একটা ভঙ্গুর জিনিস পড়ে ভেঙে গেল। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই যে একটা জিনিস পড়ে ভাঙছে, এর নেপথ্যেও রয়েছে একটা প্রক্রিয়া। একটা সূত্র। জানতেন কি? জিনিসটি ভেঙে কত টুকরো হবে, কী মাপের টুকরো হবে, তা সবই হয় ওই প্রক্রিয়া মেনে। সেই প্রক্রিয়াই এ বার আবিষ্কার করলেন এক দল বিজ্ঞানী। এই প্রক্রিয়া বা সূত্র অনেক পদার্থের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে। এমনকি, তরল পদার্থের ক্ষেত্রেও। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর ফলে বিজ্ঞানও অনেকটাই এগিয়ে যাবে।
মহাজগতের ধর্মই হল বিশৃঙ্খলা। আর তারই প্রভাব রয়েছে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়। একটি ভঙ্গুর জিনিস কী ভাবে, কত টুকরোয় ভাঙবে, তা গোনা ছিল এক প্রকার অসম্ভব কাজ। এক ফোঁটা তরলের ক্ষেত্রে তা আরও সমস্যার। এ বার সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রক্রিয়া বোঝার কাজটা বিজ্ঞানীদের কাছে সহজ ছিল না। অনেক রকম পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন তাঁরা। কখনও ভেঙে টুকরো হওয়ার গোটা প্রক্রিয়াকে ‘ফেজ় ট্রানজিশন’ হিসাবে ধরেছেন। কখনও ভেঙে যাওয়াটাকে আণুবীক্ষণিক প্রক্রিয়া হিসাবেই দেখেছেন।
কিন্তু নতুন গবেষণা অন্য কথাই বলছে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স’ পত্রিকায়। ফ্রান্সের আই-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমানুয়েল ভিলারমো গবেষণাটি করেছেন। ভঙ্গুর জিনিস পড়ে ভাঙলে কী হয়, তা বোঝার জন্য তিনি ছোট ছোট বিষয়ে নজর দিয়েছেন। আর তাতেই নতুন একটি সূত্র আবিষ্কার করেছেন। ভিলারমো বলছেন, একটি জিনিস পড়ে কতটা ভাঙবে, কত টুকরো হবে, তা সবই নির্ভর করে নির্দিষ্ট সূত্রের উপর। মনে করুন, একটি জিনিস পড়ে ভেঙে গিয়ে ছড়িয়ে পড়তে চায়। তার চেষ্টা থাকে, যতটা বেশি সম্ভব ছড়িয়ে পড়া। একে ভিলারমো বলছেন ‘ম্যাক্সিমাম র্যান্ডমনেস’। এর নেপথ্যেও একটি সসংবদ্ধ সূত্রই লক্ষ্য করেছেন ভিলারমো।
আরও পড়ুন:
আইআইটি কানপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, গোছানো থেকে অগোছালো হওয়াই প্রকৃতির নিয়ম। ভঙ্গুর জিনিস, যেমন চিনির কিউব বা জলের ফোঁটা। সে রকমই ভঙ্গুর জিনিস ভেঙে গেলে বিভিন্ন রকমের টুকরো তৈরি হয়। সেই টুকরোর মাপ কেমন হবে? ১ সেন্টিমিটার কিউব ভেঙে গিয়ে কত মিলিমিটার কিউব তৈরি হবে? এই প্রশ্নগুলিরই উত্তর খুঁজে পেয়েছেন ভিলারমো এবং তাঁর সহযোগী গবেষকেরা। আবিষ্কার নয়, আদতে কিছু জটিল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন, এমনটাই মনে করেন কৌশিক।
ভিলারমোর তত্ত্ব বলছে, কোনও জিনিস ভেঙে পড়লে তা চেষ্টা করে, ‘এনট্রপি’ যাতে সর্বোচ্চ হয়। মানে যতটা বেশি সংখ্যক টুকরোয় সে ভাঙতে পারে, সেটাই তার চেষ্টা থাকে। অধ্যাপক কৌশিক জানিয়েছেন, ভেঙে পড়ার পরে বস্তুর অবস্থা কতটা অগোছালো হবে, তার মাপ এনট্রপি। একটি জিনিস পড়লে ভাঙবে, তার টুকরো হবে, সেটা আমরা ধরেই নিই। কিন্তু কী ভাবে তা ভেঙে যায়, সেই নিয়ম এ বার বিজ্ঞানীরা বার করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, একটা জিনিস ভাঙলে ভগ্নাংশ কত মাপের হবে, তার তাত্ত্বিক পদ্ধতি রয়েছে। আপাত ভাবে মনে হতে পারে, জিনিস পড়লে এলোমেলো ভাবেই ভেঙে যায়! কিন্তু আদতে তা এলোমেলো ভাবে হচ্ছে না। এর নেপথ্যে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি। রাশিবিজ্ঞানের নির্দিষ্ট সূত্র।
আরও পড়ুন:
বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, এই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে বাস্তবে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পার্বত্য অঞ্চলে শিলা ভেঙে পড়ে যায়। ভারী বৃষ্টির কারণেও পাহাড়ের চূড়া থেকে শিলা ভেঙে পড়ে। সেই শিলা ভেঙে কত টুকরো হবে, তার প্রভাবই বা কতটা হবে, বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ বার নতুন তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে তা আঁচ করা যাবে আগেই। এর ফলে এড়ানো যাবে প্রাণহানি, বিপর্যয়।