E-Paper

কৃষ্ণ গহ্বর রহস্যে করোনাই কারিগর

আদতে ব্ল্যাক হোল হল মহাকাশের এমন অঞ্চল যেখানে বিশাল পরিমাণ ভর একটি ক্ষুদ্র আয়তনে জড়ো থাকে। তার মহাকর্ষীয় টান থেকে আলোও পার পায় না। ব্ল্যাক হোলকে সরাসরি দেখা সম্ভব নয়।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৭

ছবি: সংগৃহীত।

ব্ল্যাক হোল মানেই মহাকাশের রহস্য। সেই কৃষ্ণ গহ্বরে আলোর সন্ধানে নেমে চার ভারতীয় বিজ্ঞানীর চোখে পড়ল এক রহস্যময় ঝলকানি! মহাজগতের ফেলু মিত্তিররা বিস্তর তথ্য-তত্ত্ব ঘাঁটাঘাটি করে জানালেন, ওই আলোর খেলার কারিগর অন্য কেউ নয়, করোনা। এই করোনা অবশ্য অতিমারির খলনায়ক নয়, এক প্লাজ়মা মেঘের ডাকনাম। এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক জার্নালে। চার বিজ্ঞানীর মধ্যে তিন জনই বঙ্গ সন্তান।

আদতে ব্ল্যাক হোল হল মহাকাশের এমন অঞ্চল যেখানে বিশাল পরিমাণ ভর একটি ক্ষুদ্র আয়তনে জড়ো থাকে। তার মহাকর্ষীয় টান থেকে আলোও পার পায় না। ব্ল্যাক হোলকে সরাসরি দেখা সম্ভব নয়। তবে ব্ল্যাক হোল যখন কোনও নক্ষত্রের সঙ্গী হয়, তখন সঙ্গী নক্ষত্র থেকে প্রবল আকর্ষণ টেনে নিতে থাকে টুকরো-টুকরো অংশ। সেই সব অংশগুলি প্রবল মাধ্যাকর্ষণের টানে বলয়াকারে ঘুরতে ঘুরতে তৈরি করে ‘অ্যাক্রিশন ডিস্ক’। সেই সব পদার্থনির্গত এক্স রশ্মি মহাকাশ দূরবীনে ধরা পড়ে এবং বিজ্ঞানীরা সেখান থেকেই ‘ব্ল্যাক হোলের’ আভাস পান।

এমনই এক ব্ল্যাক হোল হল জিআরএস ১৯১৫+১০৫— যা আমাদের ছায়াপথ থেকে ২৮,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সূর্যের চেয়ে ১২ গুণ বেশি ভরবিশিষ্ট ওই ব্ল্যাক হোল কয়েক দশক ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। ব্ল্যাক হোলের তাপমাত্রা চরম শীতল হলেও তার ‘অ্যাক্রিশন ডিস্কের’ তাপমাত্রা১০ লাখ থেকে ১ কোটি ডিগ্রি, আর এর বাইরের করোনা নামের প্লাজমা মেঘের তাপমাত্রা ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি ও ততোধিক।

ব্ল্যাক হোলের চারপাশে প্লাজমা মেঘের বাড়া-কমার জেরেই আলোর কম্পন তৈরি হয়।

ব্ল্যাক হোলের চারপাশে প্লাজমা মেঘের বাড়া-কমার জেরেই আলোর কম্পন তৈরি হয়। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মহাকাশ পর্যবেক্ষণাগার অ্যাস্ট্রোস্যাট জিআরএস ১৯১৫+১০৫-এর উপরে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। তার মাধ্যমেই ইসরোর বিজ্ঞানী অনুজ নন্দী, আইআইটি গুয়াহাটির পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক শান্তব্রত দাস, তাঁর গবেষক ছাত্র শেষাদ্রি মজুমদার ও হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ শ্রীহরি তার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছেন। দেখা গিয়েছে কয়েক শত সেকেন্ড অন্তর জিআরএস ১৯১৫+১০৫-এর এক্স রশ্মির উজ্জ্বলতা নাটকীয়ভাবে ওঠানামা করতে থাকে। উজ্জ্বল পর্যায়ে আলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭০ বার কম্পিত হয় বা ঝিকমিক করে। অনুজ্জ্বল বা ডিপ ফেজ়ে সেই কম্পন অদৃশ্য হয়ে যায়।শান্তব্রত দাস জানান, প্রাথমিক ব্ল্যাক হোলটি সূর্যের ভরের ১২ গুণ ওজন নিয়ে সেকেন্ডে হাজার বারের বেশি গতিতে নিজের অক্ষে ঘুরছে। তা থেকে বের হওয়া এক্স রে ফোটনের উজ্জ্বলতা যখন বেশি থাকছে তখন দেখা যাচ্ছে, ফোটনগুলি সেকেন্ডে ৭০ বার ঝিকমিক করছে বা আন্দোলিত হচ্ছে। কিন্তু উজ্জ্বলতা কমে গেলেই আলোর কম্পনও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ওই ব্ল্যাক হোলে ফোটন আলোর এই উজ্জ্বলতা বাড়া-কমা দেখতে পাওয়া ও তা প্রমাণ করার ঘটনা এই প্রথম। একে বলা হয় ‘কোয়াসি পিরিয়ডিক অসিলেশন’।

ওই কম্পনের কারণ হল ব্ল্যাক হোলকে ঘিরে থাকা অতি উত্তপ্ত প্লাজমা মেঘ, যার নাম করোনা। গবেষণা অনুযায়ী— নন ডিপ পর্যায়ে করোনা আকারে ছোট হয়ে যায় তাই নির্গত আলোর উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়। তখন উজ্জ্বল ফোটন আলো আর করোনার লুকোচুরিতেই তৈরি হয় আলোর ঝিকিমিকি। ডিপ ফেজ়ে, করোনা প্রসারিত হয় এবং তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা হয়ে যায়। ফলে ওই দ্রুত ঝিকমিক হওয়ার ঘটনা মিলিয়ে যায়। শান্তব্রত বলেন, ‘‘জিআরএস ১৯১৫+১০৫-কে ‘মহাজাগতিক পরীক্ষাগার’ হিসেবে ব্যবহার করে অনেক দেশই। কিন্তু তার আশপাশে চলা এই আলোর খেলা ধরে ফেলা এবং তার কারণ বিশ্লেষণের ঘটনা এই প্রথম। ব্ল্যাক হোলের আশেপাশের অতি তীব্র মহাকর্ষীয় পরিবেশ ও শক্তির প্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে এই আবিষ্কার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

black hole Indian Scientist

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy