Advertisement
E-Paper

একটার পর একটা উপগ্রহ তৈরি হচ্ছে, মহাকাশে চাঁদ তৈরির কারখানা খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা! পৃথিবী থেকে কত দূরে

মহাশূন্যের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণের উদ্দেশে ২০২১ সালে মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা মহাকাশে পাঠিয়েছিল জেমস্‌ ওয়েব টেলিস্কোপ। তার ক্যামেরাতেই ধরা পড়েছে একাধিক চাঁদের উৎপত্তির প্রমাণ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৯
মহাকাশের নতুন নক্ষত্রমণ্ডলে চাঁদের সম্ভার।

মহাকাশের নতুন নক্ষত্রমণ্ডলে চাঁদের সম্ভার। —ফাইল চিত্র।

একটা, দুটো নয়। একটার পর একটা! অনবরত!

সৃষ্টির কোন আদিকালে পৃথিবীর সঙ্গে বৃহৎ মহাজাগতিক পাথরখণ্ডের ধাক্কায় তৈরি হয়েছিল চাঁদ। শান্ত, নিশ্চুপ, মায়াবী আমাদের সেই একটিই উপগ্রহ। কিন্তু এই পৃথিবী থেকে ৬২৫ আলোকবর্ষ দূরে অনবরত এমন শত শত চাঁদ তৈরি হয়ে চলেছে! মহাশূন্যের এ এক গূঢ় রহস্য। সম্প্রতি তা খুঁজে বার করেছেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা।

মহাশূন্যের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০২১ সালে মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা মহাকাশে পাঠিয়েছিল জেমস্‌ ওয়েব টেলিস্কোপ। তার ক্যামেরাতেই ধরা পড়েছে একাধিক চাঁদের উৎপত্তির প্রমাণ। ৬২৫ আলোকবর্ষ দূরে একটি গ্রহের চারপাশে ঘুরছে প্রকাণ্ড গোলাকার এক চাকতি (ডিস্ক)। এখান থেকেই একের পর এক উপগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। একেই বলা হচ্ছে চাঁদ তৈরির কারখানা। গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে সিটি চ্যা বি। জেম্‌স ওয়েবের তথ্য পাওয়ার পর থেকে এই গ্রহ এবং তার চাকতি নিয়ে গবেষণা চলছে। একের পর এক নতুন হদিস বিজ্ঞানীদের কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে নাসার অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্যাল জার্নাল লেটার্‌স-এ রহস্যময় চাকতি সংক্রান্ত প্রথম রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট গ্রহটি যে নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে, তা এখনও ‘শিশু’। মাত্র ২০ লক্ষ বছর আগে নক্ষত্রটির জন্ম হয়েছে। এখনও তা থেকে নক্ষত্রমণ্ডলীয় পদার্থের সঞ্চার হচ্ছে। তার সঙ্গে অবশ্য রহস্যময় সেই গোলাকার চাকতির সম্পর্ক নেই। চাকতিটির সঙ্গে নক্ষত্রের দূরত্ব ৪.৬ হাজার কোটি মাইল।

কিন্তু চাঁদ তৈরির রহস্যটা কী? কী ভাবে অনবরত একের পর এক উপগ্রহ তৈরি করছে ওই চাকতি? কেনই বা তাকে গ্রহ বলা যাচ্ছে না?

এই সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রস্তুতকারী বিজ্ঞানী ওয়াশিংটনের সিয়েরা গ্র্যান্ট। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাকতি আর তার সঙ্গী গ্রহটিকে দেখতে পাচ্ছি। এই প্রথম আমরা দেখতে পাব, কী ভাবে উপগ্রহ তৈরি হয়। এর নেপথ্যে রসায়নটা এই প্রথম আমরা বুঝতে পারব। আমরা তো শুধু চাঁদের সৃষ্টি দেখছি না, দেখতে পাচ্ছি গ্রহটির গঠনও। দেখতে পাচ্ছি গ্রহ আর উপগ্রহ তৈরিতে কী কী উপাদান লাগছে।’’

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জেম্‌স ওয়েবের পাঠানো তথ্যে বিশেষ কয়েকটি অণুর উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা এ বিষয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেন। অণু ছিল ওই গোলাকার চাকতির ভিতরে। সংশ্লিষ্ট গ্রহটিকে পর্যবেক্ষণ করা বা তার তথ্য সংগ্রহ করা সহজ নয়। কারণ, কাছের নক্ষত্রের আলোয় গ্রহের সঙ্কেত চাপা পড়ে যায়। তবে অণুর উপস্থিতি টের পাওয়ার পরেই বিজ্ঞানীরা ওই গ্রহ এবং চাকতির তথ্য সংগ্রহের জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে নক্ষত্রের আলো ঢেকে দিয়ে গ্রহের তথ্য আয়ত্তে আনেন তাঁরা। গ্র্যান্ট বলেছেন, ‘‘গ্রহের কাছাকাছি আমরা কিছু অণু দেখতে পাই। তখনই বুঝেছিলাম, ওখানে কিছু একটা চলছে। তার পর প্রায় এক বছরের চেষ্টায় আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি।’’

গোলাকার চাকতিতে পাওয়া গিয়েছে অ্যাসিটিলিন, বেঞ্জিন-সহ মোট সাতটি কার্বন সমৃদ্ধ অণু। যা নিকটবর্তী নক্ষত্রের রসায়নের সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, ওই নক্ষত্রের চারপাশে জলের অণু পাওয়া গিয়েছে। কার্বন একেবারেই অনুপস্থিত! বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই বৈপরীত্য ২০ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ফসল।

সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির উপগ্রহের সংখ্যা ৯৫। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বৃহস্পতির প্রধান চারটি উপগ্রহের উৎস কোনও এক চ্যাপ্টা গোলাকার মহাজাগতিক চাকতি। কয়েকশো কোটি বছর আগে বৃহস্পতির চারপাশে সমান কক্ষপথেই তার অস্তিত্ব ছিল। একেবারে বাইরের দিকের দু’টি উপগ্রহ গ্যানিমিড এবং ক্যালিস্টোর ৫০ শতাংশই বরফ-জমাট জল। তবে মনে করা হয়, এই উপগ্রহগুলির গভীরে পাথুরে অন্তঃস্থল রয়েছে এবং তা কার্বন বা সিলিকন দ্বারা নির্মিত।

৬২৫ আলোকবর্ষ দূরের চাঁদের উৎস আমাদের কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ? ব্যাখ্যা করেছেন জ়ুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক গ্যাব্রিয়েল কাগনো। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সৌরজগতে কী ভাবে এত উপগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা আমাদের জানা দরকার। তার জন্য বাইরের এমন কিছু নক্ষত্রমণ্ডলে আমাদের চোখ রাখতে হবে, যেখানে এখনও গঠনের কাজ চলছে। জেম্‌স ওয়েব থেকে আমরা সেটাই পেলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কী ভাবে এই উপগ্রহগুলি আসছে? উপাদান কী? কী প্রক্রিয়ায় কাজ চলছে? কতটা সময় লাগছে? সব আমাদের জানা দরকার। চাঁদ তৈরির এই নাটকটাই আমাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছে ওয়েব টেলিস্কোপ। এই প্রথম আমরা এগুলো দেখার সুযোগ পাচ্ছি।’’ জেম্‌স ওয়েবের ক্যামেরায় অবশ্য চাঁদের গঠনপ্রক্রিয়া বা কোনও উপগ্রহের ছবি ধরা পড়েনি। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করেই এ বিষয়ে গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

Moon James Webb Space Telescope NASA Scientific Discovery Space Science
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy