আজ থেকে প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের সমস্ত ভর একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত ছিল। এই কেন্দ্রীভূত অবস্থাকে বলা হয় ‘সিঙ্গুলারিটি’। প্রচণ্ড শক্তিতে বিন্দুটি বিস্ফোরিত হল এবং সব ভর এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। এই বিস্ফোরণকেই বলা হয় বিগ ব্যাং। তার পর এই ছড়িয়ে পড়া চলতেই থাকল, সম্প্রসারিত হতে থাকল মহাবিশ্ব। এই সম্প্রসারণ প্রথম ধরা পড়ে ১৯২৯ সালে আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবলের তৈরি হাবল টেলিস্কোপে।
বিংশ শতাব্দীর বিস্ময়কর আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি হল, আমাদের চার পাশে গাছপালা, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, গ্রহ-উপগ্রহ, গ্যালাক্সি-সহ যে সমস্ত দৃশ্যমান জড় পদার্থগুলি আমরা দেখি, তারা এই মহাবিশ্বের মোট ভরশক্তির পাঁচ শতাংশ মাত্র। বাকি ৯৫ শতাংশ সম্পূর্ণ অদৃশ্য, অজানা, রহস্যময় এক অন্ধকার জগৎ। এই মহাবিশ্বের মোট ভর, দৃশ্যমান ভরের চেয়ে অনেক বেশি। জানার চেয়ে অজানাই অনেক বেশি। এই ৯৫ শতাংশের মধ্যে ৭০ শতাংশ হল ডার্ক এনার্জি এবং ২৫ শতাংশ হল ডার্ক ম্যাটার। এখন প্রশ্ন হল, এই ৯৫ শতাংশ গুপ্ত ভরশক্তিকে যাচাই করব কী করে? বিজ্ঞানীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা ৯৫ শতাংশ গুপ্ত ভরশক্তিকে বিজ্ঞানীরা যাচাই করেছেন মহাকর্ষ বলের কষ্টিপাথরে।
ডার্ক ম্যাটার হচ্ছে সেই ধরনের পদার্থ, যেটা আসলে যে কী ধরনের পদার্থ, সে সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। এর উৎস কী আর কী দিয়েই বা এটা তৈরি, তাও সম্পূর্ণ অজানা। আলোর সঙ্গে সম্ভবত এর এক ধরনের শত্রুতা রয়েছে, কারণ ডার্ক ম্যাটার ভুলেও আলোর সঙ্গে পদার্থবিদ্যা সম্পর্কিত কোনও রকম সম্পর্কে জড়ায় না। সে আলো শোষণ করে না, আলো প্রতিফলন, প্রতিসরণ বা বিচ্ছুরণও করে না। ফলে একে দেখাও যায় না। বিজ্ঞানীরা বলেন, ডার্ক ম্যাটার ছড়িয়ে রয়েছে মহাবিশ্বের এখানে-ওখানে সর্বত্র। তবু তাদের দেখা মিলছে না কেন? এর কারণ মূলত তিনটি— এরা অদৃশ্য, কোনও যন্ত্র বা ডিটেক্টর দিয়ে এদের শনাক্ত করা যায় না, এবং অন্য কোনও পদার্থের সঙ্গে কোনও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে না।