নতুন জীবনের স্পন্দন শুরুর সময় থেকে তা ভ্রূণের ধারক ও রক্ষক। মাতৃদেহে ‘অ্যামনিয়োটিক স্যাক’ বা থলির নিরাপদ আশ্রয়েই যে ভ্রূণ থেকে শিশু পূর্ণতা পায়। আক্ষরিক অর্থে তা ‘লাইফ স্যাক’ বা ‘জীবন থলি’। তবে কোন পথে, বিশেষত গর্ভাবস্থার একেবারে শুরুতে অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড বা তরল ভর্তি ওই থলিতে ভ্রূণের ক্রমবিকাশ ঘটে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ‘সেল’ জ়ার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন আশা জাগাচ্ছে। সেখানে স্টেম কোষ থেকে কৃত্রিম ভাবে অ্যামনিয়োটিক থলি তৈরির মাধ্যমে রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করা হয়েছে।
মূল সুবিধা হল, যে অ্যামনিয়োটিক থলিটি পরীক্ষাগারে তৈরি করা গিয়েছে তা আকারে বেশ বড়, জানিয়েছেন জ্যানেট রোস্যান্ট। কানাডার ওই স্টেম কোষ বিজ্ঞানীর আরও দাবি, এ পর্যন্ত যত কৃত্রিম অ্যামনিয়োটিক থলি তৈরি হয়েছে, এটি তার সর্বোত্তম মডেল ও পুনঃউৎপাদনযোগ্য।
কৃত্রিম অ্যামনিয়োটিক থলি তৈরির কৃতিত্ব লন্ডনের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের স্টেম কোষ বিজ্ঞানী বর্জো ঘারিবি ও সিলভিয়া স্যান্টোসের। দু’টি ভিন্ন ধরনের ‘এমব্রায়োনিক’ স্টেম কোষকে পরীক্ষাগারে ‘কালচার’ করে তিন মাসের চেষ্টায় প্রায় ২ সেন্টিমিটার চওড়া অ্যামনিয়োটিক থলিটি তৈরি হয়েছে। “গোটা পর্বে যে ভাবে স্টেম কোষগুলি স্ববিন্যস্ত হয়েছে, তা অবাক করে’’, বলছিলেন স্যান্টোস। তিনি আরও জানান, এই পর্যায়ে ওই কৃত্রিম থলিটি চার সপ্তাহের কোনও ভ্রূণের ধারণযোগ্য অ্যামনিয়োটিক থলির সঙ্গে তুলনীয়। তাতে দু’টি পর্দা বা ‘মেমব্রেন’ রয়েছে এবং তা অ্যামনিয়োটিক তরলে পূর্ণ। তাতে ‘ইয়োক স্যাক’-ও দেখা যায়, যা প্রাথমিক ভাবে ভ্রূণকে পুষ্টি জোগায়।
কেন এটিকে সর্বোত্তম মডেল বলা হচ্ছে? উত্তর লুকিয়ে মূলত এর আকারে। গবেষক দলের দাবি, থলিটি থেকে সফলতার সঙ্গে অ্যামনিয়োটিক তরল সংগ্রহ করা গিয়েছে। প্রত্যাশামতো তা প্রোটিন-সহ নানা পুষ্টিবস্তুতে ভরপুর, যা ভ্রূণের বৃদ্ধিতে অপরিহার্য। শুধু তাই নয়, ভ্রূণের একটু পরিণত পর্যায়ে মানবদেহের অ্যামনিয়োটিক তরলে যা যা উপাদান থাকে, তার সঙ্গেও মিল রয়েছে।
তবে কিছু সংশয় রয়েছে। রোস্যান্টের মতে, এ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, কৃত্রিম অ্যামনিয়োটিক থলি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে যা পরিস্থিতি থাকে, তার সঙ্গে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে সময় গড়ালে তা কতটা বজায় থাকবে, স্পষ্ট নয়। অ্যামনিয়োটিক থলির ক্ষতিতে গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়ে। কোন জটিলতায় তেমন পরিস্থিতি হয়, এখনও অজানা। গর্ভাবস্থার পরিণতির পর্যায়ে কৃত্রিম অ্যামনিয়োটিক থলির বৃদ্ধি যদি গর্ভস্থ অ্যামনিয়োটিক থলির মতো হয়, তা হলে তার পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য কারণ জানা যেতে পারে।
তাই শুধু আরও পরিণত পর্বের অ্যামনিয়োটিক থলি তৈরি করা নয়, প্রয়োজনে তার মধ্যে এমব্রায়োনিক কোষ প্রবেশ করিয়ে ভ্রূণ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে গবেষক দলের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)