Advertisement
E-Paper

মহাশূন্যের বুক চিরে সেকেন্ডে ৯৫৪ কিমি বেগে ছুটছে প্রকাণ্ড কৃষ্ণগহ্বর! অভিমুখ কোন দিকে? ধরা পড়ল নাসার ক্যামেরায়

বিজ্ঞানীরা দুরন্ত এই কৃষ্ণগহ্বরের নাম দিয়েছেন আরবিএইচ-১। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্যের যা ভর, তার চেয়ে এই কৃষ্ণগহ্বরের ভর এক কোটি গুণ বেশি। অর্থাৎ, এমন এক কোটি সূর্যকে গিলে নিতে পারে আরবিএইচ-১।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:০২
মহাশূন্যে কৃষ্ণগহ্বরের গতিবিধিতে চোখ বিজ্ঞানীদের।

মহাশূন্যে কৃষ্ণগহ্বরের গতিবিধিতে চোখ বিজ্ঞানীদের। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

মহাশূন্যের বুক চিরে প্রবল গতিতে ছুটে চলেছে অতিকায় এক কৃষ্ণগহ্বর! গতি সেকেন্ডে প্রায় ৯৫৪ কিলোমিটার! এমনই অভিনব কাণ্ড সম্প্রতি ধরা প়়ড়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেম্‌স ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ক্যামেরায়। দেখা গিয়েছে, কোনও এক অদৃশ্য শক্তির ঠেলায় নিজস্ব ছায়াপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছে কৃষ্ণগহ্বর। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে তার পর থেকে সে ছুটে চলেছে। পিছনে রয়েছে দু’লক্ষ আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত নক্ষত্রের কাঠামো।

বিজ্ঞানীরা দুরন্ত এই কৃষ্ণগহ্বরের নাম দিয়েছেন আরবিএইচ-১। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্যের যা ভর, তার চেয়ে এই কৃষ্ণগহ্বরের ভর এক কোটি গুণ বেশি। অর্থাৎ, এমন এক কোটি সূর্যকে গিলে নিতে পারে আরবিএইচ-১। আর যে গতিতে এই কৃষ্ণগহ্বর ছুটছে, তা আলোর বেগের ০.৩২ শতাংশ। প্রথম বার কৃষ্ণগহ্বরটির খোঁজ মিলেছিল ২০২৩ সালে। সে যে প্রবল গতিতে এগোচ্ছে, তার একটা আভাসও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তখনও এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন না। আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী সেই থেকে কৃষ্ণগহ্বরটির খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। ব্যবহার করছিলেন জেম্‌স ওয়েব টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য। সম্প্রতি তার মাধ্যমেই কৃষ্ণগহ্বরের গতিবিধি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এই সংক্রান্ত গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থ বিজ্ঞানী পিটার ভ্যান ডোক্কাম।

পিটারদের পর্যবেক্ষণ, নিজের ছায়াপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছে আরবিএইচ-১। তার পর সেই ছায়াপথেরই ধার ঘেঁষে সে এগিয়ে চলেছে। অভিমুখ আন্তঃছায়াপথ শূন্যস্থানের দিকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকাশে সেকেন্ডে ৯৫৪ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলা বস্তু মোটেই বিরল নয়। এর চেয়েও বেশি গতিতে ছোটার নজির রয়েছে। তাই কৃষ্ণগহ্বরটির দৌড় বিজ্ঞানীদের আদৌ চমকিত করেনি। চমক লেগেছে অন্যত্র এবং সে চমকে তাঁদের চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছে।

এই বিপুল ভরের কৃষ্ণগহ্বর কী ভাবে নিজের ছায়াপথ থেকে বেরিয়ে গেল, কী পরিমাণ প্রবল শক্তির ধাক্কা তাকে খেতে হয়েছে, তা-ই বিজ্ঞানীদের মাথাব্যথার কারণ। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, অভূতপূর্ব কোনও মহাকর্ষীয় ধাক্কা খেয়েছে আরবিএইচ-১। এই ধাক্কার উৎস নিয়ে আলোচনা চলছে। রহস্য লুকিয়ে আছে সেখানেই। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, একাধিক সুবিশাল কৃষ্ণগহ্বরের একত্রীভবনের ফলে যে মহাকর্ষীয় সঙ্কোচন (গ্র্যাভিটেশনাল রিকয়েল) তৈরি হয়েছিল, তা-ই আরবিএইচ-১কে তার ছায়াপথ থেকে ঠেলে বার করে দিয়েছে।

এই ধরনের ঘটনা যে ঘটতে পারে, তার পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। বলা হয়েছিল, মহাকর্ষীয় তরঙ্গের পশ্চাদপস

রণ বা ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে বিবিধ পদার্থের বিচ্ছুরণের পরিণতি হতে পারে কৃষ্ণগহ্বরের (সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল) বিচ্যুতি। আরবিএইচ-১-এর মধ্যে তার ছায়াই দেখা যাচ্ছে বলে একাংশের দাবি।

জালের উপর দিয়ে মাকড়সা যে ভাবে এগোয়, সে ভাবেই মহাশূন্যের এগিয়ে চলে বিশালাকায় কৃষ্ণগহ্বরগুলি। তাদের কেন্দ্র করে চারপাশে একে একে জড়ো হয় ছায়াপথ। সংশ্লিষ্ট কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষণ এবং আচরণের উপর ওই সমস্ত ছায়াপথের বিবর্তন নির্ভর করে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কৃষ্ণগহ্বরগুলিকে একটি জায়গায় স্থির থাকতে হবে। একটি তত্ত্ব অনুসারে, মহাকাশের প্রকাণ্ড কোনও বিশৃঙ্খলা মাঝেমধ্যে কৃষ্ণগহ্বরকে তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে। তখন তা সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে। বেরোনোর সময় নিজের সঙ্গে টেনে নেয় আশপাশের কিছু বস্তুকেও। গত কয়েক বছরে কৃষ্ণগহ্বর সংক্রান্ত এই তত্ত্বের সমর্থনে একাধিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই প্রথম কোনও ধাবমান কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মহাশূন্যে এমন আরও অনেক কৃষ্ণগহ্বর অদৃশ্য হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। আগামী দিনে তাদের আবিষ্কারও সম্ভব।

black hole Supermassive Black Hole Space Science
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy