Advertisement
E-Paper

‘আজব’ ধূমকেতু জল ওগরাচ্ছে মহাকাশে!

কুলকুচি করছে ধূমকেতু! গার্গল বা কুলকুচি করে আমরা যেমন মুখ থেকে জল বের করে দিই, ঠিক তেমনই মহাকাশে জল উগরে দিচ্ছে ধূমকেতু।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৫ ১৩:৪১
মহাকাশে জল ওগড়াচ্ছে ধূমকেতু ‘শ্যুরিমোভ-গেরাশিমেঙ্কো’। ছবি: নাসার সৌজন্যে।

মহাকাশে জল ওগড়াচ্ছে ধূমকেতু ‘শ্যুরিমোভ-গেরাশিমেঙ্কো’। ছবি: নাসার সৌজন্যে।

কুলকুচি করছে ধূমকেতু!

গার্গল বা কুলকুচি করে আমরা যেমন মুখ থেকে জল বের করে দিই, ঠিক তেমনই মহাকাশে জল উগরে দিচ্ছে ধূমকেতু।

এত দিন মহাকাশে এই ভাবে জল ছড়াতে দেখা যায়নি কোনও গ্রহ, উপগ্রহ বা মহাজাগতিক বস্তুকেই। জল তো পৃথিবীতে কম নেই। কিন্তু প্রায় দু’শো কোটি বছর আগে পৃথিবীর জন্মের পর কস্মিন কালেও এই গ্রহ জল ছড়ায়নি মহাকাশে। তার জলের বিপুল ভান্ডার সে ধরে রেখেছে তার অন্দরেই।

এখানেই শেষ নয়। ‘পাগলাটে’ এই ধূমকেতুর গা থেকে বেরিয়ে আসছে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের পচা ডিমের মতো মতো গন্ধ। বেরিয়ে আসছে অক্সিজেন গ্যাসের অণুও।

ধূমকেতু আগাগোড়াই বরফে মোড়া। কিন্তু সেই বরফ যে মহাকাশের হিমশীতল ঠান্ডায় গলে গিয়ে জল হয়ে যেতে পারে আর সেই জল যে ফোয়ারার মতো মহাকাশে উগরে দিতে পারে ধূমকেতু, তা মহাকাশ বিজ্ঞানীদের এত দিন জানা ছিল না।

কিন্তু ২৯ জুলাই আর ১৩ অগস্টে আমাদের সেই বিশ্বাসকে দারুণ ভাবে নাড়া দিয়েছে সেই ধূমকেতু ‘শ্যুরিমোভ-গেরাশিমেঙ্কো’, গত নভেম্বরে যেখানে প্রথম ‘পদার্পণ’ ঘটেছিল মানবসভ্যতার।

এই সৌরমণ্ডলের সূর্যকে ঘিরে চক্কর মারার কক্ষপথে ওই দু’টি দিনেই ধূমকেতুটি সবচেয়ে কাছে এসেছিল সূর্যের। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলে ‘পেরিজে’। দু’টি দিনেই সূর্য থেকে ধূমকেতুটি ছিল মাত্র ১৮ কোটি ৬০ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। ওই সময় অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো অত্যন্ত দুর্গন্ধের দু’টি গ্যাসও মহাকাশে ছড়িয়েছে ‘শ্যুরিমোভ-গেরাশিমেঙ্কো’।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) মহাকাশযান ‘রোসেটা’র তোলা সেই ছবি লরেল থেকে ই মেলে পাঠিয়ে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার সিকিওরিটি সেন্টারের কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিল্লোল গুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘‘এই ঘটনা রীতিমতো অভূতপূর্ব। এর আগে কখনও কোনও ধূমকেতুকে এই ভাবে মহাকাশে জল ছড়িয়ে দিতে দেখা যায়নি।’’

কী ভাবে ওই জলের ফোয়ারা উঠে আসছে ধূমকেতু থেকে?

হিল্লোলবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছনোর ফলে সূর্যের তাপে ধূমকেতুর পিঠে বরফের চাঙর গলে জল হয়ে যাচ্ছে। আর সেই জল সূর্যের জোরালো টানে ফোয়ারার মতো উঠে এসে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ছে।’’

জল তো পৃথিবীতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আর পৃথিবীর ওপর সূর্যের অভিকর্ষ বলও তো যথেষ্টই জোরালো।

তা হলে কেন সূর্যের টানে পৃথিবার জলরাশি ফোয়ারার মতো উঠে গিয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে না?


মহাকাশে জল ওগরাচ্ছে ‘শ্যুরিমোভ-গেরাশিমেঙ্কো’।

হিল্লোলবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘এর কারণ, পৃথিবীর নিজের জোরালো অভিকর্ষ বল রয়েছে। সেই বলই পৃথিবীর বিপুল জলরাশিকে তার কেন্দ্রের দিকে টেনে রাখে। সূর্যের টানে সেই জলকে ফোয়ারার মতো উঠে গিয়ে তাকে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়তে দেয় না। কিন্তু, ধূমকেতুর অভিকর্ষ বল অত জোরালো নয়। তাই সূর্যের টানে তার জলরাশি ফোয়ারার মতো উঠে এসে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’’

‘রোসেটা’ মহাকাশযানে লাগানো গন্ধ শোঁকার যন্ত্র ‘রোজিনা’য় যে অ্যামোনিয়া আর হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের গন্ধ পাওয়া গিয়েছে, সেটাও মহাকাশে এত দিন কোনও মহাজাগতিক বস্তু থেকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন হিল্লোলবাবু।

এ বার জানা গেল, শুধুই জল নয়, ধূমকেতু অক্সিজেন গ্যাসের অণু, এমনকী, বিষাক্ত গ্যাসের গন্ধও ছড়ায় মহাকাশে।

comet water oxygen space amonia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy