Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘ঈশ্বর কণা’র আরও এক রূপ দেখতে পেল সার্ন!

এক পলকের দেখা! খুব সামান্য সময়ের জন্য হলেও ঈশ্বরের সঙ্গে মোলাকাত হয়ে গেল সার্নের কণা পদার্থবিদদের!

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৫ ১৩:২৯
Share: Save:

এক পলকের দেখা!

খুব সামান্য সময়ের জন্য হলেও ঈশ্বরের সঙ্গে মোলাকাত হয়ে গেল সার্নের কণা পদার্থবিদদের!

জেনিভার অদূরে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের (এলএইচসি) সুড়ঙ্গ গবেষণাগারে ঈশ্বরের অন্য রূপ দেখতে পেল সার্ন!

হদিশ মিলল আরও এক ধরনের ‘ঈশ্বর কণা’র। যার ভর বছর দু’য়েক আগে খোঁজ মেলা ‘ঈশ্বর কণা’ বা হিগ্‌স বোসনের চেয়ে অনেকটাই বেশি। গণিতের মানদণ্ডে ১৪৫ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট (জিইভি)। ২০১৩-য় যে ‘ঈশ্বর কণা’র আবিষ্কার নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল গোটা বিশ্ব, তার ভর ছিল ১২৫ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট (জিইভি)।

সার্নের আমন্ত্রণে জেনিভায় উড়ে যাওয়ার আগে আজ এই খবর দিয়েছেন পরমাণু শক্তি মন্ত্রকের ভূতপূর্ব হোমি ভাবা অধ্যাপক, ‘পদ্মভূষণ’ বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ।


প্রোটন কণাদের সঙ্ঘর্ষ। সার্নের এলএইচিসি-তে।

তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এক পলকের জন্য দেখতে পেয়েছি ঈশ্বরের অন্য রূপ। আরও এক ধরনের ‘ঈশ্বর কণা’ বা, হিগ্‌স বোসন। সদ্য খোঁজ মেলা এই কণাকে ‘হিগ্‌স ট্রিপলেট’ বা হিগ্‌স পরিবারের সদস্য বলেই মনে করা হচ্ছে।’’

কেন ওই নতুন কণার আবিষ্কারের কথা সার্নের তরফে সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে না?

বিকাশবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘কোনও নতুন কণা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা ‘ফাইভ সিগমা কনফার্মেশন’-এর মানদণ্ডে নিশ্চিত হতে না পারলে, সেই কণার আবিষ্কারের কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয় না। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, এ বছরের এপ্রিলে দ্বিতীয় পর্যায়ে এলএইচসি চালু হওয়ার পর হিগ্‌স পরিবারের এই নতুন সদস্যের হদিশ মিলেছে। কিন্তু, খুব ভোরে আমার-আপনার বাড়ির সামনের হাইওয়েতে যদি এক দিন হঠাৎ একশোটি ট্রাককে আসা-যাওয়া করতে দেখি, তা হলে সেই দিনই কি আমরা বলতে পারি যে, আমাদের বাড়ির সামনের হাইওয়েটা দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত জাতীয় সড়ক? সে কথাটা বলতে হলে, আমাদের আরও কিছু দিন দেখতে হবে, খুব ভোরে ওই হাইওয়ে দিয়ে গড়ে কতগুলি ট্রাক আসা-যাওয়া করছে। আমরা বিজ্ঞানীরাও আরও কয়েক লক্ষ কোটি প্রোটন কণাদের মুখোমুখি সঙ্ঘর্ষ ঘটিয়ে ‘ঈশ্বরে’র ওই নতুন রূপ বার বার দেখতে চাইছি। তা দেখা গেলেই ওই নতুন কণার আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হবে।’’

সার্নের কণা পদার্থবিদদের বদ্ধমূল বিশ্বাস, ‘ঈশ্বরের বহু রূপ’ আছেই। তাদের কেউ কেউ এক পলকের দেখা দিয়েই হারিয়ে যায়। যেমন, এর আগেও দশ বা তিরিশ গিগা ইলেকট্রন ভরের ‘ঈশ্বর কণা’ দেখা গিয়েছিল এলএইচসি-তে। কিন্তু তা দেখা গিয়েছিল মাত্র এক মূহুর্তের জন্যই। পরে আর তার হদিশ মেলেনি।

বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ

বিকাশবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘সব কণা আর পদার্থের কতটা, কী ভর হবে, তা ঠিক করে দেয় ‘ঈশ্বর কণা’ই। ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পরপরই ওই কণার জন্ম হয়েছিল। ওই কণা না থাকলে কোনও মহাজাগতিক বস্তুই থাকত না। তাই ওই কণাকে নিয়ে এত আলোচনা। স্টিভেন ওয়েইনবার্গের স্ট্যান্ডার্ড মডেল বলছে, অন্তত তিন ধরনের হিগ্‌স বোসন থাকতেই হবে। যার মধ্যে মাত্র এক ধরনের ‘ঈশ্বরে’র দেখা মিলেছিল ২০১৩-য়। সদ্য খোঁজ মেলা কণাটি যদি সেই ‘ঈশ্বরে’র আরও একটি রূপ হয়, তা হলে তার একটি তৃতীয় রূপও রয়েছে। তার দেখা মেলেনি এখনও। অনেকটা যেমন কালীরই আরেকটি রূপ তারা, বা বগলা বা কামাক্ষ্যা। আবার দেবকূলে থেকেও যেমন শিব কোনও নিয়ম মানেন না, তেমনই স্ট্যান্ডার্ড মডেল মানে না, এমন অন্তত পাঁচ রকমের ‘ঈশ্বর কণা’র হদিশ মিলতে পারে। সেগুলি হবে ‘ডার্ক হিগ্‌স বোসন’। আর তা হবে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। কারণ, সেই ‘ঈশ্বর’ তো এখনও পর্যন্ত অধরাই আমাদের কাছে। নিরাকার ব্রহ্মের মতোই!’’

মোদ্দা কথাটা হল, এখন সার্ন চাইছে, এক পলকের দেখা আরও একটু হলে ক্ষতি কী?

সেই ‘ঈশ্বর’ সাকার হোক বা না নিরাকার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

god particle cern higgs boson
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE