চিকিৎসা চলছে অজগরের। ডালটনগঞ্জে। ছবি: সৈকত চট্টোপাধ্যায়।
বৃষ্টির জমা জলের ‘ভয়ে’ জঙ্গলের সাপ ঢুকত উঁচু জমির লোকালয়ে। সেখানেও বিপদ! মানুষের মারধরে মরত ওই সরীসৃপরা— এমনই কাণ্ড ঘটছিল ঝাড়খণ্ডের পলামু ব্যাঘ্র প্রকল্পের আশপাশে। তা রুখতে এগোলেন বনকর্তারা। তাঁদের উদ্যোগে গত দু’দিনে প্রাণ বাঁচল দু’টি অজগর সাপের।
কী ঘটছিল পলামুর জঙ্গলে? ব্যাঘ্র প্রকল্পের ‘বাফার এরিয়া’র বনকর্তা মহালিঙ্গম জানান, প্রত্যেক বছর বর্ষাকালে মূলত এই সমস্যা হয়। অরণ্যের নিচু জায়গাগুলিতে জল জমে যাওয়ায়, সেখানকার ‘বাসিন্দা’ কেউটে, গোখরো, অজগরের মতো সাপ শুকনো জমির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। আতঙ্কে সে সব সরীসৃপের বেশিরভাগকেই পিটিয়ে মারতেন গ্রামবাসীরা।
পলামুর ‘কোর এরিয়া’র দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অনিল কুমার মিশ্র জানান, বর্ষাকালে লোকালয়ে ঢুকে যাওয়া সাপ বাঁচাতে তাঁরা সাহায্য চান হাজারিবাগের সর্প-বিশেষজ্ঞ সত্যপ্রকাশের।
তিনি পলামুর ২৫ জন বনকর্মীকে জ্যান্ত সাপ ধরার কৌশল শিখিয়ে দেন। শিখিয়ে দেন, প্রয়োজনে কী ভাবে সেগুলিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর জঙ্গলে ছাড়তে হবে— তার নিয়মও। ওই কাজে রীতিমতো দক্ষ হয়ে ওঠেন ধনঞ্জয় কুমার সিংহ, পিন্টু কুমার, অজয় কুমারের মতো বনকর্মীরা।
অনিলবাবু জানান, কয়েক মাস আগে পলামু ব্যাঘ্র প্রকল্পের আশপাশের লোকালয়গুলিতে বন দফতরের তরফে প্রচার শুরু করা হয়। তাতে বলা হয়— ‘সাপ মানুষের শত্রু নয়, বরং বন্ধু। কৃষকদের অনেক সাহায্য করে তারা। চাষের জমিতে ইঁদুর, ব্যাঙ বা ছোট ছোট পাখি খেয়ে ফসল বাঁচায়। জীবনচক্রে বাঘের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনই সাপও জরুরি। তারা না থাকলে খাদ্য-শৃঙ্খল নষ্ট হতে পারে।’
মহালিঙ্গম বলেন, ‘‘ভারতে যত রকম সাপ দেখা যায়, তার মধ্যে মাত্র ৪-৫ রকম সাপের বিষে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তা-ও সাপ কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে কারও মৃত্যু হয় না। ওঝা, গুনিনের কাছে না গিয়ে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে অনেকেরই প্রাণ বাঁচতে পারে।’’
এ সবে কাজও হয়। বনকর্তারা জানান, দু’দিন আগে চৈনপুরে জঙ্গল লাগোয়া একটি গ্রামে ৬ ফুটের একটি অজগর ঢুকে পড়েছিল। গ্রামবাসীরা সাপটিকে একটি ঘরে আটকে বনকর্মীদের খবর পাঠান। সেটিকে উদ্ধার করে গভীর অরণ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শুক্রবার চৈনপুরে ফের একই কাণ্ড ঘটে। লোকালয়ে ঢুকে যাওয়া ফুট আটেকের একটি অজগরকে পেটাচ্ছিল গ্রামের শিশু-কিশোররা। কয়েক জন বাসিন্দা তাদের বাধা দেয়। এ নিয়ে দু’পক্ষে ঝামেলা শুরু হয়, খবর পেয়ে পৌঁছন বনকর্মীরা। মাথায় আঘাত লেগেছিল সাপটির। ডালটনগঞ্জের পশু চিকিৎসালয়ে সেটিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পশু চিকিৎসক রামপ্রকাশ রাম জানিয়েছেন, ২-৩ দিন চিকিৎসার পর অজগরটি একটু সুস্থ হলেই জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।
গ্রামবাসীদের সাড়া পেয়ে উৎসাহিত বনকর্তারা। মহালিঙ্গমের কথায়, ‘‘সাপ অহেতুক কাউকে কামড়ায় না। খুব ভয় পেলে আত্মরক্ষায় আক্রমণ করে। এটা যে গ্রামবাসীরা ক্রমে বুঝতে পারছেন তাতেই আমরা খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy