Advertisement
E-Paper

‘অভিভাবক’ ছাড়াই চলছে বন দফতর

পদ রয়েছে। নেই দফতরের শীর্ষ পদাধিকারী। মাস ঘুরতে চলল, রাজ্যের বন দফতরের ‘হেড অব ফরেস্ট’ বা হফ-এর পদে কাউকে নিয়োগ করেনি রাজ্য সরকার। ফল যা হওয়ার, তাই হয়েছে। দফতরে স্তূপীকৃত ফাইল। থমকে রয়েছে বনকর্তাদের বদলি কিংবা তাঁদের কাজের মূল্যায়ন সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি। মাঝ পথেই আটকে গিয়েছে বনকর্মী-নিয়োগও। যার পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে বন প্রহরায়। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে একের পর এক চোরাশিকারের ঘটনার পরে তদন্তের ভার সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন বনকর্তাদের অনেকেই।

রাহুল রায়

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩১

পদ রয়েছে। নেই দফতরের শীর্ষ পদাধিকারী।

মাস ঘুরতে চলল, রাজ্যের বন দফতরের ‘হেড অব ফরেস্ট’ বা হফ-এর পদে কাউকে নিয়োগ করেনি রাজ্য সরকার।

ফল যা হওয়ার, তাই হয়েছে। দফতরে স্তূপীকৃত ফাইল। থমকে রয়েছে বনকর্তাদের বদলি কিংবা তাঁদের কাজের মূল্যায়ন সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি। মাঝ পথেই আটকে গিয়েছে বনকর্মী-নিয়োগও।

যার পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে বন প্রহরায়। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে একের পর এক চোরাশিকারের ঘটনার পরে তদন্তের ভার সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন বনকর্তাদের অনেকেই। কিন্তু এ ব্যাপারে তদ্বির করবে কে? দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, “স্কুল আছে, ছাত্ররাও আসছে। কিন্তু স্কুলে হেডমাস্টার নেই। বন দফতর এখন অভিভাবকহীন।”

বন দফতর সূত্রে খবর, চলতি আর্থিক বছরের শেষ ছ’মাসের কর্ম পরিকল্পনা, আর্থিক পরিকল্পনা বা বাজেট এস্টিমেট (বিই) এবং রিভাইজড এস্টিমেট (আরই) তৈরি করা হয় পুজোর ছুটির পরে। এ বার দফতরের শীর্ষ কর্তার পদে কেউ না থাকায় এবং সরকার সে দায়িত্ব কাউকে না দেওয়ায় আগামী ছ’মাসের কর্ম পরিকল্পনাই তৈরি করা যাচ্ছে না। এক বনকর্তার অভিজ্ঞতা, “বছরের এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চলতি আর্থিক বছর ছাড়াও আগামী বছরের কর্ম-পরিকল্পনার একটা খসড়াও তৈরি হয় এই সময়ে।” তিনি জানান, নতুন বছরের বিভিন্ন পরিকল্পনায় খরচপাতি কী হবে, সে ব্যাপারেও একটা রূপরেখা তৈরি করতে বছরের এই সময়ে তলব করা হয় বৈঠক। আগামী বছরে দফতরের বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব তৈরি হয় ওই বৈঠকে। হফ নেই। এ বার সেই বেঠকই হয়নি।

দফতরের কর্মী-কর্তাদের সঙ্গে শাসক দলের কর্মচারী সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট সার্ভিস এমপ্লয়িজ ফেডারেশন’ও এ ব্যাপারে তাদের ক্ষোভ আড়াল করেনি। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অমল সিংহ এর পিছনে আমলাদের ‘ষড়যন্ত্রের’ ছায়া দেখছেন। তাঁর দাবি, “আমলাদের একাংশ সরকারকে ভুল বুঝিয়ে দফতরের শীর্ষ পদে কাউকে মনোনীত করতে দিচ্ছেন না।” তিনি জানান, দফতরের মাথায় কেউ না থাকায় কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া যাচ্ছে না। দফতরের শীর্ষ কর্তারা সকলেই দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। কর্মী নিয়োগের পদ্ধতি থমকে গিয়েছে। বন প্রহরা কার্যত শিকেয়।

২৯ অক্টোবর হফ-এর পদ থেকে অবসর নিয়েছেন নবীনচন্দ্র বহুগুণা। নতুন হেড অফ ফরেস্ট-কে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ওই পদ থেকে অবসর নেওয়াই রেওয়াজ। এ যাবৎ এমনটাই হয়ে এসেছে। কিন্তু এ বার, বন কর্তাদের মধ্যে কার হাতে ওই পদের দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হবে, তা এখনও স্থির করে উঠতে পারেনি সরকার। অচিরে, এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, নবান্ন সূত্রে সে সম্ভাবনারও খবর মেলেনি। বমমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন স্পষ্টই বলছেন, “আপাতত দু’-মাস ওই পদে কাউকে নিয়োগের কোনও সম্ভাবনা নেই।” কেন?

মন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত জবাব, “বিষয়টি বিচারাধীন।” কিন্তু বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাইকোর্টে বন দফতরের এক কর্তার পদোন্নতি সংক্রান্ত একটি মামলা চললেও তার সঙ্গে হফ নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ, বন দফতরের চার প্রধান মুখ্য বনপালের মধ্যে থেকে সরকার যাঁকে ‘যোগ্যতম’ মনে করবেন, তাঁকেই ওই পদের জন্য মনোনীত করতে পারেন। তার সঙ্গে কারও পদোন্নতি কিংবা ‘সিনিয়রিটি’র প্রশ্ন তোলা অবান্তর। এখন প্রশ্ন, বন দফতরের শীর্ষ পদে কাউকে নিয়োগ করে কাজকর্মে গতি ফেরাতে এত গড়িমসি কেন?

‘অভিভাবকহীন’ দফতরে সে উত্তর দেবে কে?

head of forest state government forest department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy