E-Paper

হৃদয় বিনিময়, স্পন্দন নয়া চিকিৎসা পদ্ধতিতে

মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে হৃদ্‌যন্ত্র বার করে তা অন্য রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যেমন কঠিন কাজ, তেমনই ব্যয়বহুল। বহু সময় চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈতিক জটিলতার মুখেও পড়তে হয় বিশেষজ্ঞদের। নতুন গবেষণা প্রায় সব দিক রক্ষা করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৩৮

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

থেমে যাওয়া হৃদয়ে ফের স্পন্দন!

এই কর্মকাণ্ডই করে ফেলেছেন আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী। বিষয়টা এমন— মারা গিয়েছেন জনৈক ব্যক্তি। থেমে গিয়েছে তাঁর হৃদ্‌যন্ত্র। কিন্তু সেই যন্ত্রেই ফের প্রাণ ফিরিয়ে দিয়ে তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে অন্য রোগীর দেহে। (তুলনামূলক ভাবে) কম খরচে হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপনের দু’টি নতুন পদ্ধতির সন্ধান দিলেন আমেরিকার কয়েক জন হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ। ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতিতে মানবদেহে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে হৃদ্‌যন্ত্র। বাঁচানো হয়েছে ৩ মাসের একটি শিশুকে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন নর্থ ক্যারোলাইনার ডুরহ্যামের ডিউক ইউনিভার্সিটি এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী চিকিৎসকেরা।

মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে হৃদ্‌যন্ত্র বার করে তা অন্য রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যেমন কঠিন কাজ, তেমনই ব্যয়বহুল। বহু সময় চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈতিক জটিলতার মুখেও পড়তে হয় বিশেষজ্ঞদের। নতুন গবেষণা প্রায় সব দিক রক্ষা করেছে। নতুন দু’টি পদ্ধতির একটি হল— এ ক্ষেত্রে কোনও মৃত শিশুর শরীর থেকে হৃৎপিণ্ডটি বার করে সেটিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পুনরায় চালু করা এবং তার পরে সেটিকে অন্য কোনও জীবিত গ্রহীতা শিশুর দেহে প্রতিস্থাপন। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আমেরিকায় প্রতি বছর ৫০০ শিশুর দেহে হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু তার পরেও বহু শিশু হৃদ্‌যন্ত্র-দাতার অপেক্ষায় থাকতে থাকতেই প্রাণ হারায়। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল— কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মৃত ব্যক্তির শরীরের ভিতরে তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রটিকে বিশেষ দ্রবণের সাহায্যে সংরক্ষণ। পরে তা প্রতিস্থাপন। শল্যচিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই পদ্ধতিতেও শিশুদেহে হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রতিস্থাপন বিষয়ক শল্যচিকিৎসক (ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন) রবার্ট মন্টগোমারি বলেন, ‘‘এই নতুন দু’টি পদ্ধতি চিকিৎসা বিজ্ঞানে অগ্রগতির বার্তা বহন করছে।’’

বর্তমানে হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপনের যে সব পদ্ধতি চালু রয়েছে, তাতে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দান করা হৃদ্‌যন্ত্র মেলে ব্রেন-ডেড রোগীর (যাঁদের মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটেছে আগেই) থেকে। কিন্তু এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা সংখ্যায় কম। এর চেয়ে বহু গুণ বেশি চাহিদা রয়েছে হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপনের। তা ছাড়া, অনেক সময়ে হৃদ্‌যন্ত্র দাতার ওজন কোনও ভাবেই ৪০ কেজি-র কম হতে পারবে না। অতএব কোনও বাচ্চার মৃত্যুর পরে তার শরীর থেকে হৃৎপিণ্ড নিয়ে কোনও শিশুকে দেওয়া সম্ভব হয় না।

এই সমস্যাগুলির কথা মাথায় রেখে নর্থ ক্যারোলাইনার ডিউক ইউনিভার্সিটি-র হৃদ্‌রোগ শল্যচিকিৎসক (কার্ডিয়াক সার্জন) জোসেফ টুরেক ও তাঁর সহকর্মীরা শিশুদেহে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের বিষয়ে একটি নতুন পথ খুঁজে বার করেন। একটি নলের সাহায্যে অক্সিজেন-সহ রক্ত পাম্প করে হৃদ্‌যন্ত্রে প্রবেশ করানো হয়। তার পর সেই রক্ত বাম ভেন্ট্রিকল দিয়ে বার করে দেওয়া হয়। সেই রক্ত পুনরায় অক্সিজেন-পূরণ করে ফের হৃদ্‌যন্ত্রে প্রবেশ করানো হয়। এই পদ্ধতিটি প্রথমে একটি ১২ সপ্তাহ বয়সি শুয়োর ছানার দেহে পরীক্ষামূলক ভাবে করা হয়। সাফল্য মিলতে এ বছরের গোড়ায় প্রথম মানুষের দেহে পরীক্ষাটি করা হয়। এক মাসের একটি শিশুর মৃতদেহ থেকে হৃদ্‌যন্ত্র বার করে শরীরের বাইরে সেটিকে ‘রিঅক্সিজেনেটেড’ রক্ত দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে চালু করা হয় এবং তার পর একটি তিন মাসের শিশুর দেহে বসানো হয়। প্রতিস্থাপনের কয়েক মাসে পরে দেখা যায় হৃদ্‌যন্ত্রটি গ্রহীতার শরীরে স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করছে।

দ্বিতীয় পদ্ধতিটির সন্ধান দিয়েছে ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞেরা মৃতদেহের হৃদ্‌যন্ত্রের অ্যাওর্টা দিয়ে অক্সিজেন-সহ তরল প্রবেশ করিয়ে সেটিকে পূর্ণ করা হয়। এতে লোহিত রক্ত কণিকা, ইলক্ট্রোলাইট, ভিটামিন ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রবণ (কোল্ড প্রিজ়ারভেটিভ সলিউশন) থাকে। তাতে হৃদ্‌যন্ত্রটির ‘মৃত্যু প্রক্রিয়া’থমকে যায়। সেটি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। এতে মৃত ব্যক্তির থেকে জীবিতের দেহে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের মাঝে যন্ত্রটিকে ‘রিস্টার্ট’ করার প্রয়োজন হয় না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

heart transplant heart surgery Research

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy