Advertisement
E-Paper

হকিংয়ের ধারণাই কি সত্যি হতে চলেছে? কৃষ্ণগহ্বর-তত্ত্ব বদলে দিতে পারে সদ্য আবিষ্কৃত ‘লাল বিন্দু’

নক্ষত্রের ‘মৃত্যু’র ফলে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হয়। ফলে কোনও ছায়াপথের মধ্যেই কোথাও এই কৃষ্ণগহ্বরগুলি সাধারণত থেকে যাওয়ার কথা। কিন্তু নতুন খুঁজে পাওয়া কৃষ্ণগহ্বরের আশপাশে কোনও ছায়াপথের দেখা মেলেনি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০০
নতুন একটি কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ পেলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা।

নতুন একটি কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ পেলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। (এআই সহায়তায় প্রণীত)

নাসার টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে এক ছোট লালচে বিন্দু। না, কোনও নক্ষত্র নয়। এটি একটি ‘ব্ল্যাক হোল’ বা কৃষ্ণগহ্বর। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজই ওলটপালট করে দিতে পারে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদিম ইতিহাস।

মহাকাশ গবেষণার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির সময়ে আগে তৈরি হয়েছে নক্ষত্র এবং ছায়াপথ। খুব বেশি ভরের নক্ষত্রের ‘মৃত্যু’ হলে (কেন্দ্রে হাইড্রোজেন ফিউশন বন্ধ হয়ে গেলে), বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সেটি সঙ্কুচিত হতে হতে কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির সময়ে আগে নক্ষত্র সৃষ্টি হয়েছে। তার পরে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হয়েছে। কিন্তু নতুন কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ বদলে দিতে পারে সেই ধারণা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ‘বিগ ব্যাং’ বা মহাবিস্ফোরণের ঠিক পরক্ষণেই সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে এই আদিম কৃষ্ণগহ্বরটি। মহাকাশবিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘কিউএসও১’।

পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের গবেষণায় এমন আদিম কৃষ্ণগহ্বরের উল্লেখ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনও প্রামাণ্য তথ্য ছিল না বিজ্ঞানীদের কাছে। মহাকাশ গবেষণার টেলিস্কোপে এমন কোনও কৃষ্ণগহ্বর এতদিন ধরা পড়েনি, যা হকিংয়ের তত্ত্বকে জোরালো করে। তবে ‘কিউএসও১’ বদলে দিতে পারে হিসাব। যদি সত্যিই এটি আদিম কৃষ্ণগহ্বর বলে নিশ্চিত হতে পারেন বিজ্ঞানীরা, তবে কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টির প্রচলিত তত্ত্ব বদলে যেতে পারে।

ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির সবচেয়ে স্বীকৃত তত্ত্ব হল ‘বিগ ব্যাং থিয়োরি’ বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব। ওই তত্ত্ব অনুসারে, মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল একটি বিন্দু থেকে। বিন্দুটি প্রবল বিস্ফোরণের ফলে সম্প্রসারিত হতে থাকে এবং তা থেকে বর্তমান ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়। তত্ত্ব অনুসারে, এই মহাবিস্ফোরণ হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ‘কিউএসও১’-এর বয়স ১৩০০ কোটি বছরেরও বেশি। অর্থাৎ, ব্রহ্মাণ্ডের শিশুকালেই এই ব্ল্যাকহোলের জন্ম।

কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টির প্রচলিত তত্ত্ব

বর্তমানে প্রচলিত তত্ত্ব অনুসারে, কোনও নক্ষত্রের ‘মৃত্যু’র পরে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তা থেকে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনও নক্ষত্রের ভর যদি আমাদের সূর্যের ভরের ২০ গুণ বা তার বেশি হয়, সেই নক্ষত্রটির ‘মৃত্যু’ হলে সেটি সঙ্কুচিত হয়ে কৃষ্ণগহ্বর তৈরির সম্ভাবনা থাকে। কৃষ্ণগহ্বরগুলির মহাকর্ষ বল এতটাই শক্তিশালী যে এর মধ্যে আলো গিয়ে পড়লেও তা আর বেরিয়ে আসতে পারে না। তাই এর ভিতরে কী রয়েছে, তা মহাকাশ গবেষণার টেলিস্কোপেও ধরা পড়ে না।

‘কিউএসও১’ কেন আলাদা?

নক্ষত্রের ‘মৃত্যু’র ফলে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হয়। ফলে কোনও ছায়াপথের মধ্যেই কোথাও এই কৃষ্ণগহ্বরগুলি সাধারণত থেকে যাওয়ার কথা। যেমন আমাদের ছায়াপথ ‘মিল্কি ওয়ে’ বা আকাশগঙ্গার ঠিক মাঝখানে রয়েছে ‘স্যাজিটেরিয়াস এ’ কৃষ্ণগহ্বর। এ ছাড়া আরও কিছু কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে আমাদের ছায়াপথে। তবে ‘কিউএসও১’-এর আশপাশে কোনও ছায়াপথের হদিস মেলেনি। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য তথা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাজাগতিক বিষয়ের গবেষক রবার্টো মায়োলিনোর কথায়, “এই কৃষ্ণগহ্বরটি প্রায় ‘নগ্ন’ অবস্থায় রয়েছে। আপাত ভাবে মনে হচ্ছে আশপাশের কোনও ছায়াপথ ছাড়াই এটি তৈরি হয়েছে। এটি বর্তমান তত্ত্বগুলির জন্য সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জ।”

নাসার ‘জেম্‌স ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে’ ধরা পড়েছে লাল রঙের ‘কিউএসও১’।

নাসার ‘জেম্‌স ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে’ ধরা পড়েছে লাল রঙের ‘কিউএসও১’। ছবি: সংগৃহীত।

আদিম কৃষ্ণগহ্বর কী

আদিম কৃষ্ণগহ্বর এখনও পর্যন্ত শুধু একটি ধারণা হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। এর কোনও প্রকৃষ্ট প্রমাণ মেলেনি। হকিং প্রথম এই ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন। তাঁর ধারণায়, মহাবিস্ফোরণের পরে প্রথম এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে ঘন এবং উত্তপ্ত অঞ্চলগুলি নিজেদের মধ্যে ধাক্কা খেয়ে আদিম কৃষ্ণগহ্বরগুলি তৈরি হয়েছিল। অর্থাৎ, ব্রহ্মাণ্ড শুরুর সময় থেকেই বিভিন্ন কৃষ্ণগহ্বর ছড়িয়েছিল এবং তখন থেকেই সেগুলি মহাকর্ষীয় পকেট হিসাব কাজ করত। তার চার পাশে ধুলো এবং গ্যাস জমতে শুরু করে, যা থেকে পরবর্তী সময়ে প্রারম্ভিক কালের ছায়াপথগুলি তৈরি হয়। ১৯৭০-এর দশকে হকিং এই তত্ত্বের কথা বললেও এর সপক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি। ফলে হকিংয়ের তত্ত্বকে স্রেফ অনুমানমূলক বলেই মনে করা হত।

সম্প্রতি নাসার ‘জেম্‌স ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে’ কিছু বিন্দু ধরা পড়েছে। তার মধ্যে রয়েছে লাল রঙের একটি বিন্দু, যা অত্যন্ত ঘন এবং উজ্জ্বল। এর চারপাশে গ্যাস এবং ধূলিকণার ঘূর্ণায়মান বলয়ও দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকেরা এটির নাম দিয়েছেন ‘কিউএসও১’। এই বিন্দুর বয়স দেখে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এটি একটি আদিম কৃষ্ণগহ্বর হতে পারে। গবেষণায় এই বিন্দুর মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৫ কোটি সৌর ভর (আমাদের সূর্যের ভরকে ধ্রুবক ধরে অন্য মহাজাগতিক বস্তুত ভরের হিসাব) পাওয়া গিয়েছে। এর চারপাশে যে পদার্থগুলি ঘুরছে, তার মোট ভর এর অর্ধেকেরও কম।

History Of Black Hole Space Big Bang Theory
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy