ফের হাতির অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটল ডুয়ার্সে। আবারও কাঠগড়ায় খুঁটিতে তার জড়িয়ে অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ।
শুক্রবার ভোরে বৈকুণ্ঠপুর বনবিভাগের তারঘেরা রেঞ্জের গজলডোবা বিটের জঙ্গল লাগোয়া ধানখেতে হাতির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যেখানে পূর্ণবয়স্ক ওই স্ত্রী হাতির মৃতদেহটি মেলে সেই এলাকাটি ধানখেত এবং জঙ্গলের সংযোগস্থল। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই সেটির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছেন বন দফতরের কর্তারা। বন বিভাগের উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল সন্দীপ সুন্দ্রেওয়াল বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।’’
হাতি কিংবা বুনো জন্তু যাতে ধানখেত মাড়িয়ে নষ্ট করতে না পারে তার জন্যে বাঁশের খুঁটিতে লোহার তার জড়িয়ে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রাখেন ডুয়ার্সের বহু গ্রামের বাসিন্দারা। যদিও তা নিয়মবিরুদ্ধ। হাতির মৃতদেহ যে এলাকাতে মিলেছে সেখান বিদ্যুৎ সংযোগের প্রমাণও মিলেছে। শুধু গজলডোবাতে নয়, হাতি ঠেকাতে এই অবৈধ প্রথা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে ডুয়ার্স জুড়েই। বন দফতরের কর্তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া ছিল তারে। গভীর রাতে একটি বড় হাতির দল জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ধানখেতে চলে আসে। ধানখেতের একটা বড় অংশ হাতির দল ক্ষতিগ্রস্তও করে। সেই সময়েই অতর্কিতে বাঁশের খুটি সমেত লোহার তারে দেহ জড়িয়ে যায় একটি হাতির। ঘটনাস্থলেই মুখ থুবড়ে পড়ে হাতিটির মৃত্যু হয় বলেই বন দফতরের কর্তাদের অনুমান।
চলতি সেপ্টেম্বর মাস থেকে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র বৈকুণ্ঠপুর এবং জলপাইগুড়ি—এই দুই বনবিভাগের এলাকায় তড়িদাহত হয়ে তিনটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এর আগে বৈকুণ্ঠপুরের বেলাকোবা রেঞ্জের মহারাজঘাট এলাকায় এবং জলপাইগুড়ি বনবিভাগের লাটাগুড়ি রেঞ্জের বড়দিঘিবিটের এলাকার ধানখেত থেকে দুটি হাতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। গজলডোবাতে এ দিন যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে তার খুব কাছেই ২০১৩-র মার্চে একটি হস্তিশাবক তড়িদাহত হয়ে মারা যায়।
তবে এলাকায় একটির পর একটি হাতি এ ভাবে মারা গেলেও বাসিন্দারা যেমন সচেতন হননি, তেমনই বন দফতরের নজরদারির গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছেন ডুয়ার্সের পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা। এ দিন হাতির মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে আসেন ওদলাবাড়ির পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাসের কর্মকর্তারা। ন্যাসের তরফে বলবীর সিংহ এবং হায়দার আলি জানান, এলাকাবাসীর সচেতনতা না বাড়লে এ ভাবে হাতির মৃত্যু রোধ করা সম্ভব নয়। জঙ্গল লাগোয়া চাষজমিতে বিকল্পচাষ শুরু করার জন্যে ব্যাপক প্রচার চালাবার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তাঁরা। বন বিভাগের উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল সন্দীপ সুন্দ্রেওয়াল হাতির মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘ডিএফও স্তরে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছি। এলাকাতে নজরদারি বাড়াবার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।’’