E-Paper

সিলিকন অতীত, নতুন দিশা দেখাবে ‘২ডি’ কম্পিউটার

ইলেকট্রনিক সার্কিটে ‘সিএমওএস’-এর ব্যবহার বেশ প্রচলিত। এতে যেমন বিদ্যুতের সাশ্রয় হয়, সংশ্লিষ্ট যন্ত্র আকারে ছোট ও বেশি কর্মক্ষম হয়।

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৪০
সুবীর ঘোষ ও সপ্তর্ষি দাস।

সুবীর ঘোষ ও সপ্তর্ষি দাস। নিজস্ব চিত্র ।

দেহের ক্ষেত্রে যা কোষ, কম্পিউটারে তা সিলিকনের সঙ্গে তুলনীয়। গত প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে কম্পিউটার তৈরি থেকে শুরু করে তার প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, সবটাই দাঁড়িয়ে সিলিকনের উপরে। তবে সিলিকনের সেই সুদিন বোধহয় এ বার ফুরোতে চলেছে। সৌজন্যে, আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বাঙালি গবেষকের আবিষ্কার। ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশ, তাঁরা পরীক্ষামূলক ভাবে বিশ্বের প্রথম সিলিকনবিহীন ‘কমপ্লিমেন্টরি মেটাল-অক্সাইড সেমিকন্ডাক্টর’ সংক্ষেপে ‘সিএমওএস’ কম্পিউটার তৈরি করেছেন। আণুবীক্ষণিক, ন্যূনতম বেধের ‘২ডি’ বা দ্বিমাত্রিক উপাদানে তৈরি ওই কম্পিউটার আগামী দিনে সিলিকন-নির্ভরতা কমিয়ে ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্রে বিপ্লব আনবে, আশা গবেষক দলের অন্যতম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স ও মেকানিক্সের অধ্যাপক সপ্তর্ষি দাসের।

ইলেকট্রনিক সার্কিটে ‘সিএমওএস’-এর ব্যবহার বেশ প্রচলিত। এতে যেমন বিদ্যুতের সাশ্রয় হয়, সংশ্লিষ্ট যন্ত্র আকারে ছোট ও বেশি কর্মক্ষম হয়। সিলিকনের বদলে কম্পিউটারে দ্বিমাত্রিক উপাদান ব্যবহারের মূলেও রয়েছে সেই যুক্তি। তবে এই গবেষণার মূল সাফল্য লুকিয়ে সিলিকন ছাড়া উন্নত প্রযুক্তির কম্পিউটার তৈরিতে, মত গবেষক দলের অন্য সদস্য সুবীর ঘোষের। তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী যন্ত্রাংশ তৈরিতে দ্বিমাত্রিক উপাদান হিসেবে মলিবডেনাম ডাইসালফাইড ও টাংস্টেন ডাইসেলেনাইড ব্যবহার করা হয়েছে। সুবিধা হল, বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রয়োজনে এই দ্বিমাত্রিক উপাদান সহজে অনুকরণীয়।”

সিলিকনের পরিবর্তনশীল তড়িৎ পরিবাহিতাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেই নীতির ভিত্তিতে ১৯৪৭-এ জন্ম সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস, ট্রানজ়িস্টরের। তার হাত ধরে পরবর্তীতে বিপ্লব ঘটেছে ইলেকট্রনিক্সে। তবে গত প্রায় ৭০ বছরে ইলেকট্রনিক যন্ত্র আকারে ক্রমাগত ছোট হয়ে চলেছে। সেখানে সিলিকনের উপস্থিতি সমস্যা তৈরি করছে। কারণ, একটি নির্দিষ্ট মাপের ছোট সিলিকন ট্রানজ়িস্টর তৈরি করা সম্ভব নয়। তাতে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধি অথচ কর্মক্ষমতা কমার সম্ভাবনা থাকে।

এই সমস্যার সমাধান সম্ভব দ্বিমাত্রিক উপাদান ব্যবহারে। সুবীরের ব্যাখ্যা, সিলিকন যদি একটি বই হয়, ওই দ্বিমাত্রিক উপাদানকে তার একটি পাতার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এতে যন্ত্র উল্লেখযোগ্য ভাবে ছোট করা সম্ভব, তার পারদর্শিতার সঙ্গে আপস না করে। আপাতত, ‘সিএমওএস’ কম্পিউটার তিন ভোল্টের নীচে ও প্রায় ২৫ কিলোহার্ৎজ় কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করতে পারছে। তা প্রচলিত সিলিকন-নির্ভর কম্পিউটারের চেয়ে বেশ পিছিয়ে। রয়েছে অন্য কিছু খামতিও। তবে আগামী দিনে সেই সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ইলেকট্রনিক্সের জগতে নতুন দিশা দেখাবে দ্বিমাত্রিক উপাদান-নির্ভর প্রযুক্তি, আশাবাদী গবেষকেরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

silicon Pennsylvania

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy