Advertisement
E-Paper

ব্রহ্মাণ্ডে এ বার আরও উন্নত সভ্যতা খুঁজবে নাসা

এই মাসে মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা নাসার রিপোর্টে এমনই ইঙ্গিত মিলেছে।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৫:৫৯
একটি অত্যন্ত গরম নক্ষত্র বেলুনের মতো ‘বুদবুদ’ বানিয়ে চলেছে। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ‘বাব্‌ল নেবুলা’র ছবি।

একটি অত্যন্ত গরম নক্ষত্র বেলুনের মতো ‘বুদবুদ’ বানিয়ে চলেছে। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ‘বাব্‌ল নেবুলা’র ছবি।

এই ব্রহ্মাণ্ডে তা হলে আমরা একা নই? প্রাণ ছড়িয়ে রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের আরও কোথাও? আরও কোনওখানে? আর তা শুধুই অণুজীব নয়, রয়েছে আমাদের চেয়েও অনেক উন্নত সভ্যতা?

এই মাসে মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা নাসার রিপোর্টে এমনই ইঙ্গিত মিলেছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আর শুধুই অণুজীব বা প্রাণ সৃষ্টির সহায়ক জৈব অণুর সন্ধান নয়। ব্রহ্মাণ্ডে এ বার আরও উন্নত সভ্যতার খোঁজে জোর তল্লাশি চালাবে নাসা।

ড্রেক সমীকরণ বলছে, একটা-দু’টো নয়, প্রযুক্তির দিক থেকে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা এমন সভ্যতার সংখ্যা খুব বেশি হলে হতে পারে ১০ হাজার। কিন্তু অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তিই সেই সভ্যতাগুলিকে আমাদের চোখের আড়ালে রেখে দিয়েছে। এ বার সেই সভ্যতাগুলিকে খুঁজে বের করাটাই হতে চলেছে আগামী দশক থেকে নাসার অন্যতম প্রধান কর্মসূচি।

সেপ্টেম্বরে নাসা এই রিপোর্ট দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে

নাসার ওই রিপোর্টের শিরোনাম- ‘ন্যাশনাল স্পেস এক্সপ্লোরেশন ক্যাম্পেন রিপোর্ট’। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুদূর অতীতে প্রাণ ছিল কি না বা এখনও তা টিঁকে রয়েছে কি না, তা নিয়ে গত কয়েক দশক ধরেই তল্লাশি শুরু হয়েছে ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে। আর কিছু দিনের মধ্যেই সেই সন্ধান শুরু হয়ে যাবে বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপায়। কিন্তু সেই সবই কোনও অণুজীব বা প্রাণ সৃষ্টির সহায়ক জৈব অণু বা যৌগিক পদার্থের সন্ধান। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম- ‘বায়ো সিগনেচার’।

কেন প্রয়োজন টেকনো সিগনেচারের সন্ধান?

এখন ব্রহ্মাণ্ডের ভিন মুলুকে প্রাণ খোঁজার হাতিয়ার আরও জোরালো হয়েছে। মহাকাশে বসানো হয়েছে কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ। যার দৌলতে ইতিমধ্যেই আমাদের সৌরমণ্ডলের চৌহদ্দি পেরিয়ে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ভিন গ্রহের হদিশ মিলেছে। পাঠানো হয়েছে ‘টেস’ মহাকাশযান। ফলে, ভিন মুলুকে আরও আরও গ্রহের হদিশ মেলার সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছে। তাই প্রযুক্তির দিক থেকে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা ভিনগ্রহীদের খুঁজে বের করায় উৎসাহী হয়ে উঠেছে নাসা।

আরও পড়ুন- কেন সূর্যের ১০ লক্ষ ডিগ্রিতেও গলবে না পার্কার মহাকাশযান​

আরও পড়ুন- পৃথিবীর ২৫ হাজার গুণ বড় গ্রহের সন্ধান দিলেন বাঙালি বিজ্ঞানীরা​

সেই ‘ট্যাবি নক্ষত্র’-এর ‘মেগা-স্ট্রাকচার’, যা ভিনগ্রহীদের বানানো বলে ভুল ধারণা ছিল বিজ্ঞানীদের একাংশের

পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরির ভিনগ্রহ গবেষণা বিভাগের অন্যতম দুই বিজ্ঞানী, অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় বংশোদ্ভূত অধ্যাপক বিষ্ণু নারায়ণমূর্তি ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এ বছর এপ্রিলে মার্কিন কংগ্রেস এ ব্যাপারে নাসাকে আরও উদ্যোগী হতে বলেছিল। তারই প্রেক্ষিতে এ মাসে কংগ্রেসে ওই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ব্রহ্মাণ্ডে এ বার শুধুই বায়ো সিগনেচার নয়, টেকনো সিগনেচারও খুঁজবে নাসা। খুঁজবে প্রযুক্তির দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা সভ্যতাগুলিকে। যে সভ্যতাগুলি উন্নততর প্রযুক্তির ভাবনা ভাবতে পারে। সেই প্রযুক্তিকে নিজেদের জীবনে ব্যবহার করতে পারে।

টেকনো সিগনেচার বলতে কী বোঝায়?

ধ্রুবজ্যোতি বলছেন, ‘‘টেকনো সিগনেচার বলতে সাধারণত রেডিও সিগন্যাল বোঝায়। কিন্তু আরও অনেক ধনের সিগন্যাল থাকতে পারে, যাদের হালহদিশ আমরা এখনও জানতে পারিনি। সেগুলি কী ধরনের হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করতে হিউস্টনে বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিন দিনের ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে নাসা। যার নাম- ‘নাসা টেকনো সিগনেচার ওয়ার্কশপ’।’’

নারায়ণমূর্তির কথায়, ‘‘ওই টেকনো সিগনেচারগুলি হতে পারে রেডিও সিগন্যাল বা লেসার রশ্মি। অথবা তা হতে পারে উন্নততর সভ্যতাগুলির বানানো কোনও মেগা-স্ট্রাকচার বা প্রকাণ্ড কাঠামো। এমনকি কোনও ভিন গ্রহের বায়ুমণ্ডলে যদি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় দূষণ-কণা, তা হলেও বুঝে নিতে হবে সেই কণাগুলির জন্ম দিয়েছে কোনও উন্নত সভ্যতাই। কারণ, এখনও পর্যন্ত আমরা যেটুকু জানি, তাতে অণুজীব কোনও দূষণ-কণার জন্ম দিতে পারে না।’’

ব্রহ্মাণ্ডের অন্যত্র উন্নত মেধা সম্ভব: নাসা

তবে টেকনো সিগনেচার নিয়ে জল্পনার সূত্রপাত হয়েছিল কিন্তু গত শতাব্দীতেই। ২০১৫ সালে নাসার অ্যাস্ট্রোবায়োলজি স্ট্র্যাটেজির স্টেটাস রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ‘‘যে ভিন গ্রহগুলির হদিশ মিলেছে, আর তাদের তাপমাত্রা, ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে যে সব তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে সেখানে জটিল প্রাণের অস্তিত্ব আর তাদের উন্নত মেধার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’

ড্রেক ইকোয়েশন ও ফের্মি প্যারাডক্স

১৯৬১ সালে বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক তাঁর তাত্ত্বিক সমীকরণে দেখিয়েছিলেন, উন্নত মেধাবী সভ্যতার সংখ্যা এই ব্রহ্মাণ্ডে অন্তত ১০ হাজার হতে পারে। আবার ইতালিয় বিজ্ঞানী এনরিকো ফের্মির ‘ফের্মি প্যারাডক্স’ বলেছিল, যদি সত্যি সত্যিই উন্নত প্রাণ এই ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও থেকে থাকে, তা হলে এত দিন তাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়ে যেতই!

ছবি সৌজন্যে: নাসা

Technosignature Extraterrestrial Life NASA টেকনোসিগনেচার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy