Advertisement
E-Paper

যক্ষ্মা রুখতে হলুদ-কণায় ভরসা ভারতীয় বিজ্ঞানীদের

হলুদে থাকা কারকুমিনের অতি সূক্ষ্ম কণা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা আক্রান্ত ইঁদুরের শরীরে ঢুকিয়ে বিজ্ঞানীরা সাফল্য পেয়েছেন বলে ফ্রন্টিয়ার্স জার্নালে প্রকাশের জন্য গৃহীত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে।

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০৩:৩৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার বিরুদ্ধে এ বার লড়াইয়ে নামলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। তবে নতুন কোনও অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করে নয়, যক্ষ্মার জীবাণু মারতে বিজ্ঞানীরা বেছে নিয়েছেন ভারতীয় হেঁশেলের অতি পরিচিত উপাদান হলুদকে।

হলুদে থাকা কারকুমিনের অতি সূক্ষ্ম কণা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা আক্রান্ত ইঁদুরের শরীরে ঢুকিয়ে বিজ্ঞানীরা সাফল্য পেয়েছেন বলে ফ্রন্টিয়ার্স জার্নালে প্রকাশের জন্য গৃহীত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, কারকুমিনের সূক্ষ্ম কণা এক দিকে যেমন যক্ষ্মার জীবাণুকে পুরোপুরি কাবু করে ফেলে, তেমনই ভবিষ্যতে তা যাতে আর আক্রমণ করতে না পারে, শরীরের মধ্যে সেই প্রতিরোধ ক্ষমতাও তৈরি করে। পাশাপাশি, যক্ষ্মায় বিভিন্ন কোষে যে প্রদাহ (ফুলে গিয়ে জ্বালা) তৈরি হয়, কারকুমিন তা প্রতিহতও করে।

ওই গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন পাঁচটি গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে চারটি এ দেশের (নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশ্যাল সেন্টার ফর মলিকিউলার মেডিসিন এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, ওডিশার কেআইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বায়োটেকনোলজি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ)। পঞ্চমটি আমেরিকার ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথোলজি-মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ। তারা এই গবেষণায় প্রযুক্তিগত সাহায্য করেছে।

গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী গোবর্ধন দাস জানালেন, ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা মারাত্মক ভাবে ছড়াচ্ছে। যে সব যক্ষ্মা রোগী ওষুধ খেতে খেতে মাঝপথে ছেড়ে দেন, মূলত তাঁদের শরীরেই এই যক্ষ্মা বাসা বাঁধে। ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, ভারতবর্ষে ২২ লক্ষ যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে ৭ লক্ষই ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় ভুগছেন। গোবর্ধনবাবু জানান, এক দিকে যেমন নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হচ্ছে। তার সঙ্গে তাল রেখে জীবাণুরাও নিজেদের চরিত্র বদলাচ্ছে। ফলে নতুন ওষুধ কাজ করছে না। এখন যক্ষ্মা নিরাময়ে যে ওষুধটি ব্যবহার করা হয় তার বিষক্রিয়াও লক্ষ করা যাচ্ছে। ‘‘সেই নিরিখে আমাদের এই গবেষণা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হলুদ থেকে নেওয়া কারকুমিনের ন্যানো কণা ওষুধ প্রতিরোধী ইঁদুরের মধ্যে প্রয়োগ করে দেখেছি, তাতে অতি অল্প দিনেই যক্ষ্মার জীবাণু ধ্বংস হচ্ছে’’, দাবি গোবর্ধনবাবুর।

আরও পড়ুন:অভাবের চাকায় চড়ে ছুটে চলেছে স্বপ্নেরা

গবেষণাপত্রে আরও দাবি করা হয়েছে, যক্ষ্মা নিরাময়ে এখন যে সর্বোচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে সেগুলির যেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তেমনই তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও নষ্ট করে দেয়। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীরে ফের যক্ষ্মা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তখন তাঁর শরীরে প্রচলিত ওষুধ কাজ করে না। অর্থাৎ, যক্ষ্মার জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী ক্ষমতা পেয়ে যায়।

গোবর্ধনবাবুর ব্যাখ্যা, কারকুমিনের কণা মানুষের শরীরের ভিতরে তিন ভাবে কাজ করে। তারা লিভারের বিষক্রিয়া এবং ক্ষয় রোধ করে, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে পরবর্তী সংক্রমণ আটকে দেয়, শরীরের মধ্যে ঢোকা যক্ষ্মার জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। তাঁর কথায়, ‘‘কারকুমিন যক্ষ্মার যে কোনও জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা রাখে।’’ মানুষের উপরে পরীক্ষার পরেই ওই কারকুমিন থেকে যক্ষ্মার ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি।

গোবর্ধনবাবুদের ওই গবেষণা বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে। বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ পার্থসারথী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কারকুমিন অনেক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু যক্ষায় মানুষের শরীরে কেমন প্রভাব পড়বে, সেটা পরীক্ষা না হলে বলা যাবে না।’’

Tuberculosis Drug Turmeric Lungs যক্ষ্মা হলুদ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy