পৃথিবীর মতো মঙ্গল গ্রহেও বায়ুমণ্ডল রয়েছে। দুই গ্রহের যেমন কিছু ক্ষেত্রে মিল রয়েছে, তেমন অমিলও রয়েছে অনেক। যেমন মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডই বেশি। এই লালচে গ্রহকে নিয়ে কৌতূহলও অনেক। মঙ্গল গ্রহের ভিতরে কী রয়েছে, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় তারই খোঁজ পেয়েছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে কোনও এক প্রকাণ্ড মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়েছিল মঙ্গল গ্রহে। ঠিক কিসের সঙ্গে মঙ্গলগ্রহ ধাক্কা খেয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে মঙ্গলগ্রহের অভ্যন্তরে এখনও রয়ে গিয়েছে সেই মহাজাগতিক বস্তুর অবশিষ্টাংশ। কোনও গ্রহকে গঠনের দিক থেকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়— গ্রহের একেবারে কেন্দ্রভাগ বা ‘কোর’, পৃষ্ঠদেশ এবং এই দুইয়ের মাঝের অংশ ‘ম্যান্টল’ (কেন্দ্রভাগের আবরণী)। মঙ্গলের ‘কোর’ এবং পৃষ্ঠদেশের মাঝের আস্তারণে লুকিয়ে রয়েছে ধাক্কা খাওয়া মহাজাগতিক বস্তুর অবশিষ্টাংশ।
আরও পড়ুন:
মঙ্গল গ্রহের বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০১৮ সালে ‘ইনসাইট’ ল্যান্ডার পাঠায় নাসা। ওই বছরের নভেম্বরে মঙ্গলে অবতরণ করে ‘ইনসাইট’, যার কাজ ছিল লাল গ্রহের ভূমিকম্প সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা। ২০২২ সাল পর্যন্ত ‘ইনসাইট’ মঙ্গল গ্রহের ১৩১৯টি কম্পনকে চিহ্নিত করেছে। তা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেই মঙ্গলের ‘ম্যান্টল’-এর বিষয়ে নতুন তথ্য খুঁজে পেয়েছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। ব্রিটিশ মহাকাশ বিজ্ঞানী কনস্টান্টিনোস চার্লামবুসের নেতৃত্বে একটি দল মঙ্গল গ্রহের আটটি ভূমিকম্পের তরঙ্গ বিশ্লেষণ করেন।
ওই গবেষণায় উঠে এসেছে, সৌরজগত সৃষ্টির আদি লগ্নে বড় আকারের একটি মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়েছিল মঙ্গলগ্রহে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, সেটি উল্কাপিণ্ড জাতীয় কোনও বস্তু হতে পারে। ওই মহাজাগতিক বস্তুর কিছু অংশ মঙ্গল গ্রহের ‘ম্যান্টল’-এও ঢুকে গিয়েছে এবং তা এখনও টুকরো টুকরো অবস্থায় ছড়িয়ে রয়েছে। মঙ্গল গ্রহের ‘ম্যান্টল’-এ প্রায় চার কিলোমিটার অংশজুড়ে এটি ছড়িয়ে রয়েছে।
বস্তুত, সৌরমণ্ডল সৃষ্টির লগ্নে মহাকাশে এমন অনেক বস্তুই গ্রহগুলির সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করা হয়। পৃথিবীর ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর ‘ম্যান্টলে’ বর্তমানে এমন কিছুই আর আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যায় না। তা দেখে গবেষকদের অনুমান, পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গল গ্রহের ‘ম্যান্টস’ তুলনামূলক ধীরগতিতে বিকশিত হয়েছে। গবেষকদলের প্রধাম চার্লামবুসের কথায়, “এর আগে কোনও গ্রহের অভ্যন্তর ভাগ এত স্পষ্ট এবং সূক্ষ্ম ভাবে দেখা যায়নি। আমরা প্রাচীন সময়ের কিছু টুকরোয় ভরা একটি ‘ম্যান্টল’ দেখতে পাচ্ছি। সম্ভবত মঙ্গলের ‘ম্যান্টল’ তুলনামূলক ধীরে বিকশিত হয়েছে। সেই কারণেই এই টুকরোগুলি এত দিন পর্যন্ত রয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা আর দেখা যায় না।”