টুইটারে জিনিয়ার এই ছবিটিই দিয়েছেন স্কট কেলি।
পৃথিবীর হিসেবে সালটা ২০৩৫। ভয়াবহ ধুলোর ঝড় উঠেছে মঙ্গলের মাটিতে। প্রাণ বাঁচাতে মহাকাশযান ‘হারমেস’-এ ফিরে যান অভিযাত্রীরা। পথ হারিয়ে ফেলেন শুধু এক জন। মার্ক ওয়াটনে। শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। খাবারের জোগান বজায় রাখতে মহাকাশচারী নিজেই মঙ্গলের মাটিতে আলুর চাষ শুরু করেন...।
ফিল্মের নাম ‘দ্য মার্শিয়ান’। গত বছর যে ছবি প্রেক্ষাগৃহে দেখেছিল তামাম দুনিয়া (এ বার অস্কারের দৌড়ে), নতুন বছরে সত্যি হল সেটাই। মহাকাশে আগুন-রঙা ‘জিনিয়া’ ফোটালেন মার্কিন নভশ্চর স্কট কেলি!
আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন, সংক্ষেপে আইএসএস)-এ উদ্ভিদের প্রাণের স্পন্দন অবশ্য নতুন নয়। মানুষের বাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহটির ভেজ-ল্যাবে আগেও লেটুস জাতীয় সব্জি ফলানো হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম ফুল ফুটল মহাকাশের ঘরে। স্বাভাবিক ভাবেই গবেষণাগারে নতুন সদস্য আসার খবরে উচ্ছ্বসিত নাসা।
দেখুন গ্যালারি-- মহাকাশে আনাজ, সব্জি, ফুলের ক্ষেতে
আরও পড়ুন-
সৌরমণ্ডলের বুক কাঁপিয়ে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে দানব তারা
প্রোজেক্ট ম্যানেজার ট্রেন্ট স্মিথের কথায়, ‘‘লেটুসের সঙ্গে জিনিয়ার কোনও তুলনাই হয় না।’’ কেন? জিনিয়ার মতো সেটাও রীতিমতো কসরত করে ফলাতে হয়েছে আইএসএস-এর কৃত্রিম আবহাওয়ায়। উত্তরটা দিলেন স্মিথই। বললেন, ‘‘পরিবেশ বা সূর্যালোক, জিনিয়ার জন্য দু’টোই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর দু’টোর কোনওটাই আইএসএস-এ নেই। তা ছাড়া জিনিয়ার জন্ম, বড় হওয়া— এতে সময় লাগে ৬০-৮০ দিন। লেটুসের থেকে বেশি। ফলে লড়াইটাও দীর্ঘ।’’ এই কঠিন কাজটা করতে গিয়ে বেশ চাপের মুখেই পড়তে হয়েছিল গবেষকদের।
কী রকম? আইএসএসের সব্জি বাগানটা বেশি পুরনো নয়। ২০১৪ সালেই তৈরি করা হয়েছিল। লেটুস চাষ সফল হওয়ার পর জিনিয়া লাগান গবেষকরা। কিন্তু গবেষণার প্রথমেই স্কটরা ধাক্কা খান। জল একটু বেশি হয়ে গেলেই পচন ধরতে শুরু করে গাছে। শেষে গাছগুলোকে বাঁচাতে ইলেকট্রিক ফ্যান লাগানো হয়। যাতে গাছের পাতায় লেগে থাকা জল তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। কিন্তু তাতে উল্টো বিপত্তি। এ বার জলাভাবে (ডিহাইড্রেশন হয়ে গিয়ে) একের পর এক গাছ মরতে থাকে। বেঁচে যায় হাতেগোনা কয়েকটি গাছ। তারই মধ্যে একটিতে এখন ফুল ধরেছে। ‘‘দিনটা ছিল ৮ জানুয়ারি...। প্রথম কুঁড়ি আসে,’’ বলছিলেন বিজ্ঞানীরা।
যদিও সব ভাল যার শেষ ভাল, তবু কিছুটা বিমর্ষ স্কট। জানালেন, ফুল ধরেছে ঠিকই। কিন্তু বেশ দুর্বল। পাপড়িগুলো দু’দিক থেকে মুড়ে গিয়েছে। কারণটা অবশ্যই ‘জিরো গ্র্যাভিটি’। আইএসএস-এ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই বললেই চলে।
‘নাসার হিউম্যান রিসার্চ প্রোগ্রাম’ -এর অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী আলেক্সান্দ্রা হিটমায়ার অবশ্য মন খারাপ করতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, এমন কৃত্রিম পরিবেশে জিনিয়ার জন্ম মোটেই ছোটখাটো ব্যাপার নয়। এ বার টোম্যাটো, বাঁধাকপি চাষ করা যেতে পারে। কিন্তু এ সবে লাভটা কী? মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েইছে। তা যদি সত্যিই হয়, সে ক্ষেত্রে খাবারের জন্য আর পৃথিবীর উপর নির্ভর করতে হবে না মহাকাশচারীদের। ফল-সব্জি এ গ্রহ থেকে বয়েও নিয়ে যেতে হবে না। অভিযাত্রীরা নিজেরাই ফসল ফলাতে পারবেন ভিন্ গ্রহের মাটিতে। ঠিক যেমনটা করেছেন মার্ক ওয়াটনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy