Advertisement
E-Paper

যা মনে করা হত, তার চেয়েও বহু আগে আগুন জ্বালাতে শিখেছে আদিমানবেরা! নতুন প্রমাণে ওলটপালট প্রচলিত ধারণা

তখনও আধুনিক মানুষের আবির্ভাবই হয়নি পৃথিবীতে। সেই সময় থেকেই আগুন জ্বালাতে শিখে নিয়েছিল আদিমানবেরা। দীর্ঘ দিনের প্রচলিত ধারণা বদলে দিল ব্রিটেনে প্রত্নতাত্ত্বিক দলের নতুন খোঁজ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৫
আদিমানবেরা আগুন জ্বালাতে শিখেছে অন্তত চার লক্ষ বছর আগে। দাবি প্রত্নতাত্ত্বিকদের।

আদিমানবেরা আগুন জ্বালাতে শিখেছে অন্তত চার লক্ষ বছর আগে। দাবি প্রত্নতাত্ত্বিকদের। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

আদিমানবেরা আগুন জ্বালাতে শেখার পর থেকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক নতুন মোড় আসে। কিন্তু কবে থেকে মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখল? তা নিয়ে বহু বছরের প্রচলিত ধারণা ওলটপালট করে দিল প্রত্নতাত্ত্বিকদের নতুন খোঁজ। জানা গেল, এত দিন যা অনুমান করা হত, তার চেয়েও অনেক আগে থেকে আগুন জ্বালানোর জ্ঞান রপ্ত করেছিল আদিমানবেরা।

আজ থেকে প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগেও আদিমানবেরা আগুন ব্যবহার জানত। তবে ওই সময়ে তারা আগুন জ্বালাতে জানত না। তখন প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট আগুনকে ব্যবহার করত আদিমানবেরা। আগুন জ্বালাতে এবং প্রয়োজন মতো নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে অনেক পরে। এত দিন গবেষকেরা মনে করতেন, আগুন জ্বালানোর জ্ঞান মানুষ প্রথম শেখে আজ থেকে প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে। তবে সাম্প্রতিক এক প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে জানা গেল, ৫০ হাজার বছর আগে নয়, আজ থেকে অন্তত চার লক্ষ বছর আগে আগুন জ্বালাতে শিখে নিয়েছে আদিমানবেরা।

লন্ডন থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার উত্তরে বার্নহাম গ্রামে খননকার্য চালাচ্ছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। সেখানে তাঁরা উনুনের মতো আকৃতির পোড়া মাটি, তাপে ভেঙে যাওয়া পাথরের কুঠার এবং পাইরাইট (আয়রন সালফাইড)-এর দু’টি টুকরো খুঁজে পান। পাইরাইট হল এমন এক ধরনের পাথর যা থেকে কোনও আগুনের স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে দাহ্য বস্তুতে আগুন ধরানো যায়। সাম্প্রতিক এই অনুসন্ধান থেকেই বোঝা যায়, এই এলাকায় যারা থাকত, তারা আগুন জ্বালাতে এবং তাকে প্রয়োজন মতো নিয়ন্ত্রণ করতে জানত।

এই অনুসন্ধানের আগে পর্যন্ত মানুষের আগুন জ্বালানোর সবচেয়ে প্রাচীন অকাট্য প্রমাণ মিলেছিল ফ্রান্সের উত্তর প্রান্তে। সেটি ছিল আজ থেকে প্রায় ৫০ হাজার বছর আগের। ধরে নেওয়া হত আনুমানিক ওই সময় থেকেই মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। তবে ব্রিটেনের এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি প্রায় ৪ লক্ষ বছরের পুরনো ইতিহাস বহন করছে। অর্থাৎ, এত দিন যা মনে করা হত, তার চেয়েও অন্তত সাড়ে তিন লক্ষ বছর আগে থেকে আদিমানবেরা আগুন জ্বালাতে জানত।

আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয়েছে আজ থেকে প্রায় তিন লক্ষ বছর আগে। আগুন জ্বালানোর জ্ঞান তারও আগে থেকে রপ্ত করেছিল আদিমানবেরা। তা ছাড়া আধুনিক মানুষের প্রথম আবির্ভাব হয় আফ্রিকা মহাদেশে। আফ্রিকার বাইরে তারা ছড়িয়ে পড়ে আরও অনেকটা সময় পরে। প্রায় এক লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত আফ্রিকার বাইরে কোনও স্থায়ী অস্তিত্ব ছিল না হোমো সেপিয়েন্সের। আনুমানিক ৬০ হাজার বছর আগে হোমো সেপিয়েন্সরা ইউরোপ মহাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ব্রিটেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন মিলেছে আজ থেকে প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে। অর্থাৎ, আধুনিক মানুষ ছাড়া হোমো গণের অন্য প্রজাতিও আগুন জ্বালানোর জ্ঞান আয়ত্ত করেছিল।

আদিমানবের কোন প্রজাতি প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখেছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, আধুনিক মানুষ ইউরোপে পা রাখার আগে আদিমানবের বেশ কিছু প্রজাতি সে মহাদেশে ঘুরে বেড়াত। যেমন— হোমো ইরেক্টাস, হোমো হাইডজেলবার্গেনসিস বা হোমো নিয়ানডারথাল (বর্তমানে আধুনিক মানুষ বাদে হোমো গণের সব প্রজাতিই বিলুপ্ত)। ব্রিটেনের বার্নহামে যে সময়কালের প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী পাওয়া গিয়েছে, ওই একই সময়কালে ব্রিটেনের কেন্ট কাউন্টির সোয়ান্সকম্ব এবং স্পেনের আটাপুয়ের্কোয় কিছু জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে— নিয়ানডারথালদের জীবাশ্ম। যা থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, সম্ভবত নিয়ানডারথালেরা সেই সময় থেকেই আগুন জ্বালানো শিখে গিয়েছিল।

এই প্রত্নতাত্ত্বিক দলের নেতৃত্ব দেন লন্ডনের ব্রিটিশ জাদুঘরে প্রস্তর যুগের সামগ্রী সংরক্ষক নিক অ্যাশটন। গত বুধবার নেচার জার্নালে তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। অ্যাশটনের কথায়, “এটি একটি ৪,০০,০০০ বছরের পুরোনো প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল। এখানে আমরা শুধু ব্রিটেন বা ইউরোপেই নয়, বরং বিশ্বের যে কোনও স্থানের তুলনায় আগুন জ্বালানোর প্রাচীনতম প্রমাণ পেয়েছি।” তবে বার্নহ্যামেই যে আদিমানবেরা প্রথম আগুন জ্বালানোর ক্ষমতা অর্জন করেছিল, এমন সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন তিনি।

ব্রিটেনের ওই প্রত্নতাত্ত্বিক দলের মতে, মানুষ কী ভাবে এবং কখন প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখেছিল, তা নির্দিষ্ট ভাবে বলা একটি কঠিন। কারণ এর প্রমাণ খুবই কম টিকে থাকে। ছাই এবং কাঠকয়লা সহজেই উড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া কোন আগুন প্রাকৃতিক এবং কোন আগুন মানুষ ধরিয়েছিল— তারও পার্থক্য করা কঠিন। যেমন ইজ়রায়েল, কেনিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় আদিমানবদের বাস করা এলাকায় আগুনের উপস্থিতির উদাহরণ মিলেছে। সময়কাল প্রায় ৮-১০ লক্ষ বছর আগের। তবে এগুলি মানুষের জ্বালানো নাকি দাবানল থেকে সৃষ্ট— তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না।

গবেষকদের দাবি, আদিমানবেরা বজ্রপাত বা অন্য প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট আগুনকে কাজে লাগাতে শুরু করেছিল আনুমানিক সেই সময় থেকেই। কিন্তু সেগুলি ছিল আগুনের অননুমেয় উৎস। তবে বার্নহ্যামের প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী থেকে বোঝা যায়, ওই সময়ে আদিমানবেরা আগুন জ্বালাতে এবং ইচ্ছামতো তা ব্যবহার করতে পারত। এখানে যে সামগ্রীগুলি পাওয়া গিয়েছে, তার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিক ভাবে ধরা আগুনের ফলে তৈরি হওয়া বৈশিষ্ট্যের তুলনায় আলাদা। নমুনাগুলিতে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি থেকে বোঝা যায়, আগুন গোটা এলাকায় ছড়ায়নি। একটি নির্দিষ্ট অংশে সম্ভবত কাঠ পোড়ানোর ফলে ওই তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়েছিল। পাললিক শিলায় খনিজ পরিবর্তন থেকেও ইঙ্গিত মিলেছে যে একই অঞ্চলে বার বার আগুন ধরানো হয়েছে।

Neanderthal Fire UK Archaeological Sites
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy