জলদাপাড়ার গন্ডার শিকারের মামলায় ধৃতরা বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের হাতি মারার ঘটনায় জড়িত বলে দাবি করল পুলিশ ও বন দফতর। গত ১৩ অক্টোবর জলদাপাড়া জঙ্গল লাগোয়া শালকুমার হাট গ্রাম থেকে মণিপুরের এক বাসিন্দা সহ চারজনকে গ্রেফতার করে বনদফতর ও পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক বন্দুক ও বাজেয়াপ্ত হয়। বনকর্তারা দানি করে গত ২০১৪ এপ্রিল থেকে এবছর অগস্ট পর্যন্ত জলদাপাড়া জঙ্গলে ৭ গন্ডার শিকার করে এই চক্রটি। পাশাপাশি বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলেও হাতি মেরে দাঁত পাচারের ঘটনায় জড়িত।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে অসমের কাজিরাঙা জঙ্গল চোরাশিকারিরা ৩১টি গন্ডার মেরে তার খড়গ কেটে নেয়। তারপরেই নড়েচড়ে বসে অসম সরকার। বন্যপ্রাণ আইনে সংশোধনী এনে জঙ্গলে চোরাশিকারী দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ জারি হয়। পাশাপাশি জঙ্গল সংরক্ষণে নামানো হয় সেনাবাহিনীকেও। অসমের জঙ্গলের নিরাপত্তা বেড়ে যাওয়ায় চোরাশিকারীদের লক্ষ্য হয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের জলদাপাড়া ও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয় গন্ডার ও হাতি শিকার।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের এফ ডি উজ্জল ঘোষ বলেন, “ জলদাপাড়ায় ধৃতদের কালচিনি থানার পুলিশ বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের হাতি শিকারের ঘটনায় হেফাজতে নিয়েছে। তদন্ত চলছে।” কালচিনি থানার ওসি লাকপা লামা বলেন, “ এবছর এপ্রিল মাসে নিমতি রেন্জের জঙ্গলে হাতি শিকারের ঘটনায় ধৃতদের দশদিনের হেজতে আনা হয়েছে। আজ বুধবার ফের ধৃতদের আদালতে পেশ করা হবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন দফতরের এক আধিকারিক জানান, শালকুমার হাটের বাসিন্দা রিকোশ নার্জারি, সুরেশ কার্জি, শ্যামল সুব্বা ও মনিপুরের বাসিন্দা রেন্সন গুইতে গন্ডার শিকার ও কড়গ পাচারে জড়িত। ধৃতদের কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক বন্দুক পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে অসমের এক বাসিন্দা এই চোরাশিকারি দলের মূল পান্ডা। ধৃতরা গন্ডার ও হাতি শিকার করে মণিপুর হয়ে তা বাইরে পাচার করত। এক একটি গন্ডারের খড়গ প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকা দরে বিক্রি হত। হাতির দাঁত কেজি হিসেবে বিক্রি করত তারা। হাতির দাঁত কেজি প্রতি ১ লক্ষ ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পেত ধৃতরা।
ধৃতদের আইনজীবী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ ১৪ অক্টোবর ধৃতদের আদালতে পেশ করা হয়। সেই সময় জয়গাঁ থানা ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেয়। পরে ১৭ অক্টোবর ধৃতদের আদালত জামিন মন্জুর করে। সেই রাতে ধৃতরা আলিপুরদুয়ার সংশোধনাগারে ছিল। পরদিন হাতির মামলা দিয়ে কালচিনি থানা ১০ দিনের হেফাজতে নেয়।”