Advertisement
E-Paper

অভাবই এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগায় আজমিরাকে

দু’কামরার ইটের ঘর। মাথায় টালির ছাউনি। তার একটা অংশ ভেঙে যাওয়ায় ঢাকা রয়েছে ত্রিপল দিয়ে। বারান্দার এক কোণে রান্নাঘর। সারা ঘরময় ছড়িয়ে দারিদ্র। এ সব অবশ্য পরোয়া করেনি আজমিরা। বা বলা যায়, তুড়ি মেরে পরিবারের অভাবকে হারিয়ে দিয়েছে কবাডির প্রতিপক্ষের মতোই।

মনিরুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০০:২৩
সাইকেলে করে প্র্যাকটিসের পথে আজমিরা। — সুব্রত জানা

সাইকেলে করে প্র্যাকটিসের পথে আজমিরা। — সুব্রত জানা

দু’কামরার ইটের ঘর। মাথায় টালির ছাউনি। তার একটা অংশ ভেঙে যাওয়ায় ঢাকা রয়েছে ত্রিপল দিয়ে। বারান্দার এক কোণে রান্নাঘর। সারা ঘরময় ছড়িয়ে দারিদ্র। এ সব অবশ্য পরোয়া করেনি আজমিরা। বা বলা যায়, তুড়ি মেরে পরিবারের অভাবকে হারিয়ে দিয়েছে কবাডির প্রতিপক্ষের মতোই।

বাগনানের বছর পনেরোর আজমিরা নবম শ্রেণির ছাত্রী। ইতিমধ্যেই তার সাফল্যের মুকুটে একাধিক পালক। ২০১৫-য় অনূর্ধ্ব উনিশ সারা বাংলা স্কুল কবাডি প্রতিযোগিতায় হাওড়া জেলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিল আজমিরা। জেলার গ্রামীণ এলাকা থেকে সেই-ই ছিল একমাত্র নির্বাচিত সদস্য। এর আগে বাগনান ২ ব্লক আন্তঃ স্কুল কবাড়িতে তার স্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়। দু’টি প্রতিযোগিতাতেই নজর কেড়েছিল আজমিরার খেলা। যার ফল, মাস দুই আগে জাতীয় অ্যামেচার কবাডি প্রতিযোগিতায় জুনিয়র বাংলা দলের হয়ে আজমিরা হায়দরাবাদে খেলতে যায়। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলা। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও তার মধ্যেই প্রশংসা পেয়েছিল আজমিরার খেলা।

চার বোন, এক ভাই। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা শেখ কাশেম ভ্যানরিকশা চালান। দিনের শেষে রোজগার সামান্য। তাতেই অভাব মেটে না। তাই মা সামসুন নেহার বেগম জরির কাজ করেন। সংসার টানতে জরির কাজ করতে হয় আজমিরাকেও। জরির খাটনি সত্ত্বেও স্কুলে যাওয়াস, কবা়ডির প্র্যাকটিস কিছুই বাদ দেয়নি সে। সকালে টিউশন পড়ে যাওয়া রয়েছে। সেখান থেকে ফিরে এসে স্কুল। সপ্তাহে চারদিন বিকেলে প্র্যাকটিস। যেদিন প্র্যাকটিস থাকে স্কুল থেকেই সরাসরি ট্রেন ধরে বাগনানে চলে আসে আজমিরা। কবাডির ফিটনেসের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্যের। বলাবাহুল্য আজমিরার কপালে তা জোটে না। বাবার কথায়, ‘‘কোথা থেকে তার জোগাড় করব বলুন তো? স্কুল আর যাতায়াতের খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’

আজমিরার কথায়, ‘‘জরির কাজ আর বিভিন্ন জায়গায় খেপ খেলে যেটুকু টাকা পাই তা কবাডির বিশেষ পোশাক কিনতেই খরচ হয়ে যায়। তবে কেউ কেউ সাহায্য করেন। তবে সংসারের এই অভাবই আমার এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগায়।’’ হাওড়া জেলা অ্যামেচার কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, ‘‘মেয়েটা দারিদ্রেও হার মানেনি। ওকে আমিই প্রশিক্ষণ দিই। ওর মধ্যে সম্ভাবনা আছে।’’ স্কুলের ক্রীড়াশিক্ষিক ও কবাডির প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ডলি খাঁড়া বলেন, ‘‘ঠিকমতো প্রশিক্ষণ এবং পরিচর্যা পেলে আজমিরা অনেক দূর যাবে।’’

কত দূর যেতে চায় আজমিরা?

বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে শিক্ষিকারই প্রতিধ্বনি করে আজমিরা, ‘‘আমি জাতীয় দলে খেলতে চাই। তার জন্য যত লড়াই করতে হয় করব।’’

poor ajmeera kabaddi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy