প্রতীকী ছবি।
বছর চব্বিশের তরুণী এক বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করেন। অফিসের কাজে প্রতিদিনই তাঁকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। বেশ কিছু দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন ওই তরুণী। সঙ্গে পেটে ও পিঠে যন্ত্রণা। চিকিৎসককে দেখাতে তিনি জানালেন, মূত্রনালীতে সংক্রমণ হয়েছে ওই তরুণীর। তার জেরেই জ্বর ও যন্ত্রণা।
বছর চল্লিশের এক মহিলা দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি গ্রন্থাগারে কাজ করেন। সেখানে শৌচালয় রয়েছে। কিন্তু এতই নোংরা যে, ব্যবহারের অযোগ্য। তাই শৌচালয়ে যাওয়া এড়াতে অফিসে আসার আগে পারতপক্ষে জল খান না তিনি। অফিসেও যতটা সম্ভব কম জল খান। দীর্ঘদিন এ ভাবে কাটানোর জেরে তাঁর মূত্রঘটিত নানা সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসক জানান, দিনের পর দিন কম করে জল খাওয়ার জন্যই তৈরি হয়েছে ওই সমস্যা।
শহরের এক বেসরকারি হাসপাতাল কলকাতার মহিলাদের ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন’ (ইউটিআই) বা মূত্রনালীর সংক্রমণ নিয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্ট বলছে, শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ মহিলাই ওই সংক্রমণে ভোগেন। বছরে অন্তত তিন বার ওই সংক্রমণের জেরে অসুস্থ হচ্ছেন মহিলারা। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাস্তাঘাটে এবং কর্মক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন শৌচালয় না থাকার কারণেই সমস্যায় পড়ছেন অধিকাংশ কর্মরতা শহুরে মহিলা। ওই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, শৌচালয় নোংরা হওয়ায় ৩৯ শতাংশ মহিলাই তা ব্যবহার করতে পারেন না। ৫০.৬ শতাংশ মহিলা আবার ‘পে অ্যান্ড ইউজ’ শৌচালয় ব্যবহারে অস্বস্তি বোধ করেন। সম্ভবত সেই কারণেই মহিলাদের ৫২.৩ শতাংশ গণশৌচাগারই অধিকাংশ সময়ে খালি পড়ে থাকে। ওই রিপোর্ট আরও বলছে, ১০.৪ শতাংশ মহিলা জল খান না শৌচলয়ে যাওয়ার ভয়ে। আর ৩৫.৬ শতাংশ মহিলা দিনে ৫০০ মিলিলিটারের থেকেও কম জল খান।
আরও পড়ুন: নির্দিষ্ট বয়সের পরেও স্তন্যপান! হতে পারে ক্ষতি
পরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের অভাবই যে এ শহরে মেয়েদের মূত্রনালীতে সংক্রমণের সব চেয়ে বড় কারণ, তা মেনে নিচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। রাস্তায় একাধিক গণশৌচাগার থাকলেও অধিকাংশই ব্যবহারের অযোগ্য। অনেকগুলি আবার তালাবন্ধ হয়ে রয়েছে। এমনকী, অধিকাংশ অফিসেও পরিচ্ছন্ন শৌচালয় নেই। বাধ্য হয়ে অনেকেই শপিং মল কিংবা হোটেলের শৌচাগার খোঁজেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত মূত্রত্যাগ না করলে এবং কম জল খেলে বড় সমস্যা হতে পারে।
মহিলাদের ইউটিআই নিয়ে সচেতন করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন চিকিৎসক শতদল সাহা। তিনি জানান, মূত্রত্যাগ অনিয়মিত হলে ব্লাডারে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এমনকী, সংক্রমণ হতে পারে কিডনিতেও। আর শৌচালয়ে যাওয়া এড়াতে জল না খাওয়া আরও বড় বিপদ ডাকতে পারে। কারণ, ক্রান্তীয় আবহাওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময়ে তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রির উপরে থাকে। যে মহিলারা বাইরে যান, তাঁদের শরীরে ঘাম হয়। তার উপরে জল কম খেলে শরীরে ফ্লুইডের পরিমাণ কমে যায়। যার জেরে একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। নেফ্রোলজিস্ট সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের পাশাপাশি পর্যাপ্ত শৌচালয় না থাকায় সমস্যায় পড়ে কিশোরীরাও। তেরো-চোদ্দো বছরের স্কুলপড়ুয়ারা অনেক সময়ে বাধ্য হয়েই শৌচাগারে যায় না। যার জেরে ব্লাডারে নানা রোগ বাসা বাঁধে। অল্প বয়স থেকে সংক্রমণ দেহে বাসা বাঁধলে পরবর্তী কালে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে।’’
মূত্রনালীর সংক্রমণের পাশাপাশি অপরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের কারণে ঋতুস্রাব চলাকালীন নানা সংক্রমণে ভোগেন মহিলারা, জানাচ্ছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মঞ্জরী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বারবার ইউটিআই-এর জেরে কিডনির সমস্যা তৈরি হয়। তা ছাড়া, শৌচালয় অপরিচ্ছন্ন হলে অনেকেই দীর্ঘক্ষণ স্যানিটারি ন্যাপকিন বদল করতে পারেন না। যার জেরে নানা রকম সংক্রমণ বাসা বাঁধে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy