ঝড় উঠেছে। সেই বাউল বাতাসের মধ্যে সিঁধিয়ে যাবে প্রায় তিনটি পৃথিবী। ঝড় চলছে প্রায় দু’বছর ধরে। তবে গ্রহ নয়, এই ঝড়ে মাতাল এক তারা। ন’ঘণ্টায় এক বার এই ঝড় পাক খাচ্ছে ডব্লিউ ১৯০৬+৪০ তারাটিকে। এমন ঝড় নজরে পড়েছে নাসার স্পেস-টেলিস্কোপ কেপলার আর স্পিৎজ-এর দৌলতে।
ডব্লিউ ১৯০৬+৪০ আদতে বামন তারা। অন্য বামন তারার মতো এর আঁচও নিভু নিভু। তবে এখনও এর উষ্ণতা সাড়ে তিন হাজার ফারেনহাইটের মতো। অন্য তারাদের থেকে বেশ শীতলই বটে! এই ‘ঠাণ্ডা’ মেঘ তৈরির পক্ষে উপযুক্ত বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সূক্ষ্ম কণাদের দিয়ে তৈরি হয়েছে মেঘ। সেই মেঘ থেকেই উঠেছে ঝড়।
কী ভাবে মিলল এ ঝড়ের সন্ধান?
২০১১। নাসার ‘ওয়াইড ফিল্ড ইনফ্রারেড সার্ভে এক্সপ্লোরার’ নানা খোঁজে মেতে ছিল। তার চোখেই প্রথম ধরা পড়ে ডব্লিউ ১৯০৬+৪০ কে। ভাগ্যক্রমে ওই অঞ্চলেই অনুসন্ধান চালাচ্ছিল নাসার স্পেস টেলিস্কোপ কেপলার। তাকেও কাজে লাগাল নাসা।
নক্ষত্র থেকে আসা আলোর পরিবর্তন দেখে গ্রহ, নক্ষত্রের উপস্থিতি খুঁজে বার কেপলার। এ ক্ষেত্রে আলোর পরিবর্তন দেখে বিজ্ঞানীরা বুঝলেন আলো কোনও গ্রহ থেকে আসছে না। অনুমান করলেন আলো আসছে ‘স্টার স্পট’ থেকে। আমাদের সূর্যের বুকেও এমন ‘সান স্পট’ রয়েছে। এগুলি আসলে তীব্র চৌম্বকীয় ক্ষেত্র। যার চার পাশে ঘুরতে ঘুরতে আলো ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে।
আরও বিশদে দেখতে কাজে লাগানো হল অপর স্পেস টেলিস্কোপ স্পিৎজ-কে। এই টেলিস্কোপে ‘ইনফ্রারেড বিশ্লেষণ’ করে। তাতে শুধু ডব্লিউ ১৯০৬+৪০ কেই চেনা গেল, বোঝা গেল তারার উত্তর মেরুর খুব কাছেই উঠেছে বিশাল, বিপুল এক ঝড়। একে বারে পৃথিবীর বুকে জমে ওঠা নিম্নচাপের মতো দেখতে যেন।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আয়তনে ডব্লিউ ১৯০৬+৪০ প্রায় বৃহস্পতির সমান। আর এই ঝড় অনেকটা বৃহস্পতির বুকে ‘রেড স্পট’-এর মতো।
তারার বুকে বাউল বাতাসের এমন উথাল-পাতাল আগে কখনও দেখা যায়নি। মেলেনি অনেক প্রশ্নের উত্তরও। তাই কেপলার আর স্পিৎজ কে নিয়ে অন্য তারার বুকে এমন ঝড়ের সন্ধানে মেতে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা। এ নিয়ে অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে সম্প্রতি গবেষণা পত্রও প্রকাশিত হয়েছে।