Advertisement
E-Paper

এক বার নয়, রাতে দু’দফায় ঘুমোত মানুষ, শতিনেক বছর আগেও! কী ভাবে বদলে গেল আমাদের মস্তিষ্কের নিদ্রাচক্র

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘুমের মাঝে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান নিলে আখেরে সুবিধা হত মানুষজনের। দীর্ঘ শীতের রাত কাটত সহজেই। প্রশ্ন উঠছে, হাজার হাজার বছর আগে রাতে ঘুম থেকে উঠে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কী করতেন মানুষজন?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০৩
মানুষের একটানা আট ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস খুব পুরনো নয়।

মানুষের একটানা আট ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস খুব পুরনো নয়। ছবি: শাটারস্টক।

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়! আপনি বসে ভাবেন, কেন এমন হল। আসলে এর নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ এক কারণ। আসলে রাতে টানা ঘুম সে ভাবে বলতে গেলে আধুনিক অভ্যাস। বিবর্তনের ফসল। হাজার হাজার বছর আগে মানুষ রাতে একটানা ঘুমাতেন না। দু’দফায় ঘুমাতেন। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে এই অভ্যাসে বদল ঘটে। সে সময়ে ভারতে রাজত্ব করছেন মোগলেরা। ইংল্যান্ডে মৃত্যু হয়েছে প্রথম এলিজাবেথের। ওই সময় থেকে কেন সেই অভ্যাস বদলাল,তার নেপথ্যেও রয়েছে কারণ।

মানুষের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, হাজার বছর আগে টানা আট ঘণ্টা কেউ ঘুমাতেন না। পরিবর্তে প্রতি রাতে দু’দফায় ঘুমাতেন তাঁরা— প্রথম এবং দ্বিতীয়। প্রতি দফায় কয়েক ঘণ্টা করে ঘুমাতেন তাঁরা। মাঝে এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময়ের ব্যবধান থাকত। সাধারণত মাঝরাতে নেওয়া হত সেই ব্যবধান। সে সময় উঠে ঘুরে বেড়াতেন লোকজন। তার পরে আবার ঘুমিয়ে পড়তেন। উঠতেন ভোরবেলা। ইতিহাসবিদেরা দেখেছেন, ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকায় এই রীতিরই চল ছিল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘুমের মাঝে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান নিলে আখেরে সুবিধা হত মানুষজনের। দীর্ঘ শীতের রাত কাটত সহজেই। প্রশ্ন উঠছে, হাজার হাজার বছর আগে রাতে ঘুম থেকে উঠে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কী করতেন মানুষজন? ইতিহাসবিদেরা বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে দেখেছেন, হাজার হাজার বছর আগে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে খামারে থাকা পশুদের এক বার দেখে আসতেন লোকজন। খাবার দিয়ে আসতেন। শীতের দেশগুলিতে আগুন জ্বালিয়ে ঘুমাতে যেতেন মানুষজন। মাঝরাতে উঠে সেই আগুনে কাঠ দিতেন। আঁচ বাড়িয়ে দিতেন। এ সব কাজই করতেন ব্যবধানের সময়ে। অনেকে আবার বিছানায় বসেই প্রার্থনা সেরে নিতেন।

শিল্পবিপ্লব যখন হয়নি, তার আগে মানুষজন রাতে ঘুম থেকে উঠে আর এক বার ঘুমোতে যাওয়ার আগের সময়টায় পড়াশোনা করতেন। কেউ ওই সময়টা ডায়েরি, চিঠি লেখার জন্য বরাদ্দ রাখতেন। প্রতিবেশীর সঙ্গে গল্পগুজব করতে যেতেন, এমন উদাহরণও পেয়েছেন ইতিহাসবিদেরা। অনেক দম্পতি এই সময়টা একটু নিজেদের মতো করে একান্তে কাটাতেন। গ্রিক কবি হোমার এবং রোমান কবি ভার্জিলের লেখাতেও ওই দু’দফা ঘুমের মাঝে ব্যবধানের কথা উল্লেখ রয়েছে।

সেই নিয়মের বদল এল কী ভাবে? কী ভাবে দু’দফার বদলে টানা ঘুমের অভ্যাস হল মানুষের? কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডারেন রোডস জানান, ২০০ বছর বা তার কিছু বেশি সময় ধরে রাতে একটানা ঘুমাতে শুরু করেছেন মানুষজন। তার অন্যতম কারণ, সামাজিক পটবদল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃত্রিম আলোর কারণেই মানুষের ঘুমের ধাঁচে বদল এসেছে। সপ্তদশ, অষ্টাদশ শতকে প্রথমে তেলের আলো, তার পরে গ্যাসের আলো আসে। ক্রমে আবিষ্কার হয় বিদ্যুতের। তার ফলে রাতেও মানুষ নিজের কাজ সারতে সক্ষম হন। এর আগে সূর্যাস্তের পরে অন্ধকারে মানুষের কিছু করার থাকত না। তাই সূর্যাস্তের পরেই ঘুমিয়ে পড়তেন। ক্রমে সেই ছবি বদলাতে লাগল।

রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের শরীরে জৈবিক প্রভাবও ফেলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘুমের আগে ঘরে উজ্জ্বল আলো জ্বললে মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরণ দেরিতে হয়। এই মেলাটোনিন ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। তা যত দেরিতে ক্ষরিত হয়, তত ঘুমেরও দেরি হয়। শিল্পবিপ্লব শুধু মানুষের কাজের ধারা বদলায়নি, ঘুমের ধাঁচও বদলে দিয়েছে। কারখানায় কঠিন পরিশ্রমের পরে বাড়িতে গিয়ে একটানা ঘুমোতে শুরু করলেন লোকজন। কয়েক ঘণ্টা ঘুমানোর পরে ব্যবধান নেওয়ার রেওয়াজ লুপ্ত হয়ে গেল।

sleep cycle
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy