Advertisement
E-Paper

যৌনসঙ্গী পেতে পুরুষেরা প্রতিযোগিতার মুখে পড়লে দ্রুত হয় বিবর্তন? ৪০ বছর ধরে ২০০ প্রজন্মকে পরীক্ষার ফলপ্রকাশ

যে দলে পুরুষদের সঙ্গী নির্বাচনের জন্য কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছিল, সেই দলের বিবর্তন হয়েছে ভিন্ন ভাবে। এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে অনেক বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:০২
৪০ বছর ধরে গুবরে পোকাদের উপরে পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা।

৪০ বছর ধরে গুবরে পোকাদের উপরে পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

যৌনসঙ্গী নির্বাচন কী ভাবে করছে কোনও পুরুষ, কতটা অবাধে, তার প্রভাব পড়তে পারে সেই জীবের বিবর্তনে! সাম্প্রতিক একটি পরীক্ষা করে এমনটাই দাবি করেছেন এক দল বিজ্ঞানী।

আজ মানুষ বা অন্য প্রাণী যা, তা দীর্ঘ সময়ের বিবর্তনের ফল। সেই বিবর্তন চলেছে কোটি কোটি বছর ধরে। এই বিবর্তনের ফলে প্রতি প্রজন্মে কী পরিবর্তন হচ্ছে, তা চাক্ষুষ করা বিজ্ঞানীদের পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব। কারণ, মানুষের আয়ুষ্কাল নির্দিষ্ট। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সার্বিয়ার বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী প্রায় চার দশক ধরে গুবরে পোকার উপরে এই নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। ৪০ বছর ধরে গুবরে পোকার ২০০টি প্রজন্মের কার্যকলাপ, বিবর্তন তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন।

গুবরে পোকাগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। একটি দলে পুরুষ পোকারা ইচ্ছামতো সঙ্গী নির্বাচন করতে সমর্থ। সে ক্ষেত্রে ওই দলে প্রতিযোগিতাও ছিল বেশি। দ্বিতীয় দলে সঙ্গী নির্বাচন নিয়ে ছিল কড়াকড়ি। প্রতি একটি পুরুষ গুবরে পোকা পিছু একটি স্ত্রী রাখা ছিল সেই দলে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দুই দলের গুবরে পোকাদের বিবর্তন চলেছে ভিন্ন পথে। ‘ইভলিউশন লেটার্স’-এ সেই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।

সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক গোরান আর্নকভিস্ট জানান, পুরুষ গুবরে পোকাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা নতুন প্রজন্ম গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনটাই দেখা গিয়েছে গবেষণায়। যে দলে পুরুষদের সঙ্গী নির্বাচনের জন্য কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছিল, সেই দলের বিবর্তন হয়েছে ভিন্ন ভাবে। এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে অনেক বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেই পরিবর্তন জিনগত। ওই দলে এক প্রজন্মের থেকে পরের প্রজন্মের প্রজননগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন।

বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেন, প্রথম ৭০টি প্রজন্মের গুবরে পোকারা বেশ বিরক্তিকর জীব ছিল। মাঝেমধ্যে কীটনাশক দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণও করতে হয়েছে। তবে তাদের আয়ুষ্কাল কম হওয়ায় বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সুবিধা হয়েছে।

যে দলে পুরুষদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি ছিল, অর্থাৎ এক জন স্ত্রীর সঙ্গে অনেক পুরুষ গুবরে পোকার যৌন মিলন হয়েছে, সেই দলের পুরুষের শুক্রাণুতে বিভিন্ন ধরনের পেপটাইড এবং প্রোটিনের হদিস পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অন্য দিকে, গুবরে পোকাদের যে দলে সঙ্গী নির্বাচন নিয়ে কড়াকড়ি ছিল না, এক জন পুরুষ এক জন স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সংসর্গে বাধ্য ছিল, সেই দলের পুরুষদের শুক্রাণুতে এ রকম কিছু মেলেনি।

বিজ্ঞানী গোরান মনে করেন, প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে বলেই প্রথম দলের গুবরে পোকার শুক্রাণুতে ওই প্রোটিন, পেপটাইডের মিশ্রণ মিলেছে। স্ত্রী গুবরে পোকাদের আকৃষ্ট করার জন্যই তাদের শুক্রাণুতে ওই মিশ্রণ ঘটেছে। গোরান জানান, এই কারণেই বেশ কিছু প্রজাতির পুরুষ পাখির সুন্দর পালক হয়েছে শরীরে। উদ্দেশ্য একটাই, প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে স্ত্রী জীবের মনজয়। গোরানের মতে, বিবর্তনের ধারা বোঝার জন্য ২০০টি প্রজন্ম যথেষ্ট নয়। ২০ হাজার বা ২ লক্ষ প্রজন্মের উপরে পরীক্ষা করলে আর সুস্পষ্ট ফল মিলতে পারে। তবে তা সম্ভব নয়। গুবরে পোকারা স্বল্পায়ু বলেই এই পরীক্ষা সম্ভব হয়েছে।

Evolution Beetles
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy