Advertisement
E-Paper

সাধারণ থেকে হঠাৎ ২৯৫ কিমি বেগের ‘দানব’! চরিত্র বদলাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, বিপদ চেনাল জামাইকার ‘মেলিসা’

জামাইকার ‘মেলিসা’কে ‘ক্যাটেগরি ৫ হ্যারিকেন’ বলা হচ্ছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক স্তর। কাঁচা তো দূর, এই ঝড়ের সামনে পোক্ত পাকা বাড়িও টিকিয়ে রাখা কঠিন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০২
মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ‘ক্যাটেগরি ৫ হ্যারিকেন’ হয়ে উঠেছে ‘মেলিসা’, আছড়ে পড়েছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে।

মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ‘ক্যাটেগরি ৫ হ্যারিকেন’ হয়ে উঠেছে ‘মেলিসা’, আছড়ে পড়েছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

হ্যারিকেন ‘মেলিসা’য় লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে জামাইকা। ঘণ্টায় ২৯৫ কিলোমিটার বেগে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে এই ঝড়। এখনও পর্যন্ত মোট ৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। নিখোঁজ বহু। তবে এই ঝড়ের শক্তি বা তার ধ্বংসলীলার চেয়েও কিন্তু বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে অন্য একটি বিষয়— ঝড়ের ধরন। একাংশের মতে, গোটা পৃথিবী জুড়েই ঘূর্ণিঝড় তার চরিত্র বদলাচ্ছে। বিপদ আরও বেশি করে চিনিয়ে দিয়েছে ‘মেলিসা’।

‘ক্যাটেগরি ৫ হ্যারিকেন’

জামাইকার ‘মেলিসা’কে ‘ক্যাটেগরি ৫ হ্যারিকেন’ বলা হচ্ছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক স্তর। ঘণ্টায় ২৫২ কিলোমিটার বা তার বেশি গতিতে হাওয়া বইলে সেই ঝড়কে ‘ক্যাটেগরি ৫’-এর তকমা দেওয়া হয়। কাঁচা তো দূর, এই ঝড়ের সামনে পোক্ত পাকা বাড়িও টিকিয়ে রাখা কঠিন। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে এত তীব্র, এত বিধ্বংসী ঝড় এর আগে কখনও হয়নি। ‘মেলিসা’র ঝাপটায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামাইকা, হাইতি, কিউবার মতো দ্বীপরাষ্ট্র। বিস্তীর্ণ অংশ প্রায় মাটিতে মিশে গিয়েছে। আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

‘দ্রুত ঘনীভবন’

সমুদ্রে থাকাকালীন অত্যন্ত দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করেছে ‘মেলিসা’। এখানেই বিজ্ঞানীদের ভ্রুকুঞ্চিত হচ্ছে। দাবি, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মাঝারি মানের ঝড় থেকে ‘মেলিসা’ বিপজ্জনক হ্যারিকেনে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ‘দ্রুত ঘনীভবন’ বা ‘র‌্যাপিড ইনটেন্সিফিকেশন’। পৃথিবী যত উষ্ণ হচ্ছে, ঝড়ের এই শক্তিবৃদ্ধি ততই যেন ‘স্বাভাবিক’ হয়ে উঠছে। বদলে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের চরিত্র।

নিখুঁত পূর্বাভাস চাই

‘দ্রুত ঘনীভবন’-এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, তা পূর্বাভাস অনুযায়ী তৈরি হওয়ার সময় দেয় না। চোখের নিমেষে কোন ঝড় যে শক্তি বাড়িয়ে ‘দানব’ হয়ে উঠবে, কোন ঝড় যে সাধারণ থাকবে, তা বোঝা মুশকিল। তাই পূর্বাভাস দ্রুত এবং নিখুঁত হওয়া জরুরি। তবেই যথাসম্ভব প্রাণ বাঁচানো যাবে। এর জন্য আরও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রকে যত নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে, বিশেষত ঝড়ের ‘চোখ’ যত বিশদে বিশ্লেষণ করতে পারবেন আবহবিদেরা, পূর্বাভাস সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। কারণ কেন্দ্রই ঘূর্ণিঝড়ের প্রাণভোমরা। হাওয়ার গতি সেখানেই সবচেয়ে বেশি।

ঝড় জমাট বাঁধে কখন

ঘূর্ণিঝড়ের ‘দ্রুত ঘনীভবন’-এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রথমত, বাতাসের আর্দ্রতা থাকতে হবে খুব বেশি। দ্বিতীয়ত, উচ্চতার পরিবর্তনের সঙ্গে হাওয়ার গতির পরিবর্তন খুব বেশি হলে চলবে না এবং তৃতীয়ত, সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা উষ্ণ থাকতে হবে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আশির দশকের প্রথম থেকেই ঘন ঘন এই ধরনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সমুদ্রের উপরিতল উষ্ণ হচ্ছে। বাতাসে বাড়ছে আর্দ্রতা। সাধারণ প্রাকৃতিক পরিবর্তনশীলতা দিয়ে এর ব্যাখ্যা চলে না। প্রকৃতির উপর মানুষের ‘অত্যাচারের’ প্রভাবেই ঝড় দ্রুত ঘনীভূত হতে শুরু করেছে, মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

কী ভাবে ‘দানব’ হল ‘মেলিসা’

‘মেলিসা’র ক্ষেত্রে জামাইকার কাছাকাছি সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত এক ডিগ্রি বেশি ছিল। সমুদ্র গরম হয়ে উঠলে ঝড় বাড়তি শক্তি পায়। এতে সমুদ্রের জলস্তরও বেড়ে যায়। ধ্বংসের সম্ভাবনা প্রকট হয় আরও। ‘মেলিসা’ প্রায় প্রত্যেকটি শর্ত পূরণ করেছে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। তাই ‘দানব’ হয়ে উঠতে পেরেছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের বিশ্বাস, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গিয়েছে। আবহাওয়া যত উষ্ণ হচ্ছে, তত আর্দ্রতাও বাড়ছে। উত্তর অতলান্তিকে এই প্রবণতা সম্প্রতি খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে অন্যান্য সমুদ্রও ব্যতিক্রম নয়।

ধীর ‘মেলিসা’

অনেকের মতে, ২৯৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে ধেয়ে যাওয়ার পরেও যতটা মনে করা হয়েছিল, তত প্রাণহানি ঘটায়নি ‘মেলিসা’। এর একটা কারণ, দ্রুত ঘনীভূত হয়ে শক্তি বৃদ্ধি করলেও ‘মেলিসা’ স্থলভাগের দিকে এগোতে তুলনামূলক বেশি সময় নিয়েছে। ফলে পূর্বাভাসের পরেও বেশ খানিকটা সময় পেয়েছে জামাইকাবাসী। বহু মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সূত্র ধরেই কয়েকটি গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন ঘূর্ণিঝড়ের নিজস্ব গতি কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে ঘূর্ণিঝড়গুলি দীর্ঘ সময় স্থলভাগের উপরে থাকছে এবং আরও বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। ‘দ্রুত ঘনীভবন’-এর কারণে আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় এখন ধ্বংসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যেতে পারছে। যদি পূর্বাভাস ঠিকঠাক না-থাকে, তবে হাজারো প্রাণহানির কারণ হয়ে উঠতে পারে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি।

অদূর ভবিষ্যতে এই বিপদমুক্তির কোনও আশা দেখতে পাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। জলবায়ু দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। বাড়ছে উষ্ণায়ন। ফলে আশঙ্কা, এই ধরনের ধ্বংসাত্মক ঝড়ও সংখ্যায় বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ঝড় ও তার পারিপার্শ্বিকের নিখুঁত পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং দ্রুত নির্ভুল পূর্বাভাসের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

Hurricane Melissa Atlantic Ocean Cyclone Eye Jamaica Farewell Haiti cuba Caribbean Islands
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy