Advertisement
E-Paper

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাতির পাল, বন্দি চিকিৎসক-রোগীরা

দরজা-জানলা বন্ধ করে ঠকঠক করে কাঁপছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী মুক্তি পাল। এর আগে শুনেছেন হাতির দাপটের কথা। কিন্তু চোখের সামনে এতগুলো হাতি দেখতে পাবেন তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। তাও আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে!

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:৩০
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

দরজা-জানলা বন্ধ করে ঠকঠক করে কাঁপছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী মুক্তি পাল। এর আগে শুনেছেন হাতির দাপটের কথা। কিন্তু চোখের সামনে এতগুলো হাতি দেখতে পাবেন তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। তাও আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে!

স্থানীয় জনতার তাড়া খেয়ে বৃহস্পতিবার সাতসকালে অরণ্যশহরের জঙ্গল থেকে হাতির পালটি ঢুকে পড়েছিল লালগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রাঙ্গণে। সদ্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে পাঁচিল দেওয়া শুরু হয়েছে। আর তার ফাঁক গলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পিছন দিক দিয়ে ঢুকে পড়েছিল তারা। এরপর শুরু হয় চিকিৎসক ও কর্মীদের আবাসনের চারপাশে ঘুরপাক।

আর এই দৃশ্য দেখে শুধুমাত্র মুক্তিদেবী-ই নন, ইষ্টনাম জপতে শুরু করে দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী, রোগী এমনকী চিকিৎসকরা পর্যন্তও। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক দিলীপকুমার ভক্তা, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী মুক্তি পালেরা তখন আবাসনে ছিলেন। দিলীপবাবু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাউন্ড দিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। স্বাস্থ্যকর্মী মুক্তিদেবীর কথায়, “শুনেছিলাম জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে হাতির পাল ঢোকে। কোনও দিন চোখে দেখিনি। কিন্তু লালগড় ব্লক-সদরের জনবহুল এলাকায় আমাদের আবাসনের চারপাশে বুনো হাতিদের ঘুরতে দেখে ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল।” স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার প্রশান্তকুমার সানা বলেন, “দশ বছর ধরে কর্মসূত্রে এখানে আছি। কোনও দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতর হাতি ঢোকেনি। তবে আমাদের আবাসনের আশেপাশেই হাতিগুলি ঘোরাফেরা করছিল। অন্তর্বিভাগ ভবনের দিকে যায় নি।” স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগে চিকিৎসাধীন ডাইনটিকরি গ্রামের মধুসূদন মুন্যান, আমডাঙা গ্রামের হিড়ম মাহাতো-রা বলেন, “লোকজনের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায়। জানালা দিয়ে দেখি হাতির পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ৯টি হাতির পালের তিনটি শাবকের মধ্যে দু’টি খুবই ছোট শাবক ছিল। এ দিন সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ লালগড় ব্লক-সদরে হাতি ঢুকে পড়ায় উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁরা হাতি খেদাতে শুরু করায় ব্লক-সদরের লোকালয়ে অবশ্য হাতিরা আর হামলা চালাতে পারে নি। আধঘন্টা মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রাঙ্গণ দাপিয়ে বেড়ানোর পরে হাতির পালটি বামাল-লালগড় রাস্তা পার হয়ে পূর্বদিকে চাঁদাবিলা জঙ্গলের দিকে চলে যায়। পরে দলটি ভুলাগাড়ার জঙ্গলের দিকে যায়। এ দিন ভুলাগাড়া গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলে হাতির হামলায় জখম হন বছর চল্লিশের শ্যামসুন্দর নায়েক। ভুলাগাড়ার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর শ্যামসুন্দরবাবু এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ হাতি দেখতে উৎসাহী জনতার ভিড়ে ছিলেন। আচমকা ওই পালের একটি হাতি তাঁকে শুঁড়ে জড়িয়ে ছুড়ে দেয়। শ্যামসুন্দরবাবু ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বন দফতরের বক্তব্য, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা হাতির এই ছোট পালটিই বুধবার সকালে ঝাড়গ্রাম শহরের জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিল। বুধবার ঝাড়গ্রাম শহরের শ্রীরামপুরের জঙ্গলে হাতির হামলায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। রাতে হুলাপার্টির তাড়া খেয়ে হাতিরা অরণ্যশহরের বিদ্যাসাগরপল্লি ও শ্রীরামপুর এলাকায় কয়েকটি ফলের বাগান তছনছ করে। এরপর শহর লাগোয়া শুয়াবাসা জঙ্গল হয়ে পালটি বিনপুরের দহিজুড়ি লাগোয়া শঙ্খহার জঙ্গলের দিকে চলে যায়। এরপর ঝাড়গ্রাম-বিনপুর রাজ্য সড়ক পার হয়ে হাতির পালটি বসন্তপুরের কাছে কংসাবতী নদী পেরিয়ে লালগড় এলাকায় ঢুকে পড়ে। আসার পথে লালগড়ের ধামরো ও কানাইপালের মতো একাধিক গ্রামের আলুখেতে তাণ্ডব চালায় হাতিরা। মেদিনীপুরের ডিএফও বিজয়কুমার সালিমঠ বলেন, “হাতিগুলি ঝাড়গ্রামের দিক থেকে কংসাবতী নদী পেরিয়ে লালগড়ে এসেছে। হাতির পালটিকে জঙ্গলে ফেরাতে বনকর্মী ও হুলাপার্টির লোকজন আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।”

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy