Advertisement
E-Paper

চিনা রেস্তোরাঁতে ফেনা ভাত: কঞ্জি

শীতের সকালে প্রাতরাশে মায়ের হাতের ফেনা ভাতের স্বর্গীয় মোলায়েম আস্বাদ আজও অমলিন। ঢিমে আঁচে গোবিন্দভোগ চাল সিদ্ধ হত একটু বেশি সময় ধরে। সঙ্গে আলু মাখা, উপরে এক দলা মাখন। পাকা লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে হালকা পেয়াঁজ ভেজে আলু ভাল করে মাখা হত।

ইরাবতী বসু

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৯

শীতের সকালে প্রাতরাশে মায়ের হাতের ফেনা ভাতের স্বর্গীয় মোলায়েম আস্বাদ আজও অমলিন। ঢিমে আঁচে গোবিন্দভোগ চাল সিদ্ধ হত একটু বেশি সময় ধরে। সঙ্গে আলু মাখা, উপরে এক দলা মাখন। পাকা লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে হালকা পেয়াঁজ ভেজে আলু ভাল করে মাখা হত। মাঝে-মধ্যে বড়িও পড়ত তাতে। মাখন কম হয়েছে বলে আর এক চামচ দেওয়ার জন্য আমি ঘ্যানঘ্যান করতাম। তবে যেদিন আধা সিদ্ধ ডিম বা ডালের ভর্তা থাকত, কোনও বায়না নেই।

পড়াশোনার ঠেলা, পরে চাকরির গুঁতোয় সকাল হারিয়েছে আগে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে শীতও যেন টের পাই না আলাদা করে। মজাটা হল গোয়া বেড়াতে গিয়ে। সকালবেলা সোনালি সৈকতে এক চোট পাক মেরে ঢুকেছিলাম সাজানো গোছানো কন্টিনেন্টাল রেস্তোরাঁয়। মিনিট পনেরো সময় ধরে তুল্যমূল্য বিচার করে অর্ডার দিলাম স্যুপ—'কঞ্জি উইথ প্রন'। মিনিট পনেরো পর ধূমায়িত চিনা বাটিতে সেই অনাস্বাদিত স্যুপ এল। এক চামচ মুখে তুলেই বুজে এল চোখ। ছোটবেলার সেই ফেনা ভাতের স্বাদ ভুলি কী করে। বিলকুল, বিলকুল। শুধু ছোট ছোট চিংড়ির বল ভাসছে মাঝে। উপরে পেঁয়াজকলি আর মরিচ। খোঁজ নিয়ে জানলাম চিন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ইত্যাদি দেশে প্রাতরাশে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার কঞ্জি—এক প্রকার 'রাইস পরিজ'।

উৎপত্তি কোথায় জানা যাচ্ছে না। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তুমুল জনপ্রিয় একটি পদ। প্রাতরাশ হিসাবে চিনে এর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। চাইনিজ কঞ্জির ক্ষেত্রে ঘনত্ব একটু পাতলা, মানে সিদ্ধ করার সময় জল বেশি দেওয়া হয়। চাল সিদ্ধও করা হয় অনেক বেশি সময় ধরে, যাতে আলাদা করে দানাগুলো ভেসে না থেকে প্রায় মিশে যায় ফ্যানে। রেসিপিটা এই রকম—বড় পাত্রে জল ফুটতে শুরু করলে তাতে গোটা মুরগি বা টার্কি বসিয়ে দেওয়া হয়। আদা, রসুন পড়ে ছেঁচে। নুন। ঘণ্টাখানেক পরে সিদ্ধ হয়ে গেলে মুরগি তুলে নিয়ে ওই স্টকেই ঢেলে দেওয়া হয় ভেজানো চাল। ঘণ্টাখানেক ঢিমে আঁচে সিদ্ধ হওয়ার পর চালের দানা ভেঙে জলের সঙ্গে মিশে গাঢ় হয়ে আসে যখন, রান্না শেষ। এবার ইচ্ছে মতো হার্ব দিয়ে সিজনিং, উপরে সিদ্ধ মুরগির টুকরো।

কোরিয়া-সহ কিছু দেশে এর নাম জুক। নানা ধরনের জুক পাওয়া যায়—জাত্জুক, জানবকজুক— প্রায় রকম চল্লিশেক হয়। ফিলিপাইনস-এ এরই এক রকমভেদ খুবই সুস্বাদু—নাম লু গাও। পর্তুগাল বা পুরনো পর্তুগিজ কলোনিতে আবার চাল আর মুরগির স্যুপ কান্জা নামে পরিচিত। চালের দানা সুসিদ্ধ হলেও আলাদা করা যায় এই স্যুপ-এ। আঁচ বন্ধ করে কাঁচা ডিমের কুসুম মেশানো হয় নিপুন দক্ষতায়।

জাপানে এর নাম ওকায়ু—একেবারে আমাদের মতো সিদ্ধ ফেনা ভাত। জল তুলনায় কম, চাল একটু গোটা গোটা। সাইড ডিশ হিসাবে থাকে সব্জি ভাজা, চিকেন ভাজা, আচার (উমবশি )। আর একটা রকম আছে—নানাকসাগায়ু। বানানো খুব সহজ। সাত রকমের শাক-সব্জি দিয়ে সেভেন হার্ব্স চালের সঙ্গে সিদ্ধ হয়।

এবার প্রতিবেশী বাংলাদেশে আসি। নানা রকমের ভর্তা দিয়ে সিদ্ধ ভাত তো খাওয়া হয়ই। খুদের ভাত নাম আর একটি লোভনীয় পদও আছে। খুদ মানে ভাঙা চাল না পেলে গোটা আতপ দিয়েও কাজ সারা যায়। ভেজানো চাল একটা পাত্রে নিয়ে রসুন, আদা, পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, সাদা তেল আর ধনেপাতা থাকলে তাই দিয়ে ভাল করে চটকে নিতে হবে। চালগুলো সেই সময় ভেঙে খুদের মতো হয়ে যাবে। এবার মাপ মতো জল দিয়ে ঢিমে আঁচে সিদ্ধ। বেশি সময় লাগবে না। শুকনো-শুকনো নামিয়ে ভর্তা দিয়ে নয়তো ডিম ভাজির সঙ্গে মেখে খেতে খুব মজা।

আমাদের দেশে দক্ষিণে কঞ্জি খাওয়ার চল আছে। নাম আলাদা। কোথাও পদ্ধতিও। তামিলনাড়ুতে চাল ভেজে গুঁড়ো করে জলে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। মূলত পথ্য হিসাবে যদিও। নাম আরিসি কাঞ্জি। রমজান মাস বা অন্য সময়েও খাওয়া হয় নম্বু কাঞ্জি। সামান্য মশলাদার। রসুন, আদা আর হলুদ জলে বাসমতি চাল সিদ্ধ করতে হবে। হয়ে এলে নারকেল আর জিরের পেস্ট মিশিয়ে আরও কিছুক্ষণ আঁচে রেখে নামিয়ে নেওয়া। শেষে একটু পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে ফোড়ন। কেরালায় খায় জিরাকা কাঞ্জি। গোয়া, অন্ধ্রে নাম গাঞ্জি। বাটার মিল্ক বা নারকেলের দুধ মেশানো হয় এতে। সঙ্গে আচার।

গোল-গোল এই দুনিয়ায় আমরা পাকেচক্রে ঘুরছি। তাই বলে ছোটবেলার ফেনা ভাত পাঁচতারা হোটেলের মেনুতে খুঁজে পাব, কোনও দিন ভাবিনি।

kanji rice food recipe
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy