার ঔজ্জ্বল্য সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছিল গত ১৩ মে। যা দেখে বিজ্ঞানীদের ধারণা আমাদের গ্যালাক্সির মাঝখানে থাকা দানবাকৃতি ব্ল্যাক হোলটি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শুরু করে দিয়েছে ভূরিভোজ। গত ২১ বছরে আমাদের গ্যালাক্সির এই ব্ল্যাক হোলটিকে এই ভাবে তার রাক্ষুসে ক্ষিদে মেটাতে দেখা যায়নি।

আমেরিকার হাউইয়ে বসানো দশ মিটার ব্যাসের দুটি ‘কেক টেলিস্কোপ’ ও চিলিতে বসানো প্রায় সাড়ে আট মিটার ব্যাসের ‘ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ’ (ভিএলটি)-র মাধ্যমেই ব্ল্যাক হোলটি থেকে এই আলোর ঝলসানি দেখা গিয়েছে। এতটা আলোর ঝলসানি ওই ব্ল্যাক হোলটি থেকে এর আগে আমরা কখনও দেখিনি।

সব গ্যালাক্সিরই মাঝখানে যে দানবাকৃতি রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলটি থাকে তারা হয় খুবই ‘খাই খাই’ স্বভাবের। আশেপাশের যা পায়, তাই টুক করে গিলে খায়। তা সে কোনও পদার্থ বা কণাই হোক, বা ঘন জমাট বাঁধা গ্যাসের মেঘ, কাছে এসে পড়লে ওই রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলগুলি তাদের জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে সেগুলিকে গিলে নেয়। সেগুলি আর ব্ল্যাক হোল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। কিন্তু আমাদের গ্যালাক্সির মাঝখানে থাকা রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোল ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’-কে আমরা এত দিন উপোসী থাকতেই দেখেছি। স্বভাবটা তার 'খাই খাই' হলেও ধারেকাছে সে বিশেষ খাবারদাবার পায় না বলে। যদিও এ বার এই আলোর ঝলসানি দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন বরাবরের উপোস মিটিয়ে আবার বোধহয় খাওয়া দাওয়া শুরু করল আমাদের গ্যালাক্সির মাঝখানে থাকা ব্ল্যাক হোলটি।

কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর অধিকর্তা দেশের বিশিষ্ট ব্ল্যাক হোল বিশেষজ্ঞ সন্দীপ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, এমন উজ্জ্বল আলোর ঝলসানি আমাদের গ্যালাক্সির মাঝখানে থাকা ব্ল্যাক হোলটি থেকে এর আগে দেখা যায়নি। এর আগে এই ব্ল্যাক হোলটির যে সর্বোচ্চ ঔজ্জ্বল্য দেখা গিয়েছিল, তার মাত্রা ছিল ৩ মিলিজেনস্কি। আর এ বার গত ১৩ মে ওই ব্ল্যাক হোলটি থেকে যে আলোর ঝলসানি দেখা গিয়েছে তার মাত্রা ৬.২ মিলিজেনস্কি। এর মানে গত দু’দশকের মধ্যে এই ব্ল্যাক হোলটির যে ঔজ্জ্বল্য দেখা গিয়েছিল, গত ১৩ মে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। এই ব্ল্যাক হোলটি আছে আমাদের থেকে 26 হাজার আলোকবর্ষ দূরে। তার মানে যে আলোর ঝলসানিটা মে মাসে আমাদের চোখে ধরা পড়ল তা হয়েছিল 26 হাজার বছর আগে।সেই আলো এত দিনে আমাদের কাছে পৌঁছল।

কৃষ্ণ গহ্বরে দেখতে পাওয়া আলোর ঝলকানির সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনের চিত্র।

আলোর ঝলসানি কেন হঠাৎ বেড়ে গেল?

সন্দীপ বলছেন, “সাধারণত কোনও তারা কাছে এসে পড়লে তাকে গিলে খেতে এমন ধরণের রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলের সময় লাগে এক থেকে দু'-তিন বছর। কোনও তারাকে যদি ব্ল্যাকহোল গিলে খেত, তা হলে আলোর ঝলসানি দেখা যেত এক থেকে দু'-তিন বছর ধরে। কিন্তু এই ঘটনায় আলোর ঝলসানি দেখা গিয়েছে মোট চার দিন। প্রথম দিন ১৯ শে এপ্রিল, যে দিন ঔজ্জ্বল্যের পরিমাণ ছিল অর্ধেক মিলিজেনস্কি। দ্বিতীয় দিন ২০ শে এপ্রিল ঔজ্জ্বল্যের মাত্রা ছিল ২ মিলিজেনস্কি, ১৩ মে সেটা বেড়ে হয় ৬.২ মিলিজেনস্কি। ২৩ সেটা কমে হয় ১ মিলিজেনস্কি। তার মানে ঔজ্জ্বল্যের বাড়া-কমা হয়েছে। আরও যেটা অবাক করার ঘটনা, যে দিন ঔজ্জ্বল্যের মাত্রা সবচেয়ে বেশি বেড়ে হল ৬.২ মিলিজেনস্কি, সেই ১৩ মে-তেই এক ঘন্টা পরে ঔজ্জ্বল্যের মাত্রা কমে দাঁড়ায় অর্ধেক মিলিজেনস্কি। এই ঘটনা থেকে আমার মনে হচ্ছে ওই ব্ল্যাক হোলের খুব কাছে দুটি বিপরীতধর্মী চৌম্বক ক্ষেত্র একে অপরকে ধ্বংস করে দেওয়ার ফলেই ওই আলোর ঝলসানি দেখা গিয়েছে। তবে এটুকু বলতে পারি, আমাদের গ্যালাক্সির মাঝখানে থাকা ব্ল্যাক হোলটির আচার আচরণ বোঝার জন্য এখনও পর্যন্ত যে কয়েকটি তাত্ত্বিক মডেল রয়েছে তার কোনটি দিয়েই এই ঘটনাকে সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা এখনও পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছে না।"

সন্দীপ এও বলছেন, “হতে পারে আমাদের গ্যালাক্সির মাঝখানে থাকা উপোসী ব্ল্যাক হোলটা আবার ফূর্তিতে ভূরিভোজ শুরু করে দিল!"

Black Hole Sagittarius A* Milky Way Galaxy স্যাজিটেরিয়াস এ*

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।