Advertisement
E-Paper

বন্যায় ভেসে গিয়েছিল মঙ্গল! কত দিন প্রাণ ছিল পৃথিবীর পড়শি গ্রহে? নিশ্চিহ্ন হল কবে? হিসাব বদলাচ্ছে নতুন গবেষণায়

মঙ্গলের অতীত নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। গবেষণা বলছে, ৩৭০ থেকে ৪২০ কোটি বছর আগে মঙ্গলের নদী, খাল, হ্রদ এবং সমুদ্রগুলি শুকিয়ে যেতে শুরু করেছিল। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতেও বেশি সময় লাগেনি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৮
লালগ্রহে প্রাণের অতীত জানতে কৌতূহলী বিজ্ঞানীরা।

লালগ্রহে প্রাণের অতীত জানতে কৌতূহলী বিজ্ঞানীরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গলে যে একসময় জল ছিল, কলকল করে বয়ে যেত নদী, বিজ্ঞানীরা আগেই তার প্রমাণ পেয়েছেন। মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব সম্বন্ধেও তাঁরা কমবেশি একমত। কিন্তু কত দিন? মঙ্গলের মাটিতে কত দিন পর্যন্ত প্রাণ বেঁচে ছিল? কবে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল? নতুন একটি গবেষণা এই সংক্রান্ত যাবতীয় ধারণা বদলে দিয়েছে। ফলে এত দিন বিজ্ঞানীরা মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে যে হিসাব কষে রেখেছিলেন, তা এ বার বদলে যেতে পারে।

মঙ্গলের অতীত নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। পৃথিবী থেকে মাত্র ২২ কোটি কিলোমিটার দূরের একটা গ্রহ। মাটিতে লোহার পরিমাণ বেশি থাকায় মহাকাশ থেকে তাকে লাল দেখায়। গবেষণা বলছে, ৩৭০ থেকে ৪২০ কোটি বছর আগে মঙ্গলের নদী, খাল, হ্রদ এবং সমুদ্রগুলি শুকিয়ে যেতে শুরু করেছিল। সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বেশি সময় লাগেনি। মূলত সৌরবায়ুর প্রভাবকেই এর জন্য দায়ী করা হয়। বিজ্ঞানীদের অনুমান, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল শুষে নিয়েছিল সৌরবায়ু। তার ফলে জলও শুকিয়ে যায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় প্রাণ। এখন মঙ্গল শীতল, শুষ্ক এক সৌরগ্রহ। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার সময়কাল নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার একটি রোভারের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে মঙ্গলের নতুন গবেষণায়। পাওয়া গিয়েছে নতুন হিসাব।

বিজ্ঞানীদের অধিকাংশেরই ধারণা, কোটি কোটি বছর আগে মঙ্গলের পরিবেশ প্রাণীর বসবাসের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল। তবে নতুন গবেষণায় দাবি, যতটা মনে করা হচ্ছিল, ততটা নয়। তার আরও অনেক পরেও মঙ্গলে প্রাণ ছিল। গেইল ক্রেটারের পাথরের নমুনায় তার প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি।

মঙ্গলের বুকে এক বিশাল অববাহিকার নাম গেইল ক্রেটার। এর ব্যাস প্রায় ১৫৪ কিলোমিটার। এর মধ্যেই রয়েছে প্রকাণ্ড পর্বত মাউন্ট শার্প। রহস্যময় এই অববাহিকায় অনুসন্ধান অভিযান চালানোর জন্য নাসা পাঠিয়েছে কিউরিওসিটি রোভার। তার পাঠানো তথ্য মঙ্গলের অতীতে আলোকপাত করে।

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় আবু ধাবির (এনওয়াইইউএডি) গবেষক দিমিত্রা অত্রির নেতৃত্বে এক দল বিজ্ঞানী সম্প্রতি কিউরিওসিটি রোভারের পাঠানো তথ্য ঘেঁটে দেখেছেন। গেইল ক্রেটারের পাথর এবং প্রাচীন বালিয়াড়ি নিয়ে চলেছে গবেষণা। দেখা গিয়েছে, কোটি কোটি বছর আগে গেইল ক্রেটারের প্রাচীন বালিয়াড়িগুলি ভূগর্ভস্থ জলের সংস্পর্শে এসে পাথরে পরিণত হয়েছিল। এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অফ জিয়োফিজ়িক্যাল রিসার্চ প্ল্যানেট্‌স-এ। বিজ্ঞানীরা সেখানে দাবি করেছেন, অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি সময় মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল।

গেইল ক্রেটারের বালি এবং পাললিক শিলার প্রকৃতি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। পলি জমাট বেঁধে পাথরে পরিণত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে নাসার রোভার। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গেইল ক্রেটার অত্যন্ত শুষ্ক। এই অংশের বালি ও পলি পাথরে পরিণত হয়েছিল নোয়াচিয়ান যুগে (৪১০ থেকে ৩৭০ কোটি বছর আগে)। এই সময়ে মঙ্গলের মাটিতে প্রবল বন্যা হয়েছিল। গেইল ক্রেটারের মধ্যেকার নদীগুলিও ফুঁসে উঠেছিল। বালি-পলি জমাট বাঁধানো ভূগর্ভস্থ জলের উৎস এই বন্যা।

রোভারের তথ্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মরুভূমিতে হাতেকলমে পরীক্ষা করে দেখে বিজ্ঞানীদল। তাদের দাবি, পলি পাথরে পরিণত হওয়ার ঘটনাটি শেষ পর্যায়ের জলীয় ক্রিয়া। নিকটবর্তী পর্বতের ভূগর্ভস্থ জলই এর জন্য দায়ী। এর ফলে জিপসাম, ক্যালসিয়াম সালফেট ডাইহাইড্রেটের মতো খনিজও উৎপন্ন হয়েছিল। পৃথিবীর মরুভূমিতেও এই ধরনের খনিজের অস্তিত্ব রয়েছে। মঙ্গলের অতীতের খোঁজে এই গবেষণার ফলাফল বিশেষ কার্যকরী হতে পারে, মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, পৃথিবীর অতীত উৎস সন্ধানেও বালিপাথরের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের পাথর পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাণের অস্তিত্বের হদিস দেয়। পলি আবদ্ধ করে খনিজ পদার্থ অবক্ষেপে যে প্রাচীন অণুজীবদের ভূমিকা ছিল, বালিপাথর থেকেই তার প্রমাণ মিলেছে। গেইল ক্রেটারের বালিপাথরেও মঙ্গলের এমন প্রাচীন ব্যাকটেরিয়ার হদিস মিলতে পারে, আশাবাদী আবু ধাবির গবেষকেরা।

mars Mars Rover NASA Space Science
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy