Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রযুক্তি নিয়ে হইচই, মৌলিক বিজ্ঞান আড়ালেই

৫-৮ নভেম্বর কলকাতায় ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে’ মৌলিক বিজ্ঞানচর্চার থেকে প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রচার পেয়েছে বেশি।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জগদীশচন্দ্র বসু, হোমি ভাবা, আব্দুল কালাম, বিক্রম সারাভাই।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জগদীশচন্দ্র বসু, হোমি ভাবা, আব্দুল কালাম, বিক্রম সারাভাই।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:২১
Share: Save:

বিজ্ঞানের চর্চা না-হলে প্রযুক্তির অগ্রগতি যে থমকে যাবে, বারে বারেই সে-কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, মৌলিক বিজ্ঞান চর্চায় নিবেদিত বিজ্ঞানীরা আড়ালেই থেকে যান এবং প্রচার ও প্রশংসার বেশিটাই পান প্রযুক্তিবিদেরা।

৫-৮ নভেম্বর কলকাতায় ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে’ মৌলিক বিজ্ঞানচর্চার থেকে প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রচার পেয়েছে বেশি। অনেকেই বলছেন, বিজ্ঞান উৎসবে এই জনপ্রিয়তার কথাই প্রধানমন্ত্রী থেকে আমলা, সকলের মুখে মুখে ঘুরেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মৌলিক গবেষণার কোনও উল্লেখই ছিল না।

বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, আধুনিক ভারতে যাঁরা বিজ্ঞানী হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই আদতে প্রযুক্তিবিদ। তাঁদের মতে, ইসরো এবং পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র তৈরির জন্য বিক্রম সারাভাই ও হোমি ভাবার জনপ্রিয়তা আদতে প্রযুক্তিরই জয়গান। প্রযুক্তির চর্চায় ও প্রয়োগে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু তাঁর জীবনের সব গবেষণাই প্রযুক্তিনির্ভর। সত্যেন্দ্রনাথ বসু বা মেঘনাদ সাহার মতো মৌলিক বিষয়ের গবেষণায় কৃতবিদ্য বিজ্ঞানীর কথা তুলনায় অনেক কম লোক জানেন। মৌলিক বিজ্ঞানে গবেষণার খবর শিক্ষাপ্রাঙ্গণের বাইরে বৃহত্তর সমাজে সে-ভাবে ছড়িয়ে পড়ে না।

পদার্থবিজ্ঞানের এক গবেষক বলছেন, ‘‘ইসরো-প্রধান কে শিবনকে নিয়ে জনমানসে যা উন্মাদনা, তার সিকিভাগও নেই স্ট্রিং থিয়োরির প্রথিতযশা বিজ্ঞানী অশোক সেনকে নিয়ে।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার এমিরেটাস অধ্যাপক দীপক ঘোষের মতে, মৌলিক বিজ্ঞানচর্চার ফল অনেকটাই শিক্ষা ও গবেষণার জগতে সীমাবদ্ধ। কিন্তু মৌলিক গবেষণার যে-ফসল, তার প্রয়োগ হচ্ছে প্রযুক্তি। ফলে প্রযুক্তিকেন্দ্রিক গবেষণার ফসল সাধারণ জনতা দেখতে পান। তাই প্রযুক্তিবিদদের জনপ্রিয়তা বেশি। বস্তুত, মৌলিক পদার্থবিদায় দীর্ঘদিন গবেষণারত এই প্রবীণ অধ্যাপককেও বিজ্ঞান উৎসবে প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়েই বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু দীপকবাবুও বলছেন, ‘‘মৌলিক গবেষণা উন্নত না-হলে প্রযুক্তির উন্নতিও হবে না।’’

জনপ্রিয়তার কারণেই যে বিজ্ঞান উৎসবে প্রযুক্তির প্রচার বেশি, তা মেনে নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের কর্তারাও। ওই মন্ত্রকের সচিব আশুতোষ শর্মার মতে, বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করতে হলে হাতেকলমে বিজ্ঞান গবেষণার ফসল দেখানো জরুরি। সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের বিজ্ঞানী সুবীর সরকার বলছেন, যদি দেশের সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকা তৈরি হয়, তাতে মৌলিক গবেষণা করা বিজ্ঞানীরাই উপরের দিকে থাকবেন। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেও মৌলিক গবেষণারত বিজ্ঞানীদের প্রচারে আনা হয় না।

প্রশ্ন উঠেছে, মৌলিক বিজ্ঞানে কি নতুন প্রজন্মের আকর্ষণ কমেছে? বিজ্ঞানের অধ্যাপকেরা বলছেন, এখনও বহু ছাত্রছাত্রী ভালবেসে মৌলিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে ও গবেষণা করতে আসছেন। কিন্তু মৌলিক গবেষণায় যে-ভাবে অনুদান কমছে এবং আমলাতান্ত্রিক বিধিনিষেধ রয়েছে, তাতে অনেক ক্ষেত্রে মাঝপথে উৎসাহ হারাচ্ছে নবীন প্রজন্ম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE