Advertisement
E-Paper

বৃহস্পতির মাথার ওপর আস্ত একটা বাস্কেটবলের কোর্ট! দেখুন ভিডিও

৪২ বছর ধরে একটু একটু করে চেষ্টা চালানোর পর এ বার হয়তো সত্যি-সত্যিই আমরা সেই সম্ভ্রমের বেড়ি-বাঁধন ভাঙতে চলেছি! ‘দেখি না কী হয়’ বলে একেবারে সটান পৌঁছে যাচ্ছি ‘গুরুপ্রণাম’ সারতে! বৃহস্পতির দোরগোড়ায়!

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ১৮:০০

আমাদের এই সৌরমণ্ডলের গ্রহ-কূলে তিনিই ‘গুরু’!

আমরা অনেকেরই দ্বারে-দ্বারে ঘুরেছি। তাঁর পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গিয়েছি একাধিক বার। কাছাকাছি যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও এত দিন স্পর্ধা হয়নি আমাদের ‘গুরু’ বৃহস্পতির এতটা কাছে পৌঁছনোর। আমরা ভয় পেয়েছি, সম্ভ্রমে। এই সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড় গ্রহ বলে কথা! শেক্সপিয়র বোধহয় একেই বলেছিলেন ‘রেভারেন্সিয়াল ফিয়ার’!

৪২ বছর ধরে একটু একটু করে চেষ্টা চালানোর পর এ বার হয়তো সত্যি-সত্যিই আমরা সেই সম্ভ্রমের বেড়ি-বাঁধন ভাঙতে চলেছি! ‘দেখি না কী হয়’ বলে একেবারে সটান পৌঁছে যাচ্ছি ‘গুরুপ্রণাম’ সারতে!

আর ঠিক ১৫ দিন পর। জুলাইয়ের ৪ তারিখ সন্ধ্যায় নাসার মহাকাশযান ‘জুনো’ পৌঁছে যাচ্ছে এই সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ- বৃহস্পতির সবচেয়ে কাছে। ‘গুরু গ্রহে’র ওপরে ঘন গ্যাসের মেঘ থেকে মাত্র ২ হাজার ৯০০ মাইল বা, ৪ হাজার ৬৬৭ কিলোমিটার দূরে বৃহস্পতিরই একটি কক্ষপথে। অনন্ত মহাকাশ থেকে ‘জুনো’কে সজোরে ঠেলে বৃহস্পতির কক্ষপথে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য ওই দিন মহাকাশযানটির ‘থ্রাস্টার ইঞ্জিন’ চালু হবে ৩৫ মিনিটের জন্য।


বৃহস্পতির ওপর হরেক রঙা ঘন গ্যাসের মেঘ।

ভয়ে-সম্ব্রমে যার এত কাছাকাছি যাওয়ার সাধ্যে কুলোয়নি আমাদের এত দিন, সেই বৃহস্পতির ওপরে ২০ মাস ধরে প্রতি মুহূর্তে, প্রতি সেকেন্ডে বিছিয়ে রাখতে চলেছি সুবিশাল একটা বাস্কেটবল খেলার কোর্ট। নজরদারির জন্য। ওই ২০ মাসে মোট ৩৭ বার বৃহস্পতির কাছে যাওয়ার কথা ‘জুনো’র। যার ‘দাদাগিরি’ সৌরমণ্ডলের শেষ প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ধুমকেতু, গ্রহাণুর অতর্কিত হানাদারির হাত থেকে কোটি কোটি বছর ধরে বাঁচিয়ে চলেছে পৃথিবীকে, সেই বৃহস্পতির ঘন গ্যাসের মেঘের খুব পুরু চাদরের তলায় কী কী ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতি মুহূর্তে, তার খবরাখবর নিতে। এর আগে বৃহস্পতির এতটা কাছে যাওয়ার সাহসে কুলোয়নি আমাদের। ৪২ বছর আগে, ১৯৭৪-এ নাসার মহাকাশযান ‘পায়োনিয়ার-১১’-ই এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে কাছে পৌঁছেছিল বৃহস্পতির। সেই দূরত্বটা ছিল ২৭ হাজার মাইল বা ৪৩ হাজার কিলোমিটার।

তার দশ ভাগের এক ভাগ দূরত্বে আমরা ‘গুরু গ্রহে’র কাছে পৌঁছে যাব এ বার। আর সপ্তাহদু’য়েক পর।

--------------

৪ জুলাই চোখ রাখুন ফেসবুকে- https://m.facebook.com/NASAJuno

--------------

সম্ভ্রমের বেড়ি-বাঁধন ভেঙেছি! আবার তার অত কাছে যাওয়ার স্পর্ধাও দেখাতে চলেছি! আর তিনি বৃহস্পতি কি ছেড়ে কথা বলবেন?

কী ভাবে এগচ্ছে ‘জুনো’: দেখুন নাসার ভিডিও।


কেন বৃহস্পতির কাছে যাচ্ছি? কী বলছে নাসা? দেখুন ভিডিও।

‘‘বলবেন না, সেটা আমরা জেনে-বুঝেই এগিয়েছিলাম বছরদশেক আগে। ২০১১-য় বৃহস্পতির উদ্দেশে মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিল ‘জুনো’। তার পর পাঁচ বছর ধরে সে একটু একটু করে এগিয়েছে এই সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহটির দিকে। ৪ জুলাই সে আটকে পড়বে বৃহস্পতির মায়াজালে! মানে, বৃহস্পতির দক্ষিণ মেরুর দিককার একটা কক্ষপথে’’, জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরি (জেপিএল)-তে ‘জুনো মিশন’-এর মিডিয়া সেলের অন্যতম মুখপাত্র সুনন্দ মুখোপাধ্যায়।

কী কী বিপদ হতে পারে বৃহস্পতির মতো অত বড় একটা গ্রহের অত কাছাকাছি যাওয়ায়? কী কী খেসারত দিতে হতে পারে অতটা স্পর্ধা দেখানো মহাকাশযান ‘জুনো’-কে?

কত রকমের ‘রুদ্ররোষ’ সইতে হবে ‘জুনো’-কে?

সুনন্দ জানাচ্ছেন, ‘‘বৃহস্পতির কক্ষপথে ঢুকে পড়লেই, তার ওপরে থাকা অত্যন্ত ঘন গ্যাসের উত্তাল মেঘের ঝাপটা সইতে হবে ‘জুনো’-কে। বৃহস্পতির সেই ঘন গ্যাসের মেঘের চার-চারটি রং রয়েছে। কমলা, সাদা, লাল ও বাদামি। ওই চার রঙের গ্যাসের মেঘই গোটা বৃহস্পতিকে কার্যত, ঢেকে রয়েছে। ‘গুরু’র কাছে পৌঁছনো কি অত সহজ! অনেক বাধা পেরিয়ে যেতে হয় ‘গুরু’র কাছে, তাঁকে সামনে থেকে পাওয়ার জন্য! বৃহস্পতির ক্ষেত্রেও তেমনই রয়েছে হরেক রকমের বাধা। পদে পদে। যেমন, ওই ঘন গ্যাসের মেঘের ঠিক তলাতেই রয়েছে হাইড্রোজেন গ্যাসের একটি অসম্ভব রকমের পুরু ‘চাদর’। সাধারণত, আমরা যে হাইড্রোজেন গ্যাস পাই পৃথিবীতে, তা অধাতু (নন-মেটাল) বলে, বিদ্যুৎ পরিবহণ করতে পারে না। কিন্তু, বৃহস্পতিতে ওই হাইড্রোজেন গ্যাস থাকে অসম্ভব চাপে। অতটা চাপে হাইড্রোজেন গ্যাস বিদ্যুৎ পরিবাহী (ইলেক্ট্রিক্যাল কনডাক্টর) হয়ে পড়ে বৃহস্পতি গ্রহে। যেটা মূলত একটা ধাতব (মেটালিক) ধর্ম। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বৃহস্পতির অসম্ভব রকমের দ্রুত ঘূর্ণন গতি। আমাদের পৃথিবী তার নিজের কক্ষপথে লাট্টুর মতো ঘোরে ২৪ ঘণ্টায়। আর বৃহস্পতি নিজের চার দিকে এত বেশি জোরে ঘোরে যে তার ক্ষেত্রে ওই সময়টা লাগে বড়জোর ১০ ঘণ্টা। অসম্ভব জোরে বৃহস্পতির লাট্টুর মতো ঘোরা আর হাইড্রোজেন গ্যাসের বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে পড়া- এই দু’য়ে মিলে ‘গুরু গ্রহে’র চার পাশে খুব শক্তিশালী একটা চৌম্বক ক্ষেত্র (ম্যাগনেটিক ফিল্ড) তৈরি করে। তার ফলে বৃহস্পতির ওপরে রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রোটন, ইলেকট্রনের মতো শক্তিশালী কণা বা ‘আয়ন’। যেহেতু বৃহস্পতির চৌম্বক ক্ষেত্র খুব শক্তিশালী, তাই সেই কণাগুলো তার ‘মায়াজাল’ কাটিয়ে বেশি দূরে যেতে পারে না। কিন্তু সেগুলো ছোটাছুটি করে একেবারে আলোর কণা ‘ফোটন’-এর মতোই অসম্ভব ঝোড়ো গতিতে। তাই মহাকাশযান যত বেশি কাছে যাবে বৃহস্পতির, ততই ওই সব শক্তিশালী কণার লাগাতার ঝাপটা তাকে সইতে হবে। যে ২০ মাস ধরে ‘জুনো’ থাকবে বৃহস্পতির কক্ষপথে, আমরা হিসেব কষে দেখেছি, সেই সময়ে অন্তত ১০ কোটি অত্যন্ত শক্তিশালী এক্স-রে কণার (দাঁতের এক্স-রে’তে যা লাগে) ঝাপটা সইতে হবে ওই মহাকাশযানটিকে।’’

‘গুরু’ বৃহস্পতির ‘রুদ্ররোষ’ থেকে কী ভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করা হবে ‘জুনো’-কে?

সুনন্দ জানাচ্ছেন, ‘‘সেই জন্যই আমরা বৃহস্পতির এমন একটা কক্ষপথ বেছে নিয়েছি, যেটায় থাকলে ওই শক্তিশালী কণাদের ঝাপটা তুলনামুলক ভাবে কিছুটা কম সইতে হবে ‘জুনো’-কে। সেটা আসলে বৃহস্পতির উত্তর মেরু। প্রাথমিক ভাবে, ৪ জুলাই, বৃহস্পতির যে কক্ষপথে ঢুকে পড়বে ‘জুনো’। সেই কক্ষপথটা দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা ডিমের মতো। সেই কক্ষপথটা ধরেই ‘জুনো’-কে নিয়ে যাওয়া হবে বৃহস্পতির দক্ষিণ মেরুতে। ২৪ ঘণ্টার (পার্থিব দিন) বেশি সময় ধরে বৃহস্পতির কাছে রাখাও যাবে না ‘জুনো’-কে। তা হলে কণাদের ঝাপটায় এঅকেবারে সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে মহাকাশযানটির। দক্ষিণ মেরুর দিকে নিয়ে যাওয়া হলে কণাদের সেই ঝাপটাটা কম হবে, তুলনামূলক ভাবে।’’

৪ জুলাই: আমরা বৃহস্পতির সবচেয়ে কাছে: দেখুন ভিডিও।

বৃহস্পতির ‘রুদ্ররোষ’ থেকে বাঁচাতে আর কী কী ‘বর্ম’ রাখা হয়েছে ‘জুনো’র শরীরে?


বৃহস্পতিতে কণার ঝাপটা থেকে ‘জুনো’কে বাঁচাবে এই ‘টাইটানিয়াম ভল্ট’।

সুনন্দ বলছেন, ‘‘তার জন্য ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং, শিল্ডিং ছাড়াও একটা বিশেষ রকমের ‘বর্ম’ বানানো হয়েছে। টাইটানিয়াম ধাতু দিয়ে বানানো ওই ‘বর্মে’র নাম- ‘টাইটানিয়াম ভল্ট’। প্রায় ৪০০ পাউন্ড (১৭২ কেজি) ওজনের সেই ‘টাইটানিয়াম ভল্ট’-ই শক্তিশালী কণাদের নিরন্তর ঝাপটার সম্ভাবনা অন্তত ৮০০ ভাগ কমিয়ে দেবে। ওই ‘ভল্ট’ না থাকলে প্রথম বার বৃহস্পতির কাছে এসে দূরে চলে যাওয়ার আগেই শক্তিশালী কণাদের ঝাপটায় ‘জুনো’র সব ইলেকট্রনিক যন্ত্র বিকল হয়ে যেত। তবে এর পরেও নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই। কারণ দীর্ঘ ২০ মাসে ওই সব শক্তিশালী কণার কিছুটা তো ‘ভল্টে’ ঢুকে পড়বেই। আর তাদের নিরন্তর ঝাপটায় ‘জুনো’র ভেতরকার ইলেকট্রনিক যন্ত্রাদির পরমাণু বন্ধন (অ্যাটমিক বন্ড) ভেঙেচুরে যাবেই।’’

আরও পড়ুন- ভুতুড়ে আলো, মানুষের মুখ, অতল খাদ মঙ্গলে? দেখুন সেই ভিডিও

ছবি ও ভিডিও সৌজন্য: নাসা।

NASA's Juno Spacecraft to Risk Jupiter's Fireworks
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy