Advertisement
E-Paper

থাকবেই যদি, ইয়েতি সবাই দেখছে কই?

মোদ্দা কথা, এখনও অবধি খোঁজ না মিললেও ইটি-র অস্তিত্ব বিচিত্র নয়। কিন্তু থাকলেও ইয়েতির অস্তিত্ব বিচিত্র। দূরাকাশে নয়, এই গ্রহেরই পাহাড়-পর্বতে ওরা গা-ঢাকা দিয়ে থাকে কী করে?

পথিক গুহ

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৯ ০৫:৪২
ইয়েতি নিয়ে কিরগিজস্তানের ডাকটিকিট।

ইয়েতি নিয়ে কিরগিজস্তানের ডাকটিকিট।

হোয়ার ইজ এভরিবডি? প্রশ্নটা ১৯৪০-এর দশকে শোনা গিয়েছিল নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফের্মি-র মুখে। নিউ ইয়র্কের রাস্তা থেকে রাতের বেলায় পটাপট উধাও হচ্ছিল ময়লা ফেলার ভ্যাট। কারা চুরি করছিল সে সব? উত্তর দিতে পুলিশ হিমসিম। তখন সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘নিউ ইয়র্কার’ ছেপেছিল এক কার্টুন। ভিন্‌গ্রহের জীব বা এক্সট্রা-টেরিস্ট্রিয়াল-(ইটি)-রা রাতের অন্ধকারে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় নামছে পিলপিল করে। আর টপাটপ চুরি করছে ভ্যাটগুলো। কার্টুন দেখে মস্করা করে ফের্মি তুলেছিলেন ওই প্রশ্ন। ওঁর বক্তব্য ছিল, পত্রিকার কার্টুন বিজ্ঞানসম্মত। কারণ, এতে একটা অবিশ্বাস্য ঘটনার (ভ্যাটের চুরি যাওয়া) সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেকটি অবিশ্বাস্য ঘটনা (ইটিদের পৃথিবীতে অবতরণ)। বিজ্ঞান অবিশ্বাস্য ঘটনাবলী মাঝে চিরকাল অন্বেষণ করে যোগাযোগ। কার্টুন বিজ্ঞানসম্মত ধরে নিয়ে ফের্মির জিজ্ঞাসা, ইটি-রা যদি থাকেই, তবে যত্রতত্র দেখা দিচ্ছে না কেন?

ভারতীয় সেনাবাহিনীর টুইট দেখে মনে পড়ে গেল ফের্মির টিপ্পনি। ইয়েতি বা তুষারমানবের পদচিহ্ন শুধু ওঁরাই দেখলেন?

আন-আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট (উফো) যেমন সবাই দেখেন না, দর্শন পেয়ে ধন্য হন কেবল বিশ্বাসীরাই, এ ঘটনাও তেমনই নয় তো? অথবা স্কটল্যান্ডের হ্রদে ‘নেসি’ নামের সেই দৈত্য? তারও দেখা তো পান কেবল কেউ কেউ, সবাই নয়।

ইটি থাকতেই পারে। গ্রহের ভিড়ে কেবল এই পৃথিবীতেই জন্মাল প্রাণ, বিজ্ঞানীরা তা মানেন না। মানেন এই সত্য যে, প্রাণসৃষ্টির পরিস্থিতি ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে অনেক গ্রহেই বিদ্যমান। ইটি-দের সন্ধানে খোঁজও চলেছে। এখনও যে টিকি মেলেনি তাদের, সেটাও কিছু আশ্চর্যের নয়। আকারে প্রকান্ড এই ব্রহ্মাণ্ডে তাদের বেতার সঙ্কেত আমাদের টেলিস্কোপে ধরা, কিংবা আমাদের পাঠানো সঙ্কেত তাদের শনাক্ত করার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

এর সঙ্গে আছে প্রযুক্তির সমস্যা। অ্যামিবার তো রেডিয়ো সিগন্যাল পাঠানোর কিংবা শনাক্ত করার সম্ভাবনা নেই, আমাদের আছে। সাঙ্কেতিক ভাষার যোগাযোগ, অতএব, উন্নতির ব্যপার।

তুলনামূলক উন্নতির কথা ভেবেই প্রয়াত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিং একদা বলেছিলেন, ইটি-দের খোঁজ না করাই ভাল। ওঁর ধারণা, ইটি-রা অ্যামিবা হবে, তার তো নিশ্চয়তা নেই। ওরা হতে পারে মানুষের চেয়ে উন্নত এবং হিংস্র। খোঁজ পেলে, আমাদের শেষ করে ফেলবে।

মোদ্দা কথা, এখনও অবধি খোঁজ না মিললেও ইটি-র অস্তিত্ব বিচিত্র নয়। কিন্তু থাকলেও ইয়েতির অস্তিত্ব বিচিত্র। দূরাকাশে নয়, এই গ্রহেরই পাহাড়-পর্বতে ওরা গা-ঢাকা দিয়ে থাকে কী করে?

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হাতে-গোনা দু’এক জন পর্বতারোহী ওদের দেখেছেন। সংখ্যায় বেশি পর্বতারোহী দেখেছেন পায়ের ছাপ। এই দ্বিতীয় দলে ছিলেন প্রথম এভারেস্ট-জয়ী এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগেও। তেনজিং অবশ্য পরে স্বীকার করেন, তিনি ভুল ভেবেছিলেন।

দেখতে অতিকায় মানুষ। অথবা বানর। অথবা ভালুক। রোমশ। রক্তচক্ষু। পাহাড়বাসীর বর্ণনায় রাতেই দর্শন দেয় তারা। হিংস্র, মানুষ দেখলেই তেড়ে আসে। ভয়ঙ্কর ওই জীবেদের ঘিরে অনেক গল্প-কথা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ শুনে মজেছেন অনেকেই। হলিউড অভিনেতা জেমস স্টুয়ার্ট পর্যন্ত। তিনি আবার দাবি করতেন, তাঁর সংগ্রহে আছে ইয়েতির আঙুল। পরে দেখা যায়, লম্বায় অনেকটা বটে, তবে তা মানুষেরই আঙুল।

পাহাড়ি অন্ধকারে কাল্পনিক এক অদ্ভুতুড়ে জীব কাহিনির পক্ষে, যাকে বলে, এক ‘উইনিং ককটেল’। ইয়েতি তাই এক বিশেষ বিষয়ের অন্তর্গত। বিষয়টার নাম ‘ক্রিপ্টোজুলজি’। সাঙ্কেতিক প্রাণীবিদ্যা। এমন প্রাণী নিয়ে কারবার, যার কোনও অস্তিত্ব নেই।

ইয়েতি লেজেন্ডের আকর্ষণ দুর্নিবার। এখনও এর টানে পাহাড়ে ছুটে যান অনেকে। পর্বতারোহী রেইনহোল্ড মেসনার এদেরই একজন। ইয়েতি রহস্যের সমাধানে তিনি হিমালয়ে গিয়েছেন বারবার। তাঁর সিদ্ধান্ত বিচিত্র। তিনি বিশ্বাস করেন, ইয়েতি মোটেই আজগুবি নয়। তা আছে। তবে ইয়েতি কোনও অদ্ভুতুড়ে জীব নয়। তা আসলে এক ধরনের ভালুক।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনতত্ত্বের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় বিজ্ঞান বইয়ের লেখক ব্রায়ান সাইকস হিমালয়ে পাওয়া লোম বা চুল নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করেছেন। ওঁর সিদ্ধান্ত ইয়েতি মোটেই কিম্ভুতকিমাকার জন্তু নয়, তা স্রেফ মেরুভালুক। যারা এই পৃথিবীতে বাস করত চল্লিশ হাজার বছর আগে।

সাইকস এবং তাঁর সতীর্থদের কাজের ভুল ধরেন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রস বার্নেট। তাঁর সিদ্ধান্ত: ওই লোম বা চুল আধুনিক মেরুভালুকের।

২০০৪ সালে এক আবিষ্কারে মাথা চারা দেয় ইয়েতি-প্রসঙ্গ। ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায় বামন-মানুষ বা ‘হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস’-এর কঙ্কাল। মাত্র ১২ হাজার বছর আগে বেঁচে ছিল ওরা। অমন কঙ্কালের খোঁজ মেলায় কোনও কোনও পন্ডিত এই প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, মানুষের মতো অদ্ভুত জীবেরা কি এখনও লুকিয়ে আছে কোথাও কোথাও? বিতর্কে এ বার নেমেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরা। আমেরিকায় টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভ্লাদিমির ডিনেটস বলেছেন, ‘‘ইয়েতিরা বনমানুষ, মানুষ বা বাঁদর বর্গের প্রাণী হলে তাদের বাসভূমি হতেই হবে মানুষের বাসভূমির কাছাকাছি। আর, সে ক্ষেত্রে ইয়েতির দেখা কেউ কালেভদ্রে পাবে, বেশি মানুষ পাবে না, এটা হতেই পারে না।

সুতরাং ফের্মির টিপ্পনিই শেষ কথা। হোয়ার ইজ এভরিবডি?

Yeti ইয়েতি Indian Army Himalayan Yeti
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy