Advertisement
E-Paper

৪৫০০০ বছরের প্রাচীন সেই গুহাচিত্র আধুনিক মানুষের পূর্বসূরিদের আঁকা নয়! খানখান হচ্ছে বহু যুগের ধারণা

আধুনিক মানুষ আচমকাই উন্নত মস্তিষ্ক নিয়ে আবির্ভূত হয়নি। গুহাচিত্র আঁকার মতো সৃজনশীল কাজ আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক গবেষণায় তা আরও এক বার স্পষ্ট হল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:০০
২০২১ সালে এই গুহাচিত্রের সন্ধান মেলে ইন্দোনেশিয়ায়।

২০২১ সালে এই গুহাচিত্রের সন্ধান মেলে ইন্দোনেশিয়ায়। ছবি: সংগৃহীত।

সন্ধান মিলেছিল চার বছর আগেই। গুহার গায়ে আঁকা লালচে রঙের এক শূকর। অপটু হাতে আঁকা গুহাচিত্র। ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের ওই গুহাচিত্র নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল, আরও নতুন তথ্য। জানা গেল, সম্ভবত কোনও আধুনিক মানুষের হাতে ওই গুহাচিত্র সৃষ্টিই হয়নি।

ইন্দোনেশিয়ার এই গুহাচিত্রটির বয়স অন্তত ৪৫,৫০০ বছর। গুহার মধ্যে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের নরম পাথরের গায়ে চার ফুটের এই শূকর-চিত্রটি আঁকা রয়েছে। ওই পাথরের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সেটি কমপক্ষে ৪৫,৫০০ বছরের পুরনো। অর্থাৎ, বিশ্বের প্রাচীনতম শৈল্পিক নিদর্শনের মধ্যে এটি একটি। তবে এটি কত পুরনো সেটি বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হল, এই গুহাশিল্পটি কারা তৈরি করেছিল! সুলাওয়েসির লিয়াং টে়ডং গুহায় এই ছবিটি পাওয়া গিয়েছে। গবেষকদলের অন্যতম সদস্য ম্যাক্সিম অবার্টের কথায়, যারা এই শূকর-চিত্রটি এঁ কেছে, তারা বেশ ‘আধুনিক গোছের’ ছিল। ইচ্ছেমতো বিষয়বস্তু আঁকার ক্ষমতা এবং সরঞ্জাম উভয়ই ছিল তাদের কাছে।

দীর্ঘ সময় ধরে অনুমান করা হত, গুহাচিত্র আঁকার মতো সৃজনশীল জ্ঞান শুধুমাত্র আধুনিক মানুষ (হোমো সেপিয়েন্স)-এর মধ্যেই সীমিত ছিল। এই উন্নত বুদ্ধি এবং সৃজনশীলতাই আধুনিক মানুষকে তার জ্ঞাতিদের থেকে পৃথক করে তুলেছে বলে মনে করা হত। যদিও সেই ধারণা আগেই ভেঙেছে। নিয়ানডারথালেরাও (হোমো গণের একটি প্রজাতি, বর্তমানে বিলুপ্ত) যে গুহাচিত্র আঁকত, তার উদাহরণও মিলেছে। স্পেনের তিনটি গুহায় অতীতে কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়— গুহার গায়ে লাল রঙের হাতের ছাপ, কিছু চিহ্ন এবং বিন্দু। গবেষণায় উঠে এসেছে সেগুলি ৬৪,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। অর্থাৎ, ইউরোপে আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের অন্তত ২০,০০০ বছর আগে ওই লালচে ছাপগুলি তৈরি হয়েছিল। ওই সময়ে ইউরোপে ঘুরে বেড়াত আধুনিক মানুষের আত্মীয় নিয়ানডারথালেরা। ফলে অনুমান করা হয়, স্পেনের গুহায় ওই কীর্তি নিয়ানডারথালদেরই।

গবেষকদের অনুমান, ইন্দোনেশিয়ার গুহাচিত্রটিও সম্ভবত নিয়ানডারথালদের হাতেই তৈরি। কিংবা অপর এক জ্ঞাতি ডেনিসোভানদের (হোমো গণের অপর এক বিলুপ্ত প্রজাতি) হাতে। তবে এখনই তা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। কারণ, ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের সঙ্গে নিয়ানডারথালেদের যোগ ছিল, এমন কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই গবেষকদের হাতে। নিয়ানডারথালেরা যে কোনও এক কালে সেখানে ছিল, তা প্রমাণ করার মতো কোনও জীবাশ্ম সেখানে মেলেনি। ডেনিসোভানদেরও কোনও জীবাশ্ম মেলেনি সেখানে। আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের আগে কোন মানব প্রজাতি এখানে বাস করত, তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তাই ওই গুহা থেকে কোনও ডিএনএ-র নমুনা পাওয়া যায় কি না, সেই খোঁজ চালাচ্ছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।

আধুনিক মানুষের পাশাপাশি অন্য হোমো প্রজাতিও যে গুহাচিত্র আঁকতে জানত, তা প্রথম জানা যায় ২০১৮ সালে। স্পেনের লা প্যাসিগা, মালট্রাভিসো এবং আর্ডেলেসে গুহার মধ্যে ক্যালসাইটের স্তরে পাওয়া গিয়েছিল সেই ৬৪,০০০ বছরের প্রাচীন গুহাচিত্র। ইউরেনিয়াম-থোরিয়াম ডেটিং করে ওই গুহাচিত্রের বয়স উঠে আসে। তার পর থেকেই এ বিষয়ে আরও গবেষণা শুরু হয়। পরে ২০২১ সালে অপর একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের গুহায় এই শূকর-চিত্র খুঁজে পান।

স্পেনের তিন গুহার মতো এ ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতিতে ক্যালসাইট স্তরের ইউরেনিয়াম ডেটিং করা হয়। তাতে জানা যায়, গুহাচিত্রটির বয়স অন্তত ৪৫,৫০০ বছর। সৃজনশীল ভাবনা যে শুধু আধুনিক মানুষের মধ্যেই সীমিত ছিল না, সেই ধারণা আরও জোরালো হয় পর পর এই গবেষণাগুলি থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে। গবেষকদের অনুমান, এগুলি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং, একটি বৃহত্তর প্যাটার্নের অংশ। প্রতীকী চিহ্ন বা ছবি দিয়ে মনের ভাব বোঝানোর প্রক্রিয়া যে হঠাৎ করে আফ্রিকায় আবির্ভূত হওয়া আধুনিক মানুষের মধ্যে চলে আসেনি, সে দিকেই ইঙ্গিত করছে নতুন গবেষণাগুলি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, হোমো সেপিয়েন্সের সঙ্গে ওই গণের অন্য প্রজাতির মধ্যেও ‘আধুনিক জ্ঞান’-এর বিকাশ ঘটেছিল।

শুধু গুহাচিত্র নয়, দীর্ঘ সময় ধরে মনে করা হত শিকার করার ক্ষমতাও কেবল আধুনিক মানুষের মধ্যেই রয়েছে। তবে সেই ধারণাও ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। তির-ধনুকের ব্যবহারের প্রমাণ না মিললেও নিয়ানডারথালেরা শিকার করত। তাদের খাদ্যাভ্যাসে মাংসের পরিমাণই ছিল বেশি। এই আদিমানবদের জীবাশ্মের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে আগেই তা জানা গিয়েছে। ঘোড়া, বাইসন, হাতি, গুহাবাসী সিংহের মতো জন্তু শিকারে পটু ছিল তারা। অস্ত্র বলতে ছিল মূলত বর্শা। কাঠের উপর পাথরের ফলা গোঁজা বর্শা। সম্প্রতি এক গবেষণায় আভাস মিলেছে, সম্ভবত তারা তির-ধনুকেরও ব্যবহার করত। উজ়বেকিস্তানের ওবি-রাখমত গুহায় ত্রিকোণাকার ছোট ছোট কিছু পাথরের টুকরো পাওয়া গিয়েছে। অনুমান করা হয়, সেগুলি সম্ভবত তিরের ফলা হিসাবে ব্যবহার করা হত। যদি তা-ই হয়, তবে এগুলিই হবে এখনও পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া প্রাচীনতম তিরের ফলা।

Archeology Indonesia Cave Neanderthal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy