Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Smartphone

Smartphones: ঠিক ভাবে ব্যবহার করলে পরীক্ষার ফল ভাল করার সহায়ক হয় স্মার্টফোন

ফিনল্যান্ডের আলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি গবেষণা পত্রিকা ‘কম্পিউটার্স ইন হিউম্যান বিহেভিয়ার’-এ।

-ফাইল ছবি।

-ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:৪৬
Share: Save:

না, বারোটা বাজে না।

সারাক্ষণ মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকলে পরীক্ষায় ডাহা ফেল, কথাটি একেবারেই সত্যি নয়!

বরং স্মার্টফোন পড়ুয়াদের আরও পড়া আরও জানা আরও শেখার আগ্রহ বাড়ায়। তার পরিণতি ভালই হয়। ভাল হয় পড়ুয়াদের পরীক্ষার ফলাফল।

শুধু একটা ‘যদি’ আছে। স্মার্টফোনকে যদি ঠিকঠাক ভাবে ব্যবহার করা যায়।

এমনটাই জানিয়েছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা। ফিনল্যান্ডের আলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি গবেষণা পত্রিকা ‘কম্পিউটার্স ইন হিউম্যান বিহেভিয়ার’-এ। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘রিভিজিটিং দ্য রিলেশনশিপ বিটুইন স্মার্টফোন ইউজ অ্যান্ড অ্যাকাডেমিক পারফরম্যান্স’।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, এটি একটি বড় মাপের গবেষণা। কারণ, গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীর উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে।

গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন প্রায় সারাক্ষণই যাঁদের চোখ পড়ে থাকে স্মার্টফোনের পর্দায়, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সেই সব ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষার ফলাফলের কি সত্যি সত্যিই বারোটা বেজে যায়? পরীক্ষায় কি তাঁরা ডাহা ফেল করেন হামেশাই?

গবেষকরা দেখেছেন, ধারণাটা একেবারেই ভুল প্রমাণিত হয় যদি ছাত্রছাত্রীরা স্মার্টফোনের সঠিক ব্যবহার করেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর সচেতন পড়ুয়ারা স্মার্টফোনের সঠিক ব্যবহারই বেশি পছন্দ করেন। বেঠিক ব্যবহার করে স্মার্টফোনে তাঁরা ছাত্রজীবনকে জলাঞ্জলি দিতে চান না। বরং স্মার্টফোনকে তাঁরা ব্যবহার করেন সহজে অনেক কিছু পড়া, জানা ও চটপট শিখে নেওয়ার জন্য। তাঁরা জানেন, এতে অর্থব্যয় অনেক কম কম করতে হয়। ছোটাছুটির ধকলও সইতে হয় না।

গবেষকরা দেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা যে শুধুই তাঁদের পড়াশোনার বিষয় নিয়েই স্মার্টফোনে বেশি বুঁদ হয়ে থাকেন, তা নয়। তাঁরা স্মার্টফোনে বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলির হাজারো অ্যাপও ঘাঁটাঘাঁটি করেন খুব, সেখান থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন পরে কাজে লাগবে বলে।

গবেষকরা দেখেছেন, স্মার্টফোনে বিভিন্ন গবেষণাপত্র পড়া আর বিভিন্ন বিষয়ে সহজে চটজলদি শিক্ষা নেওয়ার অ্যাপগুলির জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বাড়ছে পড়ুয়াদের মধ্যে। অতিমারি পর্বে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য হওয়ায় সেটা আরও বেড়েছে, বেড়ে চলেছে।

তাই হাতে স্মার্টফোন থাকলেই আর যা খুশি করতে চাইছেন না পড়ুয়ারা। সময় নষ্ট করতে চাইছেন না ‘ফান টাইম’-এ বুঁদ হয়ে থেকে।

“বিনোদন জগতের আজেবাজে গপ্পো, অশ্লীল বা বেপরোয়া ছবি, বাজার ধরে রাখার জন্য নেটমাধ্যমে খ্যাতনামীদের অতি সক্রিয়তা, আষাঢ়ে টুইট, ফেসবুক পোস্টে চোখ রেখে যে তাঁদের জীবনের মোড় ঘুরবে না, ভবিষ্যতের দিনগুলিকে স্বচ্ছ্বন্দ করে তোলা যাবে না, তা বুঝে গিয়েছেন এখনকার বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীই। তাঁরা আগের প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাঁরা তাই ফেসবুক, টুইট দেখার লোভে স্মার্টফোনের পর্দায় সারাক্ষণ চোখ রেখে বসে থাকেন না”, বলেছেন অন্যতম গবেষক আলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেংলি দেং।

গবেষকরা অবাক হয়ে দেখেছেন, যে বিশ্ববিদ্যালগুলিতে এখনও অনলাইনে ই-লার্নিং বা মোবাইল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম চালু হয়নি সেখানেও ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের নিজেদের বিষয়ে আরও পড়াশোনা, আরও নোট আদান-প্রদানের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে ছোট-বড় গ্রুপ তৈরি করে নিচ্ছেন। আর সে জন্য ব্যবহার করছেন স্মার্টফোনকে।

গবেষণা এও জানিয়েছে,‌ বিনোদনই যাদের মূল বিক্রয়যোগ্য পণ্য, সেই অ্যাপগুলির জন্য স্মার্টফোনের পড়ুয়া ব্যবহারকারীদের এতটাই ক্ষতি হয় যে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ ‘নোমোফোবিয়া’-য় আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা একটা রোগের নাম। একেবারে হালে যে রোগের গ্রাসে চলে গিয়েছেন প্রায় গোটা বিশ্বেরই মানুষ। যার অর্থ, ‘মোবাইল ফোন সঙ্গে না থাকা বা তা ব্যবহার না করতে না পারা (নো মোবাইল ফোন)-র জন্য ভয় বা উদ্বেগ (ফোবিয়া)’। জনপ্রিয়তার কারণে এই শব্দটিকে ঢোকানো হয়েছে কেমব্রিজ ডিকশনারির ২০১৮ সালের সংস্করণে।

গবেষকরা দেখেছেন স্মার্টফোনে বিনোদনের নানা বিষয়ে বেশি সময় দেন যে ব্যবহারকারীরা, তাঁরাই বেশি আক্রান্ত হন নোমোফোবিয়ায়। তাতে তাঁদের রাতে ঘুম হয় না বা কমে যায়। এতে তাঁদের পড়াশোনারও ক্ষতি হয়। যার ছাপ পড়ে পরীক্ষার ফলাফলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Smartphone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE