Advertisement
E-Paper

কেন সূর্যে যাওয়া অত সহজ নয়...

এত দিন কেন সূর্যের এত কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হয়নি সভ্যতার পক্ষে? শুধুই কি তার করোনার লক্ষ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার জন্য? নাকি রয়েছে আরও কিছু কারণ?

দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ১২:৫০

নাসার মহাকাশযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’ রবিবার রওনা হল সূর্যকে ছুঁতে যাবে বলে।

এই প্রথম কোনও মহাকাশযান পৌঁছবে সূর্যের পিঠ থেকে ৪০ লক্ষ মাইলেরও কম দূরত্বে। এটা একটা চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। আর ২ থেকে ৪ বছরের মধ্যে নাসার ওই মহাকাশযান ঢুকে পড়বে সূর্যের বায়ুমণ্ডলের একেবারে বাইরের স্তর বা, ‘করোনা’র মধ্যে। যার তাপমাত্রা ১০ লক্ষ বা তারও কিছু বেশি ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের পিঠের (সারফেস) তাপমাত্রা তার কাছে কার্যত, নস্যি! মাত্র ৬ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এত দিন কেন সূর্যের এত কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হয়নি?

সেই কারণটা হল, পৃথিবী আর শুক্র গ্রহের জোরালো অভিকর্ষ বলের টান এড়িয়ে সূর্যের কাছাকাছি যাওয়াটা মোটেই খুব সহজ কাজ নয়। তার জন্য বিশেষ প্রযুক্তির প্রয়োজন। আর সেই প্রযুক্তিটা এত দিন আমাদের হাতে ছিল না। সেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যেই এ বার সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সূর্যের এত কাছাকাছি পৌঁছতে পারছে পার্কার সোলার প্রোব।

পার্কার সোলার প্রোবের গতিবেগ সর্বাধিক হবে ঘণ্টায় ৭ লক্ষ কিলোমিটার। যে গতিবেগে এত দিন ছোটেনি কোনও মহাকাশযানই। পৃথিবী আর শুক্র গ্রহের জোরালো অভিকর্ষ বলের টান এড়াতেই এ বার এত বেশি গতিবেগে ছোটাতে হচ্ছে পার্কার মহাকাশযানকে। পৃথিবীর ‘মায়া’ (অভিকর্ষ বলের টান) কাটিয়ে সূর্যের মুলুকে যাওয়ার জন্য পার্কার মহাকাশযান প্রথমে পৌঁছবে শুক্র গ্রহের ‘পাড়া’য়। শুক্রের কাছাকাছি গেলেই পার্কার মহাকাশযানকে তার নিজের দিকে টানতে চেষ্টা করবে শুক্র গ্রহ। সেই টানও কাটাতে হবে পার্কার মহাকাশযানকে। না হলে তা শুক্রের ‘পাড়া’ থেকে বেরিয়ে সূর্যের মুলুকের দিকে মহাকাশযান ‘পা’ বাড়াতে পারবে না। শুক্রের সেই টানকে অগ্রাহ্য করার জন্যেও চাই অসম্ভব গতিবেগ।

তা ছাড়াও, করোনার লক্ষ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার হাত থেকে মহাকাশযান বা তার যন্ত্রাংশগুলিকে বাঁচানোর কোনও প্রযুক্তিও ছিল না আমাদের হাতে। পার্কার সোলার প্রোবে থাকা ‘হিট শিল্ড’ সেই সমস্যা দূর করেছে।

কেন সূর্যে যাওয়া অত সহজ নয়? দেখুন নাসার ভিডিয়ো

আরও পড়ুন- সূর্যকে এই প্রথম ছুঁতে যাচ্ছে সভ্যতা, রওনা হল নাসার মহাকাশযান​

আরও পড়ুন- কেন সূর্যের ১০ লক্ষ ডিগ্রিতেও গলবে না পার্কার মহাকাশযান

সৌরবায়ুর উৎস, গতিবেগের তারতম্যের কারণ জানা যাবে

এর আগে এত কাছ থেকে সূর্যের বায়ুমণ্ডলকে কখনও দেখার সুযোগ পাইনি আমরা। পার্কার মহাকাশযানের দৌলতে সূর্যের সেই বায়ুমণ্ডল (করোনা)-কে সরাসরি দেখা যাবে। কেন করোনার তাপমাত্রা প্রায় ১০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সূর্যের পিঠের তাপমাত্রা ৬ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো, তার আরও কিছু কারণ পার্কার মহাকাশযান খুঁজে পাবে বলে আশা করছি। যেহেতু পার্কার সোলার প্রোব করোনার মধ্যেই ঘোরাঘুরি করবে, তাই সেখানকার চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য আরও সহজে মাপা যাবে। সূর্যের বায়ুমণ্ডল আবার সামঞ্জস্যহীন। তার কোনও জায়গায় বায়ুর গতিবেগ অনেক বেশি। আবার কোথাও সেই গতিবেগ বেশ কম। সূর্যের মেরু অঞ্চলে বায়ুর গতিবেগ অনেক বেশি। আর নিরক্ষীয় অঞ্চলে তা বেশ কম। যেহেতু পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের মেরু ও নিরক্ষীয় অঞ্চল, দু’টি এলাকার ওপর দিয়েই যাবে, তাই এই প্রথম আমরা সরাসরি সেই বায়ুর গতিবেগ মাপতে পারব।

আরও পড়ুন- আজকের সূর্য অভিযান ঋণী হয়ে থাকবে ভারতীয় বিজ্ঞানীর জেদের কাছে​

আরও পড়ুন- পৃথিবীতে এক দিন আর কোনও গ্রহণই হবে না!​

পার্কার মহাকাশযানে রয়েছে কী কী যন্ত্রাংশ? তাদের কাজ কী কী?

পার্কার মহাকাশযান

সূর্য থেকে অনেক শক্তিশালী কণাও সারা ক্ষণ আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। ওই কণাদের সনাক্ত করা সম্ভব হবে। তাদের বৈশিষ্ট্য আরও ভাল ভাবে জানা ও বোঝা যাবে। তার জন্য পার্কার সোলার প্রোবে রয়েছে ২টি পার্টিকল ডিটেক্টর। রয়েছে ৩টি ম্যাগনেটোমিটার। করোনার চৌম্বক ক্ষেত্রগুলিকে মাপার জন্য। তা ছাড়াও পার্কার মহাকাশযানে রয়েছে করোনার ছবি তোলার জন্য একটি সর্বাধুনিক ক্যামেরা।

করোনার বিস্ফোরণগুলির কারণ জানা যাবে

সূর্যের করোনার চেহারাটা আদতে যথেষ্টই অস্থিতিশীল বা ‘আনস্টেব্‌ল’। আবার তা ‘ডায়নামিক’ও বটে। তার মানে, করোনা প্রতি মুহূর্তে তার চেহারা বদলাচ্ছে। সেই করোনায় অনেক সময় বিস্ফোরণ ঘটে। যার নাম- ‘ফ্লেয়ার্স’ বা অগ্নিতরঙ্গ। তা ছাড়াও সেখানে হয়, ‘করোনাল মাস ইজেকশন’ বা, ‘সিএমই’। তা অনেকটা যেন, সূর্যের করোনার শরীর ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা অংশ।

ওই সব বিস্ফোরণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। তারা কোথায় তৈরি হয়, কী ভাবে তৈরি হয়, তা আরও ভাল ভাবে জানা ও বোঝা যাবে এই পার্কার সোলার প্রোবের সাহায্যেই।

(লেখক বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক।)

ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা

পার্কার সোলার প্রোব নাসা দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় PARKER SOLAR PROBE SUN DR.DIPANKAR BANNERJEE CORONA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy